DSEদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: নির্বাচনী মুহুর্তে পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল রাখতে সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহন করছে। গত জানুয়ারিতে শুরু হওয়া দরপতন থেকে উত্তরণের পাশাপাশি বাজারের চলমান তারল্য ও আস্থার সংকট দূর করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যাতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের আগে নতুন করে পুঁজিবাজার অস্থিতিশীল না হয়। এ কারণে সরকারকে যাতে বিব্রত হতে না হয়।

তেমনি আসন্ন জাতীয় নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ততই বাড়ছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পুঁজিবাজার ঘিরে নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ শঙ্কা দূর করা ও বাজারকে স্থিতীশীল রাখতে চারটি প্রণোদনামূলক উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

উদ্যোগগুলো হলো— ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) ২ হাজার কোটি টাকার ফান্ড সংগ্রহের উদ্যোগ, চীনা কনসোর্টিয়ামের অর্থের ওপর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ উৎসে কর মওকুফ, পোশাক খাতের উৎসে কর কমানো এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর নগদ জমা সংরক্ষণ বা ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর) ১ শতাংশ কমানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নির্বাচনী বছরকে কেন্দ্র করে চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে ব্যাংক মালিকদের দাবির মুখে ব্যাংকগুলোর সিআরআর ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। কারণ, বছরের শুরুতেই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক তারল্য সংকট দেখা দেয়। আর এর প্রভাব পড়ে পুঁজিবাজারেও।

ফলে ব্যাংকিং সেক্টরের তারল্য সংকট কমাতে ১ শতাংশ সিআরআর কমানোর পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে সরকারি ব্যাংকগুলো ৫০ শতাংশ আমানত রাখার আইন করা হয়।

গত সেপ্টেম্বরে পোশাক মালিকদের দাবির প্রেক্ষিতে করপোরেট করও আড়াই শতাংশ কমিয়ে ১২ শতাংশ করা হয়। পুঁজিবাজারে তালিভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে সেটা ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। এরপর থেকে ব্যাংক ও পোশাক খাতের কোম্পানিরগুলোর শেয়ারের দাম ও লেনদেন দুটোয় বাড়ছে।

সর্বশেষ বাজারের তারল্য সংকট দূর করে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফেরাতে প্রথমে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইর শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ার বিক্রির ওপর থাকা ১৫ শতাংশ উৎসে কর কমিয়ে ৫ শতাংশ ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। যা দ্রুত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) করে দিচ্ছে।

অন্যদিকে মার্কেট সার্পোট দেওয়ার জন্য গঠিত আইসিবিকে শক্তিশালী করতে গত ১১ অক্টোবর পুঁজিবাজার থেকে ২ হাজার কোটি টাকা উত্তোলনের জন্য অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ ক্ষেত্রে ফান্ডটির দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থাৎ ৭০ শতাংশ অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার শর্ত দিয়েছে কমিশন। এর ফলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আইসিবির ফান্ডও আরো বাড়লো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল রাখতে সরকার আগেও উদ্যোগ নিয়েছ এখনো উদ্যোগ নিচ্ছে। বাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে সব সময় উদ্যোগ নেওয়াই কমিশনের দায়িত্ব।

তিনি বলেন, সেই লক্ষ্যে আইসিবিকে ২ হাজার কোটি টাকার ফান্ড গঠনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আশা করি প্রতিষ্ঠানটি সঠিক সময়ে বিনিয়োগ করে পুঁজিবাজারকে সার্পোট দেবে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, পুঁজিবাজারে আস্থা ও তারল্য সংকট রয়েছে। বাজারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় বিনিয়োগের মধ্যে শঙ্কা আরো বাড়ছে। তবে আস্থা ও তারল্য সংকটের বাজারে সরকারের উদ্যোগগুলো কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন তিনি।

ডিএসইর সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক রকিবুর রহমান দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, চীনা কনসোর্টিয়ামের অর্থের ওপর সরকারের ১০ শতাংশ উৎসে কর ছাড়ের ফলে শেয়ারহোল্ডারদের সাড়ে ৯শ’ কোটি টাকার অর্থ বাজারে বিনিয়োগ হবে। পাশাপাশি আইসিবির নতুন ফান্ড গঠনের পর পুঁজিবাজারের তারল্য সংকট কমে আসবে। তিনি বলেন, আমরাও আশা করছি, নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের পক্ষ থেকে আরো ইতিবাচক প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

ডিএসইর আরেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, ২০১০ সালের পর থেকে বাজার থেকে ভালো বেনিফিট আসেনি। আমাদের আশা অন্তত নির্বাচন উপলক্ষে বাজারটা ভালো থাকবে। তাতে কিছু মুনাফা করতে পারব।