DSEদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১৫ কোম্পানি টানা পাঁচ বছর বা বেশি সময় ধরে শেয়ারহো্ল্ডারদের লভ্যাংশ দিচ্ছে না। এসব কোম্পানির উৎপাদন ও বিপনন অবস্থাসহ সার্বিক অবস্থা পরিদর্শন করবে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এরই অংশ হিসাবে শিগগির ৫ কোম্পানি পরিদর্শনে নামছে প্রতিষ্ঠানটি। এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমতিও নেয়া হয়েছে। তবে কোম্পানিগুলোর নাম এ মূহুর্তে প্রকাশ করতে রাজি নয় ডিএসই কর্তৃপক্ষ।

তবে ডিএসই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নজরদারিতে থাকা ১৫ কোম্পানির সবক’টিকে শেয়ারবাজার থেকে একযোগে তালিকাচ্যুত না করা হবে না। পরিস্থিতি বিবেচনায় কোম্পানিগুলোকে ওটিসিতে পাঠানো হতে পারে। স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ আপাতত এমনটিই চিন্তাভাবনা করছে। ডিএসইর একাধিক পরিচালক ও সংশ্নিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, কোম্পানিগুলোর কয়েক হাজার শেয়ারহোল্ডারের স্বার্থের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এ ক্ষেত্রে ভেবেচিন্তে পদক্ষেপ নেওয়ার এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এর আগে গত ৭ আসস্ট দীর্ঘদিন লভ্যাংশ না দেওয়া এবং উৎপাদনে না থাকা ১৫ কোম্পানিকে আইন অনুযায়ী তালিকাচ্যুত করার প্রক্রিয়া হিসেবেব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসই। কোম্পানিগুলো হলো- মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, দুলামিয়া কটন স্পিনিং মিলস, সমতা লেদার কমপ্লেক্স, শ্যামপুর সুগার মিলস, ঝিলবাংলা সুগার মিলস, ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক্ক ইন্ডাস্ট্রিজ, কেঅ্যান্ডকিউ (বাংলাদেশ), সাভার রিফ্যাক্টরিজ, বেক্সিমকো সিনথেটিক্স, জুট স্পিনার্স, শাইনপুকুর সিরামিক্স, সোনাগাঁও টেক্সটাইল ও ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক।

ডিএসই সূত্র জানায়, এগুলোর মধ্যে ১১টিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বেক্সিমকো সিনথেটিক্স, শাইনপুকুর সিরামিক্স, সোনারগাঁও টেক্সটাইল ও ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে লভ্যাংশ না দেওয়ার সময়কাল পাঁচ বছর পূর্ণ হতে আরও কয়েক মাস বাকি। ফলে এগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়নি।

ডিএসই কর্তৃপক্ষের চিঠির জবাবে কোম্পানিগুলো লিখিত যে ব্যাখ্যা দিয়েছে তা ডিএসই কর্তৃপক্ষের কাছে সন্তোষজনক বলে মনে হয়নি। ফলে এগুলোর প্রতিনিধিদের সরাসরি ডিএসই কার্যালয়ে শুনানিতে ডাকা হয়। এতে পাঁচ থেকে ছয় কোম্পানি জানিয়েছে, নানা কারণে তাদের ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না এবং শিগগির মুনাফায় আসা সম্ভব নয়। আগামী আরও কয়েক বছর তাদের পক্ষে লভ্যাংশ দেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে।

ডিএসই সূত্র জানায়, কয়েকটি কোম্পানির দাবি- তাদের ব্যবসা কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলছে। তবে মূলধন সংকট ছাড়াও ব্যবসা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ায় কাঙ্ক্ষিত মুনাফা হচ্ছে না। আগামীতে ব্যবসা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ার আশা প্রকাশ করেছে। এ অবস্থায় পাঁচ কোম্পানির কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য যাচাই করতে সরেজমিন পরিদর্শন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এগুলোর কারখানাসহ প্রধান কার্যালয় পরিদর্শনে যেতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির অনুমতি চাওয়া হয়েছে। সংস্থাটি এ জন্য অনুমতিও দিয়েছে।

এ বিষয়ে ডিএসইর সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, খারাপ কোনো কোম্পানি মূল বাজারে রাখা হবে না। নীতিগত এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কোনো সুযোগ নেই। তবে এ সিদ্ধান্ত হয়তো একবারে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। ক্রমান্বয়ে বাজারকে খারাপ শেয়ারমুক্ত করা হবে।

তিনি বলেন, শেয়ারবাজারের জন্য অনেক ভালো আইন থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে সেগুলোর যথাযথ প্রয়োগ নেই। এরই সুযোগ নিচ্ছে কিছু লোক। যে কোম্পানির চাল-চুলা কিছু নেই, সে কোম্পানির শেয়ারও হুটহাট বাড়ছে। কিছু লোক গুজব ছড়াচ্ছে। আর তাতে বিভ্রান্ত হয়ে বা লোভে পড়ে ওইসব কোম্পানির শেয়ার কিনছে। এ অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে পারে না।

রকিবুর রহমান বলেন, ডিএসইর পরিকল্পনা হচ্ছে যেসব কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ দেখবে না, সেগুলোকে এ বাজারে রাখা হবে না। যারা লোভে পড়ে বা অন্য কারণে এসব শেয়ার কিনছে, তারা প্রকৃত বিনিয়োগকারী নয়। তাই এদের স্বার্থ দেখার দায়িত্বও ডিএসই বা অন্য কারও নয়।