govtদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: টানা ৯ বছরেও শেয়ারবাজারে বহুল আলোচিত সরকারি ২১ কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়নি। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও উপেক্ষিত। বিষয়টি নিয়ে আলাদাভাবে তদন্ত কমিটি গঠন করলেও তেমন অগ্রগতি নেই। ফলে এসব কোম্পানির শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্তি একেবারে অনিশ্চিত। এ বিষয় জানতে চাইলে অর্থসচিব (ভারপ্রাপ্ত) আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘সরকারি শেয়ারের বিষয়টি কোন পর্যায়ে রয়েছে সে ব্যাপারে এখনও আমি অবহিত নই।’

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকার গঠিত কমিটির এক সদস্য বলেন, বাহির থেকে যত সহজ মনে হয়, প্রক্রিয়াটি ততটা সহজ নয়। সরকারি কোম্পানিতে পদে পদে জটিলতা। ফলে বাজারে নিয়ে আসা সম্ভব হলেও তা অনেক সময়সাপেক্ষ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে শেয়ারবাজারে চাহিদা ও সরবরাহ দুই দিক থেকেই সংকট রয়েছে। চাহিদার দিক থেকে সংকট হল বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই। অর্থাৎ বাজারে বিনিয়োগ করলে পুঁজি নিরাপদ থাকবে এমনটি বিশ্বাস করতে পারছেন না তারা। ফলে নতুন বিনিয়োগ আসছে না।

সরবরাহের দিক থেকে সংকট হল বাজারে ভালো কোম্পানির সংখ্যা খুবই কম। ভালো কোনো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হচ্ছে না। এ অবস্থায় সরকারি কোম্পানি বাজারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

জানা গেছে, সরকারি আরও ২১ কোম্পানির শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্তির জন্য জটিলতা নিরসনে গত বছরের ২৬ জুলাই ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে সরকার। কমিটির প্রধান ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব মুসলিম চৌধুরী। কমিটিতে অন্য সদস্যরা ছিলেন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিএসইসির প্রতিনিধি।

Page-01 (12)সরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার পুঁজিবাজারে আনতে হলে আর কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে, কেন প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের শেয়ার বাজারে ছাড়তে পারছে না- কমিটি এ বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট এবং সুপারিশ করবে। রিপোর্ট দেয়ার সর্বশেষ সময় ছিল গত বছরের নভেম্বর। কিন্তু তা আলোর মুখ দেখেনি।

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনার পরও গত ৯ বছরে বাজারে আসেনি সরকারি ২১ কোম্পানির শেয়ার। এর মধ্যে মাত্র ৩টি কোম্পানি প্রাথমিক প্রস্তুতি নিয়েছে। বাকি ১৮টি প্রতিষ্ঠানের এতদিন কোনো অগ্রগতি ছিল না। মূলধন সংকটে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।

কিন্তু শেয়ার অফলোডের ক্ষেত্রে গড়িমসি করেছে এসব কোম্পানিতে থাকা সরকারি আমলারা। তারা নতুন নতুন অজুহাত বের করছেন। আর তাদের অসহযোগিতার কারণেই এতদিন শেয়ার ছাড়ার প্রক্রিয়াটি পিছিয়েছে বলে মনে করছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এসব কোম্পানির শেয়ার ছাড়ার ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী একাধিকবার সময় বেঁধে দিয়েছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, তিনি কোনোবারই কথা রাখতে পারেননি। তার মতে, সরকারি কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হলে বাজার টেকসই হবে। পাশাপাশি কোম্পানিগুলোর অব্যবস্থাপনা অনেকাংশে কমে যাবে। কোম্পানিগুলোর জবাবদিহিতার কারণে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা বেড়ে যাবে।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের স্বার্থে এবং স্বচ্ছতা বাড়ানোর লক্ষ্যেই সরকারি কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করা উচিত। কারণ ভালো শেয়ার এলে নতুন বিনিয়োগকারীরা আসবেন। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং ভালো মিউচুয়াল ফান্ড আসবে। ফলে বাজারের গভীরতাও বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।

জানা গেছে, ২০০৯-১৮ সাল পর্যন্ত ৮টি সরকারি প্রতিষ্ঠান বাজারে তাদের শেয়ার ছেড়েছে। এর বাইরে আরও ২৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ছাড়ার কথা। এর মধ্যে ২৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ছাড়ার কার্যক্রম চলছে বলে ওই বৈঠকে তুলে ধরা হয়।

সূত্রমতে, কোম্পানিগুলোকে এর আগেও কয়েক দফা সময় দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এ ব্যাপারে সময় নিয়েছে। কিন্তু প্রতিবার নির্ধারিত সময় পার হলেও তারা শেয়ার ছাড়তে পারেনি।

জানা গেছে, ২০০৮ সালে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলে সরকারি ৩৪ কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে ওই সময় সে উদ্যোগ বেশিদূর এগোয়নি। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালে বাজারে ভালো শেয়ারের ভয়াবহ সংকট দেখা দেয়। এরপর সংকট কাটাতে সরকারি কোম্পানিকে বাজারে আনার উদ্যোগ শুরু হয়।

২০১০ সালের ১৩ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে সরকারি কোম্পানির ৫১ শতাংশ শেয়ার সরকারের হাতে রেখে বাকি শেয়ার পাবলিকের মধ্যে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই সময়ে কোম্পানিগুলোকে ২০১০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেয়ার ছাড়তে সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২০১১ সালের ১০ ফেব্রæয়ারি আরেকটি বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী।

ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানিয়ে কোম্পানিগুলোকে শেয়ার ছাড়ার তাগিদ দেয়া হয়। এর মধ্যে কয়েকটি কোম্পানির সময়সীমা ২০১১ সালের ১৪ ও ৩০ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তবে এ সময়ে মোট কোম্পানির সংখ্যা ৩৪ থেকে কমে দাঁড়ায় ২৬টিতে। সর্বশেষ শেয়ার ছাড়ার জন্য ২০১৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বাড়ানো হয়।