royojoyonti-দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সারা বিশ্বেই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের অগ্রাধিকার সবচেয়ে বেশি থাকে। তাই যখন বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়টি চলে আসে, তখন নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সবসময় নিয়ন্ত্রকের চেয়ে ফ্যাসিলিটেটরের ভূমিকা পালনের চেষ্টা করে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন।

গত শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে বিএসইসি প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্ত্রী উপলক্ষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) উদ্যোগে ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সহযোগিতায় আয়োজিত আলোচনা সভা ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএসইসির কমিশনার ড. স্বপন কুমার বালা ও খোন্দকার কামালউজ্জামান সভাপতি হিসেবে ছিলেন ডিএসইর চেয়ারম্যান ড. আবুল হাশেম। সঞ্চালকের দায়িত্বে ছিলেন ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএএম মাজেদুর রহমান। অন্যদের মধ্যে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ আহমেদ,

নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমানসহ বিএসইসির বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা, ডিবিএর প্রেসিডেন্ট মোস্তাক হোসেন সাদেক, ডিএসইর পরিচালকসহ প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) কর্মকর্তা, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশের (সিডিবিএল) কর্মকর্তা ও বিভিন্ন ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে ডিএসইর পরিচালক ও সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান এবং বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক রুখসানা চৌধুরী কমিশনের ২৫ বছরের পথচলা নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন বলেন, আমরা নিয়ন্ত্রকের চেয়ে ফ্যাসিলেটর হিসেবে কাজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। ব্রোকাররা হচ্ছেন পুঁজিবাজারের প্রাণ। ১৯৫৪ সালে ব্রোকাররা প্লাটফর্ম তৈরি করেছেন বলেই আজকে বাজারে বিনিয়োগকারীরা সম্পৃক্ত হতে পারছেন। তবে যখন কোনো ইস্যুতে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের বিষয়টি জড়িত থাকে, তখন আমাদের কঠোর হতে হয় এবং ব্রোকারসহ বাজার-সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হয়। সারা বিশ্বের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো বিনিয়োগকারীদের অগ্রাধিকার দিয়ে এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে থাকে বলে জানান তিনি।

ডিএসইর কাউন্সিলর হিসেবে ১৯৯৮ সালে পুঁজিবাজারে নিজের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি উল্লেখ করে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আমি যতদিন পুঁজিবাজারে আছি, ততদিন বিভিন্ন ইস্যুতে মতদ্বৈধতা হলেও ট্রেকহোল্ডারদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় থাকবে। ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে চীনা কনসোর্টিয়ামের যুক্ত হওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে যদি বাজারকে সম্প্রসারণ করা না যায়, বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা না যায়, তাহলে আমাদের পুঁজিবাজার খুব বেশিদূর এগোবে না। সেই সঙ্গে বিদেশী বিনিয়োগকারীরাও বাজারমুখী হবেন না।

ব্রোকারদের পুঁজিবাজারের চালিকাশক্তি হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, সম্প্রতি বিএইসির রজতজয়ন্ত্রীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী যে সাত দফা সুপারিশ করেছেন, সেগুলো ব্রোকারদের সহায়তা ছাড়া বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। অত্যন্ত সংবেদনশীল প্লাটফর্ম হিসেবে পুঁজিবাজারকে ফ্যাসিলিটেড করার দায়িত্ব ব্রোকারদের। বিনিয়োগ শিক্ষার যে কার্যক্রম বিএসইসি শুরু করেছে, ব্রোকাররা সেটিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

পুঁজিবাজারের সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে স্মৃতিচারণকালে বিএসইসির কমিশনার ড. স্বপন কুমার বালা বলেন, ডিএসইর এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ডিমিউচুয়ালাইজেশনের মতো কঠিন একটি কাজ করতে হয়েছে। অত্যন্ত স্বল্প সময়ের মধ্যে ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন প্রণয়নসহ পুরো প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়নের কাজ বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল।

তবে শেষ পর্যন্ত সবার সহযোগিতায় এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু ডিমিউচুয়ালাইজেশনের যে মূল স্পিরিট, সেটি এখনো পূরণ হয়নি। এটা তখনই পূর্ণতা পাবে, যখন ব্রোকাররা আর স্টক এক্সচেঞ্জের মালিক হিসেবে থাকবে না বরং তারা শুধু ব্রোকার হিসেবে বাজারে ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে পেশাদার ইন্টারমিডিয়ারিজের অভাব রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বিএসইসির কমিশনার খোন্দকার কামালউজ্জামান বলেন, পেশাগত জীবনের পুরোটাই কেটেছে বিচারক হিসেবে। বিএসইসির কমিশনার হিসেবে আমার অভিজ্ঞতা বেশি দিনের নয়, মাত্র এক বছরের। তবে এ স্বল্প সময়ে নিয়ন্ত্রকের চেয়ে বন্ধু হিসেবে কাজ করার চেষ্টা করেছি।

দেশের প্রচলিত আইনের তুলনায় বিএসইসির আইনের ভিন্নতার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, যেখানে প্রচলিত আইনে বাদীকে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ করতে হয়, সেখানে বিএসইসির আইনে অভিযুক্ত নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হয়। তাই যেকোনো ধরনের সিকিউরিটিজ আইনের ব্যত্যয়ের ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে সংশোধনের সুযোগ দেয়া উচিৎ বলেও মত দেন তিনি।

ডিবিএর প্রেসিডেন্ট মোস্তাক হোসেন সাদেক বলেন, ১০ বছর আগের বিএসইসির তুলনায় বর্তমানের বিএসইসির মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে ডিএসইর শেয়ার বিক্রির বিপরীতে মূলধনি মুনাফায় করছাড়ের বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করায় বিএসইসি চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

ডিএসইর চেয়ারম্যান ড. আবুল হাশেম স্টক এক্সচেঞ্জটির পক্ষ থেকে লেনদেনের সময় বৃদ্ধি, স্ক্রিপ নিটিং ও সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টি (সিসিপি) চালু করাসহ আরো যেসব দাবিদাওয়া এরই মধ্যে কমিশনের কাছে উত্থাপন করা হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের অনুরোধ জানান।