FORGAIN INVESTদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে বিদেশিদের কেনাবেচায় বড় পতন হয়েছে। গত জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে লেনদেনের পরিমাণ অর্ধেকেরও নিচে নেমেছে। আর জুনের তুলনায় কমেছে এক-তৃতীয়াংশ। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ব্যাংক ও বন্ডের সুদহার বৃদ্ধিকে বিদেশিদের শেয়ার কেনাবেচা কমার কারণ বলে মনে করছেন শেয়ারবাজার সংশ্নিষ্টরা।

একই সঙ্গে সা¤প্রতিক সময়ে ডলারের বিপরীতে টাকার মানের অবমূল্যায়ন এবং নির্বাচনী বছরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কা থেকেও বিদেশিদের অনেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করছেন বলে মনে করছেন শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা। তারা জানান, শুধু বাংলাদেশেই হচ্ছে তা নয়, প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তানসহ এ অঞ্চলের প্রায় সব দেশেই এ অবস্থা।

গত এপ্রিল থেকে টানা পাঁচ মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যত টাকার শেয়ার কিনেছেন, এর তুলনায় বিক্রি করেছেন বেশি। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ডিএসইর মাধ্যমে সর্বশেষ পাঁচ মাসে এক হাজার ৮৭৯ কোটি টাকার কেনার বিপরীতে দুই হাজার ৪৩১ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেন বিদেশিরা। চলতি বছরের প্রথম আট মাসের মধ্যে গত জানুয়ারি ও মার্চ ছাড়া বাকি ছয় মাসে কেনার তুলনায় বিদেশিরা শেয়ার বিক্রি করেছেন বেশি।

প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আগস্টে দুই শেয়ারবাজারের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ৪৩৭ কোটি টাকা মূল্যের শেয়ার কেনাবেচা করেন। কেনা ও বেচা উভয় দিক বিবেচনায় যা মোট লেনদেনের মাত্র ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ। গত জুলাই মাসে প্রায় এক হাজার ৪০৬ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা করেছিলেন তারা, যা ওই মাসের মোট লেনদেনের ২ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, আগস্টে ডিএসইর মাধ্যমে ৩৫৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা মূল্যের শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। বিদেশিরা এর মধ্যে কিনেছেন ১৭৬ কোটি দুই লাখ টাকা মূল্যের শেয়ার। বিপরীতে বিক্রি করেছেন ১৮১ কোটি ৭৭ লাখ টাকার। অর্থাৎ কেনার তুলনায় পৌনে ছয় কোটি টাকার শেয়ার বেশি বিক্রি করেছেন তারা। আগস্টে এ বাজারে মোট ১১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা মূল্যের শেয়ার কেনাবেচা হয়েছিল।

কেনা ও বেচা উভয় দিক বিবেচনায় নিলে মোট লেনদেনে তাদের অংশ ছিল ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এ ছাড়া জুলাই মাসে ডিএসইর মাধ্যমে বিদেশিরা ৮৫৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা করেন। এর মধ্যে ৪১২ কোটি চার লাখ টাকার কেনার বিপরীতে বিক্রি করেন ৪৪৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকার। কেনার তুলনায় তারা বেশি বিক্রি করেন পৌনে ৩৩ কোটি টাকার শেয়ার।

প্রায় একই রকম চিত্র ছিল চটগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ক্ষেত্রেও। আগস্টে এ বাজারের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর ৩৯ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেন। একই শেয়ার অন্য বিদেশি বিনিয়োগকারী কিনেছেন। অর্থাৎ ওই মাসে সিএসইর মাধ্যমে ৭৯ কোটি ৬০ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।

গত জুলাই মাসে যা ছিল ৫৫০ কোটি টাকা। ওই মাসে বিদেশিরা এ বাজারের মাধ্যমে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, সামিট পাওয়ার, বিএটিবিসি, স্কয়ার ফার্মা ও গ্রামীণফোনের ২৭৫ কোটি টাকার শেয়ার কিনেছিলেন। বিপরীতে এসব কোম্পানির একই পরিমাণ শেয়ার বিক্রি করেন তারা। এর আগে গত জুনে স্কয়ার ফার্মার মাত্র দুই কোটি ৮৩ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা করেছিলেন তারা।

সিএসইতে গত মাসে বিদেশিরা যেসব শেয়ার কেনাবেচা করেছেন, তা জানা গেলেও ডিএসইর ক্ষেত্রে এ তথ্য পুরোপুরি মেলেনি। জুলাইয়ের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ওই মাসে ডিএসইতে ব্র্যাক ব্যাংক, ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, এইচআর টেক্সটাইল, এপেক্স স্পিনিং, রেনেটা ও রেকিট বেনকিজারে বিদেশিদের বিনিয়োগ বেড়েছিল। বিপরীতে সিঙ্গার বাংলাদেশ, একমি ল্যাবরেটরিজ, বেক্সিমকো ফার্মা, ম্যাকসন্স স্পিনিং, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, সিটি ব্যাংক, বিএসআরএম লিমিটেড, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল, এবি ব্যাংক, বাটা সু ও সাউথইস্ট ব্যাংক থেকে তাদের বিনিয়োগ কমেছিল সবচেয়ে বেশি।