DSEসাজিদ খান ও ফাতিমা জাহান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে এখনই বিনিয়োগের সঠিক সময়। কারণ পুঁজিবাজারে এখনও অনেক কোম্পানির শেয়ারের দাম অনেক কম রয়েছে। যেখানে বিনিয়োগ করলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা প্রফিট করতে পারবে। তেমনি পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতার আভাস মিলছে।চীনা বিনিয়োগ সমন্বয় জটিলতা কেটে যাওয়ার পাশাপাশি সরকারসহ সংশ্লিষ্ট মহলের নানামুখী ইতিবাচক পদক্ষেপের কারণে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। ফলে তারা শেয়ার বিক্রির চেয়ে কেনায় মনোযোগ দিয়েছেন। ফলে পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদে লেনদেন বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে দীর্ঘ দিনের মন্দার পর বেশ কিছু দিন মৌলভিত্তিহীন শেয়ারের অস্থিরতা কাটিয়ে স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে। বর্তমান বাজার পরিস্থিতি নিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিমত, গত কয়েক দিনের বাজার আচরণ বিনিয়োগকারীদের জন্য নিঃসন্দেহে ইতিবাচক বার্তা বহন করে। এ সময় বাজারগুলো লেনদেনে যেমন একটি অবস্থান ধরে রাখে তেমনি সূচকও লেনদেন ছিল ইতিবাচক।

এছাড়া দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে তৎপরতা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিদেশি বিভিন্ন সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজারের প্রতি নজর ছিল। তারা বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের চিন্তাভাবনা করছেন।

এছাড়া পুঁজিবাজারে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে চীন অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এতে দেশের স্টক এক্সচেঞ্জ একটি নতুন পর্যায় উন্নীত হতে যাচ্ছে। তাদের উন্নত প্রযুক্তিগত সুযোগ-সুবিধাগুলো ব্যবহার করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। যেহেতু তারা বিনিয়োগ করেছে এবং কৌশলগত অংশীদার হিসেবে এসেছে, তাই তারা নিজেদের স্বার্থেই আমাদের পুঁজিবাজারকে একটি উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে।

তবে তাদের মাধ্যমে যে ফান্ডটি বাজারে এসেছে সেটি যদি করমুক্ত করা হয় তাহলে শর্ত দিতে হবে এই অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার। তা না হলে কেউই এই ফান্ডটি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবে না। দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণের সাথে আলাপকালে বাজার বিশ্লেষকরা এমন টা মন্তব্য করেন।

অর্থনীতিবিদ আহমদ আল কবীর বলেন, কৌশলগত অংশীদার হিসেবে চীনের সঙ্গে চুক্তির অর্থ ইতোমধ্যে ডিএসইর অ্যাকাউন্টে হস্তান্তর করা হয়েছে। মঙ্গলবার সোনারগাঁও হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আর এটি দেশের পুঁজিবাজারের জন্য অবশ্যই একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা, যার মাধ্যমে দেশের স্টক এক্সচেঞ্জ একটি নতুন পর্যায়ে উন্নীত হতে যাচ্ছে। আর এর মাধ্যমে তাদের উন্নত প্রযুক্তিগত সুযোগ-সুবিধাগুলো ব্যবহার করার একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে আমাদের।

যেহেতু তারা বিনিয়োগ করেছে এবং কৌশলগত অংশীদার হিসেবে এসেছে, তাই তারা নিজেদের স্বার্থেই আমাদের পুঁজিবাজারকে একটি উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যা করার তা করবে। এতে দেশের পুঁজিবাজারের স্বচ্ছতা একটু বাড়বে বলেই মনে করি। তাছাড়া আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের পুঁজিবাজারের অবস্থান আরেকটু উন্নত হলো। তবে তাদের মাধ্যমে যে ফান্ডটি বাজারে এসেছে সেটি যদি করমুক্ত করা হয় তাহলে শর্ত দিতে হবে যাতে এই অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হয়। তা না হলে কেউই এই ফান্ডটি বাজারে বিনিয়োগ করবে না।

মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ এ হাফিজ বলেন, পুঁজিবাজারের জন্য গতকাল একটি ঐতিহাসিক দিন ছিল। কারণ মঙ্গলবার ডিএসইর অ্যাকাউন্টে প্রায় সাড়ে ৯০০ কোটি টাকার মতো হস্তান্তর করা হয়েছে, বিগত ৫০ বছরে যা হয়নি। এতে ডিমিউচুয়ালাইজেশন করার জন্য শেষ দুটি ধাপের একটি সম্পন্ন হয়েছে। বাকি আর একটি ধাপ রয়েছে। আর সেটি হচ্ছে, বাকি ৩৫ শতাংশ শেয়ার আইপিওর মাধ্যমে বাজারে ছাড়া।

যদিও পুঁজিবাজারের এমন সম্ভবনাময় সংবাদ থাকা সত্ত্বেও বাজারের সেরকম কোনো গতিবিধি দেখতে পাচ্ছি না। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হয়তো বাজারের এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কারণ প্রতিষ্ঠানিক বা ব্যক্তিবিনিয়োগকারী যে কেউই চায় নিরাপদ বিনিয়োগ করতে। সামনে জাতীয় নির্বাচনে দেশের কী অবস্থা হয়, সেই চিন্তায় সবাই ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ পদ্ধতি অনুসরণ করছে হয়তো।

তাছাড়া চীনের এই ৯৪৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ ছাড়াও তারা কারিগরি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও বিনিয়োগ করবে। এ কারণে বাজারের গভীরতা অনেক বাড়বে বলেই মনে করি। পাশাপাশি দেশের পুঁজিবাজারের প্রতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও বাড়বে এবং তারা বিনিয়োগে উৎসাহী হবে। ফলে বাজারের গভীরতা আরও বাড়বে।

এম সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী নুরুল আজম বলেছেন, বর্তমান পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে। বাজার তার আপন গতিতে চলছে। তেমনি বিনিয়োগ বাড়ছে। বাজারের এ ধারা অব্যাহত থাকলে সামনে লেনদেন আরো বাড়বে। এজন্য বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করলে ব্যাংকের চেয়ে বেশি মুনাফা করা সম্ভব।

এমেস সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারে বর্তমানে বিনিয়োগের উত্তম সময়। বিনিয়োগকারীরা বুঝে শুনে বিনিয়োগ করলে লোকসানের সম্ভাবনা নেই। এক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের কোম্পানি সর্ম্পকে জেনে শুনে বিনিয়োগ করা উত্তম। বাজারে এখনো অনেক রুগ্ন কোম্পানি আছে যাদের ভবিষ্যত সম্ভাবনা খুবই ভাল। ঐ সব কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের খুঁজে বের করতে হবে। তাহলে ভাল মুনাফা করা সম্ভব।