Mutual-Fundদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: অর্থমন্ত্রীর সুপারিশের আলোকে তালিকাভুক্ত মেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে এ মেয়াদ বাড়ানো নানা সমালোচনা সত্তে¡ও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যা একটি অ্যাসেট ম্যানেজম্যান্ট প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে।

তবে এর আগে দেশের প্রথম বেসরকারি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি এইমস বাংলাদেশ এইমস প্রথম এবং গ্রামীণ ওয়ান স্কিম ১ মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করলেও বিএসইসি নাকচ করেছিল। এবং ফান্ড ২টির অবসায়ন করতে হয়। গত রোবার বিএসইসির নির্বাহি পরিচালক ও মূখপাত্র মোঃ সাইফুর রহমান সাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।

Page-01 (12)জানা গেছে, একটি অ্যাসেট ম্যানেজম্যান্ট প্রতিষ্ঠানের কিছু ফান্ডের মেয়াদ কয়েক বছরের মধ্যে শেষ হবে। তবে ওই অ্যাসেট ম্যানেজম্যান্ট প্রতিষ্ঠান ফান্ডগুলোর টাকা অপব্যবহার করেছে। যাতে মেয়াদ শেষে অবসায়নে ইউনিটহোল্ডারদের টাকা প্রদানের সক্ষমতা নেই।

এ কারনে শুরুতে ফান্ডের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য বিএসইসিতে তদবির করে। তবে এক্ষেত্রে বিএসইসি সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেয়। পরে ওই অ্যাসেট ম্যানেজম্যান্ট প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থমন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হয়। যার আলোকে অর্থমন্ত্রী ফান্ডের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য বিএসইসিতে সুপারিশ করে।

বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ি, বিদ্যমান তালিকাভুক্ত মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মেয়াদ সর্বোচ্চ ১০ বছরের সমান আরো একটি মেয়াদ বাড়ানো যাবে। তবে কোন ফান্ডের মেয়াদ ২০ বছরের বেশি হবে না। একইসঙ্গে যেসব ফান্ড মেয়াদ বৃদ্ধি করতে চাইবে না, সেসব ফান্ডের বিধি-বিধান মোতাবেক রুপান্তর বা অবলুপ্তির সুযোগ থাকবে।

মেয়াদ বাড়ানোর মাধ্যমে মৃত প্রায় মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতকে জীবিত কবর দেওয়ার সামিল হয়েছে বলে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক এক পরিচালক ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, পূণ:বিনিয়োগের সুযোগের মাধ্যমে মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে প্রায় মৃত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ফান্ডগুলোর পরিচালকদের অপকর্ম ঢাকতে আইনি সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এবার মেয়াদ বাড়ানোর মাধ্যমে অবধারিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ এর ধারা ১৬ অনুযায়ি, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক কমিশন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর সেকশন ২০এ’তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বিএসইসি এই মেয়াদ বৃদ্ধির অনুমোদন দিয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৩১ মে সরকারের একটি বিশেষ সংস্থা পুঁজিবাজারের সর্বশেষ পরিস্থিতি উত্তরণে করণীয় বিষয়ে একটি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। এতে ২০১১ সালের পুঁজিবাজারের ধস-পরবর্তী সময়ে বাজার স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে যেসব মিউচুয়াল ফান্ড গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে, সেগুলোর মেয়াদ ১০ বছর বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার ইতিবাচক ভূমিকা রাখার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রতিবেদনে প্রয়োজনে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে নীতিমালা পরিবর্তনের কথা বলা হয়।

এ প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৮ জুন বিএসইসির চেয়ারম্যানের কাছে অর্থমন্ত্রী স্বাক্ষরিত একটি উপানুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে ২০১১ সালের পুঁজিবাজারের ধস-পরবর্তী সময়ে বাজার স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে যেসব মিউচুয়াল ফান্ড গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে, সেগুলোর মেয়াদ ১০ বছর বাড়ানোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়।

অর্থমন্ত্রীর চিঠির জবাবে বিএসইসির চেয়ারম্যান জানান, ২০১০ সালের ২৪ জানুয়ারি মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ ১০ বছর নির্ধারণ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে এ পর্যন্ত ৪৬৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকার ১০টি মিউচুয়াল ফান্ড মেয়াদি থেকে বেমেয়াদিতে রূপান্তরিত হয়েছে। আর ৪১৮ কোটি ৬২ লাখ টাকার চারটি মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড ১০ বছরের মেয়াদ শেষে অবসায়ন হয়েছে। এর মধ্যে সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান এইমস পরিচালিত গ্রামীণ ওয়ান: স্কিম ওয়ান ফান্ডের অবসায়ন হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের মাধ্যমে।
এর আগে ২০১৪ সালে বেশ কিছু মেয়াদি ফান্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে আসার প্রেক্ষাপটে দেশের প্রথম বেসরকারি সম্পদ ব্যবস্থাপনা

কোম্পানি এইমস বাংলাদেশ এইমস প্রথম এবং গ্রামীণ ওয়ান স্কিম-১ মিউচুয়াল ফান্ডের আরও ১০ বছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু শেয়ারবাজারের স্বার্থে বিএসইসি তা নাকচ করে দেয়। যা নিয়ে ২০১৬ সালের ৩১ মে এইমস ফার্স্ট ও গ্রামীণ ওয়ান: স্কিম ওয়ান মিউচুয়াল ফান্ডের অবসায়ন-সংক্রান্ত দায়ের করা সব রিট খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের প্রধান বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও মির্জা হোসেন হায়দারের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। এ রায়ের ফলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির প্রজ্ঞাপন অনুসারে মিউচুয়াল ফান্ডের অবসায়নের বাধা দূর হয়।

এর আগে এ দুই ফান্ডের ১০ বছরের মেয়াদ শেষে অবসায়ন ও রূপান্তর প্রক্রিয়া চলাকালীন এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন বিনিয়োগকারী আলী জামান। শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি মির্জা হোসাইন হায়দার ও এ কে এম জহিরুল হকের বেঞ্চ মিউচুয়াল ফান্ডের অবসায়ন/রূপান্তর সংক্রান্ত বিএসইসির নির্দেশনাকে অবৈধ ঘোষণা করে এর প্রক্রিয়া ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। পরবর্তীতে বিএসইসি এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করে। কয়েক দফা শুনানির পর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে মিউচুয়াল ফান্ডের অবসায়নে বিএসইসির সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকে।