alig-lagoবিশেষ প্রতিনিধি, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: জোরেশোরে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। নির্বাচনকালীন সরকার গঠন, প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা, নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি-এই তিনেই সব মনোযোগ দলটির। অক্টোবরের মধ্যেই এসব প্রক্রিয়া শেষ করতে চায় তারা। এ জন্য অক্টোবর পর্যন্ত নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে একগুচ্ছ কর্মসূচি সামনে নিয়ে এগোচ্ছে সরকারি দল।

তবে একাদশ সংসদ নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, তত কিছু চ্যালেঞ্জরও মুখোমুখি হচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কৌশল নিয়েও ভেবে রেখেছে দলটি। এক্ষেত্রে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার ওপরই গুরুত্ব আরোপ করছেন দলটির শীর্ষ নেতারা।

দলটির নীতি-নির্ধারকদের মতে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। নির্বাচন পর্যন্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি বিদেশি শক্তিগুলোকে সরকারের পাশে রাখা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তি আন্দোলন ও দেশীয় ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা ছাড়াও দলীয় অন্তর্কোন্দল নিরসন করাও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীন দলটি।

নীতি-নির্ধারণী সূত্রগুলো বলছে, এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য দলকে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করার কোনও বিকল্প নেই বলেও দলের সিনিয়র নেতারা মনে করেন।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, প্রার্থী তালিকা মোটামুটি চূড়ান্তই আছে। তবে তা তফসিল ঘোষণার আগে প্রকাশ করা হবে না। তবে যেসব আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করা হবে, সেগুলোতে বিকল্প প্রার্থীকে তফসিল ঘোষণার আগেই সবুজ সংকেত দেওয়ার সম্ভাবনা আছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির একটি বৈঠক আগামী সপ্তাহে হতে পারে। সেখান থেকেই ইশতেহার তৈরির জন্য একাধিক ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।

গত বুধবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছেন, আগামী ২০ দিনের মধ্যেই নির্বাচনকালীন সরকার গঠন হতে যাচ্ছে। আর নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ২৭ ডিসেম্বর। তিনি এ-ও জানিয়েছেন, ছোট মন্ত্রিসভায় সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল দলগুলোর প্রতিনিধি থাকবে। অর্থাৎ বিএনপির সুযোগ থাকছে না।

তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, নির্বাচনকালীন সরকার এত তাড়াতাড়ি গঠন হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, নির্বাচনকালীন সরকার গঠন হয়ে গেলে বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন বা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা শেষ সময় পর্যন্ত এই সুযোগটা নিতে চান। এ জন্য অক্টোবরের মাঝামাঝি নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হতে পারে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আওয়ামী লীগ পাঁচ বছর ধরেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এখন তা আরও গতি পেয়েছে। আগামী দিনগুলোতে ‘ফাইন টিউনিং’-এর কাজ চলবে।

সংবিধান অনুসারে, ৩১ অক্টোবর থেকে নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হবে। আগামী ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন সাংবাদিকদের বলেছেন, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ভোটের সম্ভাব্য সময় ধরে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা না নেওয়া এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমঝোতার উদ্যোগ-এসব বিষয় আওয়ামী লীগের বিবেচনাতে আর নেই। ওই সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক কোটা ও শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে তরুণ সমাজে আওয়ামী লীগের বিষয়ে কিছুটা নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। ইশতেহারে তরুণদের উৎসাহিত করার বিষয়টি জোর দেওয়া হবে।

 ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি আনতে সুদহার এক অঙ্কের ঘরে নামিয়ে আনার বিষয়ে জোর দেওয়া হবে। বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে শেয়ারবাজারের ওপর। উন্নয়ন প্রকল্পগুলো গুছিয়ে আনা এবং সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নানাভাবে প্রচারের চেষ্টা চলছে।

নির্বাচনের আগপর্যন্ত দলকে প্রান্ত থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সুসংগঠিত করার কাজ চলছে বলে জানালেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘প্রতিনিয়ত সর্বস্তরে কী করতে হবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। নির্বাচনের আগে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সবার সঙ্গে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার অন্তত আরেক দফা বসার সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানে দলীয় সভাপতি আমাদের চ্যালেঞ্জ কী, নির্বাচনে বিজয়ের জন্যে কী করতে হবে, সে বিষয়ে তার দিক-নির্দেশনা দেবেন।’

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় চার জন নেতা বলেন, খালেদা জিয়ার কারামুক্তির আন্দোলনকে কাজে লাগিয়ে বিএনপি নির্বাচনের আগে শেষবারের মতো মাঠে নামার চেষ্টা চালাতে পারে। আওয়ামী লীগকেও রাজনৈতিক শক্তি দিয়ে সেই চেষ্টা মোকাবিলা করতে হবে।

তাই নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি সঞ্চয় করে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দেন-দরবার করতে হবে ক্ষমতাসীনদের। একইসঙ্গে প্রভাবশালী বিদেশি শক্তিগুলোর তৎপরতা বন্ধে রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করার ওপরও তারা গুরুত্ব আরোপ করেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগকে সবসময় ক্ষমতায় আসতে হয়েছে। এবারও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ আওয়ামী লীগের সামনে আছে।জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে টানা তৃতীয়বারের মতো দেশ পরিচালনা করবে আওয়ামী লীগ।’

দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারক খান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের সংগঠন। সব ষড়যন্ত্র ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে রাষ্ট্রক্ষমতায় আবারও আওয়ামী লীগ অধিষ্ঠিত হবে।’

জানতে চাইলে ক্ষমতাসীন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচন ঘনিয়ে এলে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের ডালপালা গজাতে থাকে।’ এ গুলো মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়ে আওয়ামী লীগ কৌশল নির্ধারণ করে বলেও মন্তব্য করেন।