icb-20180405233751আলমগীর হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের কোম্পানি আইসিবি ব্যাংকের বিনিয়োগকারীরা পুঁজি নিয়ে দু:চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। দিন যতই যাচ্ছে ব্যাংকটির অবস্থা ততই শোচনীয় অবস্থায় যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রান চায় শেয়ারহোল্ডারা। বারবার নাম ও মালিকানা বদল করেও দাঁড়াতে পারছে না আইসিবি ইসলামী ব্যাংক। খেলাপি ঋণের পরিমাণ এত বেশি হয়েছে, ব্যাংকটির এখন মরণদশা লেগেছে।

তাছাড়া ভয়াবহ দুরাবস্থায় পড়েছে ব্যাংকটি। তবে নতুন থেকে পুরনো- সবগুলো ব্যাংকের অবস্থা শোচনীয়। এ থেকে বাইরে নেই আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকও। ‘নৈতিক দুর্বলতার’ কারণে প্রভাবশালী ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভয় পাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, এমন দাবি করেছেন বিশ্লেষকরা।
এদিকে ব্যাংকটির বিতরণ করা মোট ৮৭৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ঋণের মধ্যে ৭০২ কোটি ২৭ লাখ টাকাই খেলাপি হয়ে আছে। যা ব্যাংকটির মোট বিতরণ করা ঋণের ৮০ দশমিক ১৭ শতাংশ। এ খেলাপির হার দিন দিন বেড়েই চলেছে।

এক বছর ৩ মাস আগেও ব্যাংকটির মোট ঋণের হার ছিল ৭২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকটির মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৩২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। আর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৬৭২ কোটি ৩৫ টাকা। এক বছর তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা। অন্যদিকে গ্রাহকের কাছে থাকা মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ কমেছে ৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।

অর্থাৎ ব্যাংকটি এ সময়ে ঋণ বিতরণ কমিয়েছে এবং আদায়যোগ্য ঋণ তুলে নিয়েছে। এ সময়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বেড়ে গেছে। এর ফলে প্রশ্ন উঠেছে ব্যাংকটি তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে আনছে কি না? এ ব্যাপারে ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে চাননি।  সারা দেশে ব্যাংকটির ২৩টি শাখা এখনো কাজ করছে। এর মধ্যে ঢাকাতে ১৬টি, বন্দর নগরী চট্টগ্রামে ৫, সিলেট বিভাগে ৫, রাজশাহী বিভাগে ২, খুলনা বিভাগে ৪ এবং বরিশাল বিভাগে একটি শাখা রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে অবশ্য দেখা মিলেছে প্রভিশনের। ব্যাংকটির মোট ৭০২ কোটি ২৭ লাখ টাকা খেলাপি ঋণের মধ্যে ৭৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ‘ব্যাড অ্যান্ড লস’ বা মন্দ মানের ঋণ। ডাউটফুল বা মধ্য মানের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা এবং ৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা সাব স্ট্যান্ডার্ড বা সবেমাত্র খারাপের পর্যায়ে পড়েছে এমন মানের ঋণ। এসব ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখার কথা ৩৭৭ কোটি ১০ লাখ টাকা। যা সাধারণত আমানতকারীর আমানতের রক্ষা কবজ হিসেবে রাখা হয়। যাতে গ্রাহক চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পেয়ে যায়। ব্যাংকটি এ প্রভিশন রেখেছে ৩৭৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। যা প্রয়োজনের তুলনায় ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বেশি।

উল্লেখ্য, গ্রাহকের টাকা তসরুপের অভিযোগে ২০০৬ সালের ১৯ জুন ব্যাংকটিতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রশাসক নিয়োগ দেয়। জানা গেছে, ওরিয়ন গ্রæপের ওবায়দুল করিমসহ কয়েকজন শেয়ারহোল্ডার বিধি লঙ্ঘন করে বেনামে ১০ শতাংশের বেশি ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের শেয়ার ধারণ করছিলেন। সে সময় ৭০০ কোটি টাকা তসরুপেরও অভিযোগ ওঠে ওই শিল্প গ্রæপটির বিরুদ্ধে। নানা অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায় এবং ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১৪ (ক) ধারা লঙ্ঘন করায় শেয়ারধারীদের ৮৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ শেয়ার বাংলাদেশ ব্যাংক নিজের অনুক‚লে বাজেয়াপ্ত করে নেয়।

২০০৭ সালের ২৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক ওরিয়ন ব্যাংকের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সরকার বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থগিত করে এবং পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয় স্কিম তৈরি করে। তখন আইসিবি ফিন্যান্সিয়াল গ্রæপ ব্যাংকটির প্রায় ৫১ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয় ৩৫১ কোটি টাকায়। আইসিবি গ্রæপ ব্যাংকটির নাম পরিবর্তন করে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক নামকরণ করে।

ব্যাংকের স্কিম অনুযায়ী, গত ৪ মে আমানতকারীদের ৭০০ কোটি টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও তা দিতে ব্যর্থ হয় ব্যাংকটি। সেই থেকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে ব্যাংকটি। এর আগে ব্যাংকটির নাম ছিল আল-বারাকা ব্যাংক। জেদ্দাভিত্তিক শিল্পপতি আমানুল্লাহ মিয়া ও বাংলাদেশের শিল্পপতি আবুল খায়ের লিটুর মালিকানায় ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশে আল-বারাকা ব্যাংক কার্যক্রম শুরু করে।

আমানুল্লাহ মিয়ার মৃত্যুর পর তার ছেলে তাদের শেয়ার বিক্রি করে দেয় হংকংভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে। ২০০২ সালে তাদের পরামর্শে এর নামকরণ হয় ওরিয়েন্টাল ব্যাংক। ২০০৪ সালে আবারও মালিকানা পরিবর্তিত হয়। সে বছরের নভেম্বরে ব্যাংকটির সিংহভাগ শেয়ার কিনে নেয় ওরিয়ন গ্রæপ।