pm-hasinaদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে ১৫ দাবি জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী জাতীয় ঐক্য ফাউন্ডেশনের সভাপতি মো. রুহুল আমিন আকন্দ এবং সাধারণ সম্পাদক মো সাইদ হোসেন খন্দকার সাক্ষরিত বিনিয়োগকারীদের পক্ষে এ আবেদন জমা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সে আবেদনটি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নিকট যে আবেদন করা হয়েছে তা নিচে তুলে ধরা হলো:

০১। পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতন চলছে। গত ২ মাস যাবৎ সূচক নিম্নমুখী অবস্থায় রয়েছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা মোটেই ভাল নেই। খুবই করুণভাবে জীবন-যাপন করছেন। পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণে ও স্থায়ী স্থিতিশীলতায় বিএসইসিকে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন না করে সত্যিকারের কার্যকর ও দৃশ্যমান ভূমিকায় থাকতে হবে।

শেয়ারবাজারে অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে পুঁজির সংকট। এটা যেমন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রযোজ্য, তেমনি তা বড় বড় বিনিয়োগকারী এমনকি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিযোগকারীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) তার জন্মলগ্ন থেকেই পুঁজিবাজারকে স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে সাপোর্ট অব্যাহত রেখেছে। এজন্য পুঁজিবাজারের ক্রান্তিকালে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য আইসিবিকে সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিটেড এর আওতা থেকে মুক্ত (ফ্রি) করে দিতে হবে (এ বিষয়ে মাননীয় অর্থমন্ত্রী গভর্নরের নিকট দু’টি পত্র প্রেরণ করেছেন-কিন্তু তা এখনও বিবেচনাধীন রয়েছে) এবং এই পুঁজির সংকট দূর করতে অবিলম্বে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী-বিশেষকরে আইসিবিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ২০,০০০/= (বিশ হাজার) কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দের ব্যবস্থা করতে হবে।

এছাড়াও সম্প্রতি আইসিবি কর্তৃক ২০০০/- কোটি টাকার বন্ড ছাড়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ বিষয়টি এক্সপোজার লিঃ এর বাহিরে রেখে শিথিল করার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি এবং পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের পুঁজিবাজার এক্সপোজার লিমিট গণনা করার ক্ষেত্রে বাজারমূল্য (মার্ক টু মার্কেট) অনুযায়ী না ধরে ক্রয় মূল্যের ভিত্তিতে গণনা করতে হবে।

০২। মিউচ্যুয়াল ফান্ড হলো পুঁজিবাজারের প্রাণ। বাজারের ক্রান্তিকালে মিউচ্যুয়াল ফান্ড অব্যাহত ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে আসছে।আমাদের যুক্তিসঙ্গত প্রতিবাদ সত্ত্বেও পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কয়েকটি মিউচ্যুয়াল ফান্ড যেমন আইসিবির ওয়ান টু এইট (আটটি) মিউচ্যুয়াল ফান্ড (সংকুচিত), এইমস ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও গ্রামীণ মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ান গুলোকে ষড়যন্ত্রমূলক ও ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষ্যে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারে অবসায়ন করে দেয়। এর ফলে বড় বড় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা লাভবান হয়।

বাজারে মন্দা পরিস্থিতিতেও কৃত্রিম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভালো মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোকেও অবসায়ন বা সংকোচন করা হয়। কারণ হিসেবে দেখানো হয় যে, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীগণ লাভবান হবে এই আশায়। কিন্তু এই অবসায়নের ফলে কতিপয় বড় বড় প্রতিষ্ঠান লাভবান হয় যেমন IDLC, BRAC EPL ও কতিপয় বৈদেশিক বিনিয়োগকারীগণ।

সুতরাং যেসব ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীগণ বিগত এক দশকের ওপর পুঁজিবাজারকে নিয়মিত সাপোর্ট দিয়ে আসছে, প্রকৃতপক্ষে তারাই সবচেয়ে বেশী বঞ্চিত হলো। আর যে সব শকুন মূলক প্রতিষ্ঠান এই ফান্ডগুলি অবসায়নের কৃত্রিম প্রক্রিয়ার সুযোগ নিয়েছে- তারা স্বল্প সময়ে বিশালভাবে লাভবান হলো। কাজেই বর্তমানে তারল্য সংকটের বাজারে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ও টাকা পাচারের উদ্দেশ্যে ফান্ডগুলোকে অবসায়ন না করে এর মেয়াদ বৃদ্ধি করার জন্য আপনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

০৩। অতিরিক্ত প্রিমিয়ামসহ বুক বিল্ডিং পদ্ধতির আইপিও অনুমোদনের সাজানো ব্যবসা বন্ধ করতে হবে এবং বাই-ব্যাক আইন দ্রুত কার্যকর করতে হবে।

০৪। শেয়ারবাজারে এই মুহুর্তে ম্যানিপুলেশনের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো আন-অডিটেড অর্ধবার্ষিক আর ত্রৈমাসিক আর্থিক প্রতিবেদন। আন-অডিটেড হওয়ার কারণে মনগড়া রিপোর্ট প্রকাশ করে শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারীদেরকে প্রতারিত করা হচ্ছে। যদি কোম্পানীগুলো শেয়ারের দাম বাড়ানোর দরকার মনে করে, তবে রিপোর্টে বা আর্থিক প্রতিবেদনে অনেক লাভ দেখায়, আর দাম ফেলতে চাইলে রিপোর্টে বা আর্থিক প্রতিবেদনে লাভ অনেক কম দেখায়। ফাইনাল অর্থাৎ বার্ষিক অডিটেড আর্থিক প্রতিবেদনে বা রিপোর্টে তার ধারাবাহিকতা পাওয়া যায় না। বড়ই দূখের

বিষয় যে, একটি শক্তিশালী চক্র এর সাথে জড়িত থাকে, যার মধ্যে রয়েছে কোম্পানীর মালিকপক্ষ আর ম্যানুপুলেশনকারী। বছরব্যাপী এই আর্থিক প্রতিবেদন/রিপোর্ট প্রকাশের কালে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত ও তটস্থ থাকে। অবিলম্বে এই অবস্থার অবসান হওয়া বিশেষ প্রয়োজন। তাই ত্রৈমাসিক রিপোর্ট, অর্ধবার্ষিক রিপোর্ট বা আর্থিক প্রতিবেদন যাতে বার্ষিক রিপোর্টের সাথে সংগতিপূর্ণ হয়, সে বিষয়ে তীব্র ও দ্রুত কার্যকর নজরদারী করতে হবে।

০৫। আর্থিক সক্ষমতা থাকা সত্বেও নো-ডিভিডেন্ড দেয়া কো¤পানীগুলোর বিরুদ্ধে মনিটরিংসহ দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

০৬। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা বছরে ০১টি মাত্র দিনে ১ ঘন্টা কথা বলার সুযোগ পায়। সেখানে প্রতিদিনে ১৭/১৮টি কোম্পানির এজিএম’র অনুমোদন না দিয়ে প্রতিদিন সকাল-বিকাল ২টি করে কোম্পানির এজিএম এর অনুমোদনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং সেটা ঢাকাস্থ সিটির মধ্যেই অনুষ্ঠিত হতে হবে। এজিএমএ শেয়ারহোল্ডারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ ও বাড়ানোর জন্য অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে আপ্যায়নের সু-ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং ANNUAL REPORT এজিএম এর কমপক্ষে ০২ সপ্তাহের পূর্বে পৌঁছাতে হবে।

০৭। বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। সম্প্রতি কতিপয় ব্যাংকগুলোর মালিকানা পরিবর্তনে পুঁজিবাজারের শেয়ারহোল্ডারগণ খুবই উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত। এহেন পরিস্থিতিতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক পুঁজিবাজারের প্রতি একচোখা নীতি গ্রহণ করছে।

অথচ ক্যাপিটাল মার্কেট ও মানি মার্কেট অর্থনীতির একটি গুরুপূর্ণ অংশ। কাজেই পুঁজিবাজারের ব্যাংক ও ফিন্যান্স সেক্টরের বিরুদ্ধে ডাক-ঢোল পিটিয়ে SENSITIVE কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে বিএসইসির সাথে অবশ্যই জরুরীভাবে সমন্বয় মিটিং করতে হবে। নইলে পুঁজিবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর দায় সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশ ব্যাংককেই নিতে হবে।

০৮। ওটিসি মার্কেটের কোম্পানিগুলোকে দ্রুত মূল মার্কেট পুঁজিবাজারে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এখানে বিনিয়োগকারীদের বিশাল অংকের টাকা আটকে আছে। ফলে বিনিয়োগকারীগণ দারুনভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

০৯। বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষ্যে নূতন একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে ওপেনিং চার্জ কমাতে হবে এবং ভারতের মত আমাদের দেশেও পুঁজিবাজার উন্নয়নে আরও ৫(পাঁচ)টি বিনিয়োগ ব্যাংক স্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে।

১০। আইপিও আবেদনকারীদের যোগ্যতাস্বরূপ পুঁজিবাজারে কমপক্ষে ২৫ হাজার টাকার বিনিয়োগের বিধান রাখতে হবে এবং আইপিও লটারীতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। আইপিও আবেদন কোটায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৬০%, এনআরবি ইনভেস্টরদের ১০% ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ৩০% কোটার সু ব্যবস্থা করতে হবে।

আইপিওর মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থ কোম্পানীগুলো কি কাজে ব্যবহার করছে- সে বিষয়ে মনিটরিং করার জন্য বিএসইসিকে বিশেষ মনিটরিং টিম গঠন করতে হবে। এর ফলে বিনিয়োগকারীরা বিশাল ক্ষতি থেকে উত্তরন পাবেন।

১১। রাইট শেয়ার ইস্যু করার ক্ষেত্রে কোন রকম নিয়মনীতি মেনে চলা হয় না। ফলে রাইট শেয়ার ইস্যুর পর নির্ধারিত অংকের চেয়েও শেয়ারমূল্য অনেক পড়ে যায়। এর ফলে বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারায় ও নিঃস্ব হয়। কাজেই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে যথাযথ নিয়মনীতি মেনে চলেই অনুমোদন দিতে হবে।

১২। পুঁজিবাজার উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতায় বিএবি ফান্ড, মিউচ্যুয়াল ফান্ড, বাংলাদেশ ফান্ড, ইউনিট ফান্ড, পেনশন ফান্ড গুলোকে দৃশ্যতঃ কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে হবে।

১৩। পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারীদের পুঁজির নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য প্রশিক্ষণ কর্মশালা, গবেষণা সেল ও পরামর্শ কেন্দ্র স্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে।

১৪। ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জানুয়ারি, ২০১১ সাল থেকে হালনাগাদ পর্যন্ত মার্জিন ঋণের বিপরীতে আরোপিত ১০০% সুদ সম্পূর্ণ নিঃশর্তভাবে মওকুফের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং নিয়মিতভাবে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদেরকে লেনদেনের উপর কমিশন কমাতে হবে, স্বল্প সুদে বা ব্যাংক রেটে ঋণ সুবিধা প্রদানের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে।

১৫। পুঁজিবাজার উন্নয়ন ও স্থায়ী স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, বিএসইসি, ডিএসই, সিএসই, সিডিবিএল, আইসিবি, এবিবি, বিএবি, ডিবিএ, বিএমবিএ, বিনিয়োগকারী সংগঠনের প্রতিনিধি ও সাংবাদিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে মাসিক অন্ততঃ ১টি সমন্বয় মিটিং এর ব্যবস্থা করতে হবে।