strategic-investorআলমগীর হোসেন ও মোবারক হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে সোমবার। কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসাবে চীনের দুই শেয়ারবাজার শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়াম আগামি ৩ সেপ্টেম্বর ট্রেকহোল্ডারদের উদ্দেশ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) প্রায় ৯৪৫ কোটি টাকা পাঠাবে। আর পরের দিন অর্থাৎ ৪ সেপ্টেম্বর শেয়ার হস্তান্তর করা হবে। যা নিয়ে একইদিন সংবাদ সম্মেলন করবে ডিএসই কর্তৃপক্ষ।

স¤প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, আগামী ২০২০ সালের মধ্যে পুঁজিবাজারে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। আমি বিশ্বাস করি আমাদের দেশে শক্তিশালী পুঁজিবাজার সৃষ্টি হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, গত ২০ বছরে দেশে প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের নিচে হয়নি। এ রকম রেকর্ড খুব কম দেশেরই আছে। আমার বিশ্বাস, যেভাবে চলছি আরও কিছু পরিবর্তন করা গেলে চলতি দশকেই মানে ২০২০ সালের মধ্যেই আমাদের অনেক নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী কাজী হোসাইন আলী বলেন, চীনা কনসোর্টিয়াম ডিএসইতে যুক্ত হওয়া বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের প্রতি বিদেশিদের আগ্রহ বাড়বে। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে তাদের বিনিয়োগ। যা পুঁজিবাজারকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে বড় ভ‚মিকা রাখবে। চীনের টেকনোলজি যুক্ত হলে সার্ভিলন্স আরও শক্তিশালী হবে বলে মনে করেন তারা।

এ প্রসঙ্গে রশিদ ইনভেস্টমেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ রশিদ লালী বলেন, চীনা কনসোর্টিয়ামের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে পুঁজিবাজারে। তাদের টেকনোলজিতে সার্ভিলেন্স আরও শক্তিশালী হবে সার্ভিলেন্স। চীনা কনসোর্টিয়াম আসার ফলে মানেজমেন্টের পরিবর্তন আসবে। উন্নত প্রশিক্ষণের ফলে তাদের আরও পরিণত হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। চীনের পুঁজিবাজারে বড় বড় অনেক বিনিয়োগকারী রয়েছে।

ডিএসইর সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, চীনা কনসোর্টিয়াম কৌশলগত বিনিয়োগকারী হওয়ার মাধ্যমে ডিএসই আন্তর্জাতিক মানে উন্নিত হবে। একইসঙ্গে দেশের শেয়ারবাজার উপকৃত হবে। আর স্টক এক্সচেঞ্জের আয়ের নতুন নতুন রাস্তা তৈরী হবে। এছাড়া দেশে চীনের বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়বে।
ডিএসইর পরিচালক শরীফ আতাউর রহমান বলেন, চীনা কৌশলগত বিনিয়োগকারীর মাধ্যমে দেশের শেয়ারবাজারের চেহারাও পাল্টে যাবে। তাদের টাকার অভাব নাই। শুধু বিনিয়োগের জায়গায় দরকার। যাতে শেয়ারবাজারের পাশাপাশি পুরো দেশে চীনের বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়বে।

আবু সাঈদ আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজার শক্তিশালী করতে হলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাজারের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। ২০১০ সালের বাজারধসের পর এখনও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পরিপূর্ণ আস্থা ফিরে আসেনি। কথা হচ্ছে, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা কীভাবে আসবে? বিনিয়োগকারীরা যখন দেখবেন, প্রকৃতপক্ষেই নীতিনির্ধারক মহল থেকে বাজার নিয়ে চিন্তা করা হচ্ছে এবং বাজার ভালো করার জন্য তারা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন, তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বাজারের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরে আসবে।

তিনি বলেন, একটি দেশের অর্থনীতিতে আর্থিক খাতে সুশাসন থাকা খুব জরুরি। কিন্তু আমাদের দেশের আর্থিক খাতে নানা কেলেঙ্কারি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যে কারণে গত বছর ব্যাংক খাতের শেয়ারদর অধিক বাড়লেও এ বছর তার বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে।

কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসাবে চীনের দুই শেয়ারবাজার শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়াম আগামি ৩ সেপ্টেম্বর ট্রেকহোল্ডারদের উদ্দেশ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) প্রায় ৯৪৫ কোটি টাকা পাঠাবে। আর পরের দিন অর্থাৎ ৪ সেপ্টেম্বর শেয়ার হস্তান্তর করা হবে। যা নিয়ে একইদিন সংবাদ সম্মেলন করবে ডিএসই কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, চীনের কনসোর্টিয়াম ডিএসইর প্রতিটি শেয়ারের দাম দিতে চায় ২২ টাকা। তবে শর্তানুযায়ি, ডিএসইর শেয়ারহোল্ডাররা এরইমধ্যে শেয়ারপ্রতি ১ টাকা লভ্যাংশ নেওয়ায়, সমপরিমাণ দর কমে এসেছে। এক্ষেত্রে চীনা কনসোর্টিয়াম ডিএসইর ১৮০ কোটি শেয়ারের ২৫ শতাংশ বা ৪৫ কোটি শেয়ারের জন্য প্রতিটি ২১ টাকা দরে ৯৪৫ কোটি টাকা দেবে।

অন্যদিকে চীনা কনসোর্টিয়াম ডিএসইর কারিগরি ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ৩০০ কোটিরও বেশি টাকা (৩৭ মিলিয়ন ডলার) ব্যয় করবে। যাতে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হতে মোট ১ হাজার ২৪৫ কোটিরও বেশি টাকা পাবে ডিএসই।

অর্থ পরিশোধ এবং ডিএসইর শেয়ার নিতে আগামী রবিবার (২ সেপ্টেম্বর) চীনা কনসোর্টিয়ামের ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসবে। এজন্য চীনের সাংহাই ও সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জকে নিটা অ্যাকাউন্ট (বিদেশ থেকে পাঠানো অর্থ টাকায় রূপান্তরের বিশেষ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট) খোলার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে এই অ্যাকাউন্ট খুলে ডিএসইর শেয়ারের জন্য অর্থ পরিশোধ করবে চীনা কনসোর্টিয়াম।

ডিএসইর শেয়ার পেতে অর্থ পরিশোধের পর মঙ্গলবার বোর্ড সভা করবে ডিএসই। সকালে অনুষ্ঠিত ওই বোর্ড সভায় চীনা কনসোর্টিয়ামের ১জন প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন। যিনি পরবর্তীতে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হবেন। বোর্ড সভার মাধ্যমেই শেয়ার হস্তান্তরের সার্বিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। এরপর দুপুরে হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শেয়ার হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হবে।

জানা গেছে, গত ২৬ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক চীনের সাংহাই ও সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ কনসোর্টিয়ামকে নিটা অ্যাকাউন্ট খোলার অনুমতি দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ অনুমতির বিষয়টি পরের দিন ২৭ আগস্ট ডিএসই থেকে জোটটিকে জানানো হয়। এর আগে গত ১৪ মে রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসাবে চীনের দুই শেয়ারবাজার শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে ডিএসইর চুক্তি সম্পন্ন হয়।

এর আগে ৩ মে চীনা কনসোর্টিয়ামকে চ‚ড়ান্ত অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আর এই অনুমোদনের জন্য ৩০ এপ্রিল অনুমোদন দেয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) শেয়ারহোল্ডাররা। একইদিন বিকালে অনুমোদনের জন্য বিএসইসিতে প্রস্তাব জমা দেয় ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ।