DSEআলমগীর হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ভালো ও মৌল ভিত্তি শেয়ারের দিকে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের। হঠাৎ করে বিনিয়োগকারীরা ভালো মৌল ভিত্তি শেয়ারে ঝুঁকছেন। দীর্ঘ সময় পর বাজার পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক আচরন করায় বিনিয়োগকারীরা বুঝে-শুনে এখন ভালো মৌলভিত্তির শেয়ার বিনিয়োগ করছেন। তাছাড়া বিদ্যুৎ জ্বালানী ও বস্ত্র খাতের কয়েকটি শেয়ারের দর অনেক নিচে দামের পড়ে থাকায় এসব শেয়ারের প্রতি ঝোঁক বাড়ছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

দীর্ঘদিন নেতিবাচক গন্ডির মধ্যে আটকে থাকা বাজার থেকে বিনিয়োগকারীদের অর্জিত অভিজ্ঞতার ফল এটি। কারণ, পুঁজিবাজারে স্মরনকালের ভয়াবহ ধসের আগে দুর্বল মৌলভিত্তির শেয়ার কিনেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন বিনিয়োগকারীরা। ধসের পর দীর্ঘ মন্দা কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে বাজার। বিশেষ করে সরকার পুঁজিবাজারের প্রতি মনোযোগী হওয়ায় পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে সব শ্রেনীর বিনিয়োগকারী বাজারমুখী হতে শুরু করেছেন।

তবে পূর্বের মতো এবার দুর্বল মৌলভিত্তির শেয়ারে এড়িয়ে চলছেন বিনিয়োগকারীরা। এর পরিবর্তে মৌল ভিত্তি শেয়ারগুলোর প্রতি বেশি আগ্রহ প্রকাশ করছেন বিনিয়োগকারীরা। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, পুঁজিবাজারে বড় মূলধনী কোম্পানি, বিশেষ করে বিদ্যুৎ জ্বালানী ও বস্ত্র খাতের কোম্পানিতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন বিদেশী বিনিয়োগকারীরা।

এ প্রসঙ্গে একাধিক মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গতকাল লেনদেনের শুরুর একটু পর থেকেই বাজারে সেল প্রেসার লক্ষ্য করা যায়। মুনাফাভোগী বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সম্মিলিতভাবে শেয়ার বিক্রির ঝোঁক দেখা যায়। কারণ এসব কোম্পানি থেকে তুলনামূলকভাবে অধিক রিটার্ন পেয়ে থাকেন বিনিয়োগকারীরা।

কিন্তু বর্তমানে পোর্টফোলিতে পরিবর্তন এনেছেন বিনিয়োগকারীরা। মৌল ভিত্তি কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি তারা ঝুঁকেছেন মুনাফার দৌড়ে এগিয়ে থাকা কোম্পানির শেয়ারে। সম্প্রতি এমন ১০টি কোম্পানি নাম উঠে এসেছে ডিএসইতে।

Page-01 (2)সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, দেশি প্রতিষ্ঠানগুলো এখন সমান তালে প্রতিযোগিতা করছে বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে। ফলে বছর শেষে তারাও ভালো মুনাফার মুখ দেখছে। সেই সঙ্গে শেয়ারপ্রতি আয় ও শেয়ারপ্রতি সম্পদও সন্তোষজনক। আর এ কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো লভ্যাংশও দিতে পারছে। এসব কারণে কিছুসংখ্যক দেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন বিনিয়োগকারীরা।

এ প্রসঙ্গে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘কোনো প্রতিষ্ঠানের ভালো ইপিএস থাকা মৌলভিত্তির একটা অন্যতম শর্ত। বিনিয়োগকারীরা এসব কোম্পানিতে থাকলে তারা ভালো রিটার্ন পাওয়ার আশা করতে পারেন। আমি মনে করি, হুজুগে বা গুজবে কান না দিয়ে নামসর্বস্ব কোম্পানিতে বিনিয়োগ না করে মৌলভিত্তির কোম্পানিতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করলে ঝুঁকি কম থাকে। বিনিয়োগকারীদের একটি কথা মনে রাখা দরকার, সেটি হচ্ছে যত ভালো কোম্পানি, তত কম ঝুঁকি।’

প্রাপ্ত তথ্যমতে, যে ১০ কোম্পানিতে আগ্রহ বেশি : স্কয়ার ফার্মা, ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন, কনফিডেন্স সিমেন্ট, খুলনা পাওয়ার, স্টাইল ক্র্যাফট, পাওয়ার গ্রিড, নাহি অ্যালুমিনিয়াম, সামিথ পাওয়ার, বিবিএস ক্যাবলস, ইবেন সিনা।

একাধিক বিনিয়োগকারীরা বলেন, বরাবরই এসব প্রতিষ্ঠানের মৌলভিত্তি ভালো। প্রতিষ্ঠানগুলো থাকায় যেমন ঝুঁকি কম, তেমনি এখান থেকে ভালো রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেজন্য তারা এসব কোম্পানিতে থাকতে পছন্দ করেন।

এ প্রসঙ্গে মো. মনিরুল ইসলাম নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘এসব কোম্পানি থাকার বড় সুবিধা হচ্ছে, এখান থেকে ভালো লভ্যাংশ পাওয়া যায়। ফলে ক্যাপিটাল গেইন নিয়ে তেমন ভাবতে হয় না। আমার মতে ব্যাংকে টাকা রাখার চেয়ে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে বেশি লাভবান হওয়া যায়।’