intech-দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে মন্দাভাব দেখা দিলেও আইটি খাতের তালিকাভুক্ত ইনটেকের শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েই চলেছে। প্রতিষ্ঠানটির ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারের দাম ২ মাসের মাথায় ৬৭.৮০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। ইনটেক অনলাইনের শেয়ারের দাম এমন অস্বাভাবিক বাড়ার কারণ খতিয়ে দেখে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কঠোর পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মো. রকিবুর রহমান।

তবে আইটি খাতের কোম্পানি ইনটেক লিমিটেড বাংলাদেশে এমাজন ওয়েব সার্ভিস দেবে এ খবরের পর টানা বাড়ছে এ কোম্পানির শেয়ার দর। সম্প্রতি কোম্পিানিটি এ বিষয়ে ভারতের মিনফি টেকনোলজি প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে ‘এক্সক্লুসিভ কমার্শিয়াল এগ্রিমেন্ট’ সম্পন্ন করেছে।

এমাজন ওয়েব সার্ভিস দেওয়ার চুক্তি ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের রেনিয়াল সিস্টেমস ইনকরপোরেশনের সঙ্গে ইনটেক লিমিটেডের আরো একটি বাণিজ্যিক চুক্তি হয়। এই চুক্তির আওতায় প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে আইটি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করবে ইনটেক।

এর পর থেকে বেপরোয়া গতিতে বাড়ছে ইনটেক লিমিটেডের দর। তেমনি নতুন করে ইনসাইডার ট্রেডিং’র অভিযোগ উঠেছে ইনটেক লিমিডের বিরুদ্ধে। আর এ ইনসাইডার ট্রেডিং ও কারসাজির মুল নেপেথ্যে চলছে শীর্ষ এক ব্রোকারেজ হাউজ বিরুদ্ধে। এর ঐ ব্রোকারেজ জাউজের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ উঠেছিল। ইতিমধ্যে কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার কারসাজি করে আলোচনার এসেছে ব্রোকারেজ হাউজটি।

ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের মতো বিষয়গুলো পুঁজি করে প্রতারণা করে চলছে। টানা ম্যানুপুলেটেড করে শেয়ারের দর বাড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। এতে একশ্রেণীর বিনিয়োগকারী লাভবান হচ্ছেন। তবে লুট হচ্ছে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীর সম্বল। আইন-কানুন কিংবা নজরদারি কোনো কিছু দিয়েই প্রতারকদের লাগাম টানা যাচ্ছে না।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ইনটেকের শেয়ারদর সম্প্রতি ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। গত তিন মাস ধরেই এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। আর গত এক মাসে এই দর বৃদ্ধির হার আরও বেড়েছে। এক মাস আগে এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয় ১৮ টাকা ৩০ পয়সায়। এরপর থেকে টানা ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে দর। সর্বশেষ গতকাল এ শেয়ার লেনদেন হয় ৬৭.৮০ টাকা। অর্থাৎ এ সময়ের মধ্যে প্রতিটি শেয়ারদর বাড়ছে প্রায় চার গুন। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাতও (পিই) অনেক বেশি। বর্তমানে ২৩১.১৪ তে অবস্থান করছে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের পিই। ব্যাকরণগতভাবে এমন কোম্পানিতে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ।

এদিকে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধিকে সহজভাবে নিচ্ছেন না বাজার-সংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিমত, প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা আগের চেয়ে বাড়লেও সে তুলনায় দর বৃদ্ধির হার অনেক বেশি। এই শেয়ার নিয়ে কারসাজি হচ্ছে এমন মন্তব্য করেন তারা। অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির বিষয়টি নজর এড়ায়নি ডিএসই কর্তৃপক্ষের। যে কারণে তারা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করে। জবাবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের কাছে দর বৃদ্ধি পাওয়ার মতো কোনো সংবেদনশীল তথ্য নেই।

অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই ২০১৭-মার্চ ২০১৮) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ২২ পয়সা। যা এর আগের বছর একই সময় ছিল ১৪ পয়সা। সর্বশেষ বছরে প্রতিষ্ঠানটি দুই কোটি ৭৮ লাখ টাকা মুনাফা করে। অন্যদিকে শেয়ারহোল্ডারদের সন্তোষজনক রিটার্ন দেওয়ার নজির নেই কোম্পানিটির। ২০১৭ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাববছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়েছে ইনটেক।

আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) এক টাকা ৯ পয়সা ও শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য ছিল ১১ টাকা ২০ পয়সা। এদিকে ২০১৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ১৮ মাসে সমাপ্ত হিসাববছরেও ১০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ পেয়েছেন ইনটেক শেয়ারহোল্ডাররা। সে সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস ছিল এক টাকা দুই পয়সা। এ ক্যাটেগরির প্রতিষ্ঠানটি ২০০২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়।

কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৩০ কোটি টাকা, মূলধন ২৮ কোটি ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। রিজার্ভ ৫২ লাখ টাকা। এ কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা দুই কোটি ৮২ লাখ ১৭ হাজার ৩২১টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে কোম্পানির মাত্র চার দশমিক ৭৭ শতাংশ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ এবং বাকি ৮৩ দশমিক ৩১ শতাংশ শেয়ারই সাধারণ বিনিয়োগকারীর হাতে।