DSEসাজিদ খান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে নতুন বিনিয়োগকারী দিন দিন বাড়ছে। বাজার বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে অনেক কোম্পানির শেয়ারের মূল্য আকর্ষণীয় পর্যায়ে এসেছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের নজর পড়তে শুরু করেছে। এ ছাড়া স¤প্রতি বেশ কয়েকটি কোম্পানির আইপিও বাজারে এসেছে। আরও আসার অপেক্ষায় রয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা বাজারে আসতে শুরু করেছে। এতে বিও হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই ও আগস্ট) প্রায় ২ লাখ বিনিয়োগকারী বাজারে এসেছেন। যার বেশিরভাগই প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) জন্য বিও (বেনিফিশারি ওনার্স) অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে এই সময়ে বাজার মন্দায় বিও অ্যাকাউন্টের খরচ মেটাতে না পারায় এক লাখেরও বেশি বিনিয়োগকারীর অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়েছে বলে জানা গেছে।

শেয়ার সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশের (সিডিবিএল) তথ্য মতে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের শেষ কার্যদিবস ৩০ জুন (শনিবার) ডিএসই ও সিএসই’র মোট বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ছিলো ২৫ লাখ ৮৮ হাজার ২৯৪টি। সেখান থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ লাখ ৭১ হাজার ১০৫টি বিও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ৫৯ হাজার ৩০৩টিতে। এর মধ্যে আগস্ট মাসে বিও বেড়েছে ৪৬ হাজার ১৬৯টি, বাকিগুলো জুলাই মাসে।

ডিএসই সূত্র জানিয়েছে, দেশি বিনিয়োগকারীর পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারী বাংলাদেশের বিনিয়োগের জন্য পর্যবেক্ষণ করছেন। কারণ বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে শেয়ারমূল্য অনেক নিচে নেমেছে। ফলে তারা বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানা গেছে। বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, স¤প্রতি নতুন বেশ কয়েক নতুন কোম্পানি পুঁজিবাজারে এসেছে। এসব কোম্পানির আইপিও থেকে ভালো মুনাফা পেয়েছে বিনিয়োগকারীরা। ফলে তারা সেকেন্ডারি মার্কেটের পরিবর্তে প্রাইমারি বাজারের প্রতি ঝুঁকেছেন।

২০১০ সালের পর থেকে মূলত বিনিয়োগকারী এবং সাধারণ জনগণের পুঁজিবাজারের প্রতি অনাগ্রহ তৈরি হয়। ফলে বাজার ছাড়তে শুরু করেন বিনিয়োগকারীরা। অন্যদিকে সাধারণ জনগণও পুঁজিবাজারমুখী হননি। যে কারণে একেবারে থমকে যায় বিও খোলা। কোনো কোনো হাউসে দিনে একটি বিও ওপেন হয়নি এমন নজিরও রয়েছে। এর পর ২০১২ সাল থেকে ধীরে ধীরে বিও বাড়তে থাকে। পরে আবার বিও খোলার প্রবণতা থমকে যায়। এর আগে সময়মতো বিও ফি না দেওয়ায় গত বছর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৩ লাখের বেশি বিও।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেকেন্ডারি বাজার ভালো না থাকলেও আইপিওর বাজার ভালো থাকায় বিনিয়োগ করলেই দ্বিগুণ লাভ। দ্বিতীয়ত নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বাজার ভালো থাকবে এমন প্রত্যাশার পাশাপাশি ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশসহ (আইসিবি) বেশ কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানের মার্কেট সাপোর্টের কারণে কোরবানির ঈদের সময় থেকে ইতিবাচক ধারায় চলছে পুঁজিবাজার। ফলে নতুন করে দেশে ও বিদেশিরা বাজার আসছেন। নতুন বিনিয়োগকারীযোগের ফলে বাজারে লেনদেন, সুচক ও বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ছে। তাতে বিনিয়োগকারীদের পুঁজিও বেড়েছে হাজার কোটি টাকার বেশি।

প্রাইম সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের ২৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাজার ভালো রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করছি একাদশ জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এতে নতুন করে বিনিয়োগকারীরা বাজারে আসছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, নতুন করে যারা বিও করেছেন তাদের বেশিরভাগই আইপিও মার্কেটের বিনিয়োগকারী। সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগকারী বেড়েছে হাতে গোনা কয়েকজন। তিনি বলেন, নতুন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে প্রবাসী ও নারী বিনিয়োগকারী বেশি। কারণ বর্তমানে দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের চেয়ে ভালো কোম্পানির শেয়ারের দাম। পাশাপাশি চীনা পুঁজিবাজার বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে অংশীদার হয়েছে।

এতে বাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়বে। তাতে বিদেশি কোম্পানিগুলো বাজারে বিনিয়োগ করতে আকৃষ্ট হবে বলে জানান তিনি। এদিকে কারসাজিরোধে ডিএসই দুর্বল ও মৌলভিত্তিহীন ২টি কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করেছে। আরো ১৫টি কোম্পানিকে তালিকাচ্যুতির পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটু আস্থা বেড়েছে।