Fu-Wang-foodদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: স্বনামধন্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, কিন্তু বছর শেষে নামমাত্র মুনাফা ও ডিভিডেন্ড ঘোষণা করছে। আর্থিক প্রতিবেদনে অস্বচ্চলতার কারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থাও জরিমানা করেছে কোম্পানিটিকে। পাশাপাশি নামমাত্র শেয়ার থাকলেও পরিচালনা পর্ষদে দায়িত্ব রয়েছে কতিপয় পরিচালক। বলছি পুঁজিবাজারের খাদ্য ও আনুষাঙ্গিক খাতের ফু-ওয়াং ফুডের কথা।

তাই, কোম্পানিটির উদ্যোক্তাদের কার্যক্রমে হতাশ হয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) দ্বারস্ত হয়েছে বিনিয়োগকারী জুয়েল শিকদার। উদ্যোক্তা পরিচালকদের কার্যক্রমে সন্দেহ হওয়ায় আগামী বোর্ড সভাসহ পরবর্তী এক বছরের জন্য প্রশাসক নিয়োগের দাবি জানিয়েছে তিনি।

বিএসইসিকে চিঠি দেওয়ার পর বিনিয়োগকারী জুয়েল শিকদার দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে তিনি বলেন, মাত্র ৫০০ শেয়ার নিয়ে কেউ কোন কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে থাকতে পারে! এটা ফু-ওয়াং ফুডের পর্ষদের দিকে না তাকালে বুঝা যায় না। যে ব্যক্তি মাত্র ৫০০ শেয়ার নিয়ে পরিচালনা পর্ষদে রয়েছে, সে কিভাবে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে কথা বলবে? তারা তো লুটপাটে ব্যস্ত থাকবে।

fuwangfood-newsতিনি বলেন, দেশের খাদ্য ও আনুষাঙ্গিক খাতের স্বনামধন্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ফু-ওয়াং ফুড। কিন্তু কোম্পানিটি নামমাত্র মুনাফা ও ডিভিডেন্ড দিচ্ছে। তাই কোম্পানিটির কার্যক্রমে স্বচ্চতা আনতে অবশ্যই একজন প্রশাসক নিয়োগ করা উচিত।

বিনিয়োগকারী জুয়েল শিকদার বলেন, এরই মধ্যে আমার রিটের পেক্ষিতে হাইকোর্ট কোম্পানিটির নাম মাত্র শেয়ারধারী পরিচালকদের পদচ্যুত করার নির্দেশ দিয়েছে। তাই তারা আগামী পরিচালনা পর্ষদ সভায় কারসাজি করতে চেষ্ঠা করবে।

বিএসইসিতে দেওয়া চিঠিটি দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণের ডটকমের বিনিয়োগকারীদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো: আমি জুয়েল শিকদার, পিতাঃ মোঃ ফখরউদ্দিন শিকদার, আমি একজ শেয়ার মার্কেটের সাধারণ বিনিয়োগকারী। আমি দীর্ঘদিন ধরে শেয়ার মার্কেটে ব্যবসা করে আসিতেছি। আমি অনুধাবন করেছি যে, ফু-ওয়াং ফুড কোম্পানি যে পরিমান প্রফিট করে কিন্তু বিনিয়োগকারীদের সেই প্রফিট থেকে বঞ্চিত হয়। তাই আমি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য হাইকোর্টের শরণাপন্ন হই।

পুঁজিবাজারের খাদ্য ও আনুষাঙ্গিক খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি ফু-ওয়াং ফুডের পরিচালনা পর্ষদে প্রকৃত বিনিয়োগকারীদের অর্ন্তভুক্তি ও পূর্ণগঠনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হাইকোর্ট ১১ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে রিট আবেদন করি। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৬ অক্টোবর ২০১৮ মঙ্গলবার ফু-ওয়াং ফুড লিমিটেডের পর্ষদে থাকা পরিচালকদের মধ্যে যাদের কাছে ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার নেই তাদের পরিচালক পদ শূণ্য ঘোষণার বিষয়ে রায়ের কফি পাওয়ার দেই মাসের মধ্যে প্রজ্ঞাপণ জারি করতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

তাছাড়া তাদের শূন্য পদ বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) মাধ্যমে ৫ শতাংশ কিংবা তার বেশি শেয়ারধারীদের মাধ্যমে পূরণেরও নির্দেশ দিয়েছে আদালত। গত মঙ্গলবার বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। ৮ সপ্তাহের মধ্যে পরিচালনা পর্ষদ পুণঃগঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে ব্যবস্থা নিতে বলেছে আদালত।

ফু-ওয়াং ফুড ২০০০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বর্তমানে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের নিকট ৫.৩৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। একটা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের কাছে মাত্র ৫.৩৫% শেয়ার থাকতে পারে না। শেয়ারধারী পরিচালকদের মধ্যে ফু-ওয়াং ফুডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. আরিফ আহমেদ চৌধুরীর কাছে কোম্পানিটির ৪.৪৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।শেয়ারধারী পরিচালক কমল কান্তি মন্ডল ও বিল্পব চক্রবর্তীর কাছে যথাক্রমে ০.০০৫ শতাংশ ও ০.০৩৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। উদ্যোক্তা হু চিন হুয়ার কাছে রয়েছে কোম্পানিটির ০.২৩ শতাংশ শেয়ার, স্বতন্ত্র পরিচালকদের মধ্যে কোম্পানিটির চেয়ারম্যঅন আবদুল কাদেরের কাছে ০.৫৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

আরেক স্বতন্ত্র পরিচালক কাজী তোফাজ্জল হোসাইনের কাছে কোন শেয়ার নেই। এ কারণেই বাজারের স্বার্থে দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে আমি এই রিটের রায় পেয়েছি। কিছুদিন আগে ফু-ওয়াং ফুড নিয়মতান্ত্রিক ভাবে হিসাব না জমা দেওয়ার জন্য আপনারা (বিএসইসি) তাদের জরিমানা করেছেন। ফু-ওয়াং ফুডের পরিচালনা পর্ষদ কোম্পানিকে লুটেপুটে খাচ্ছেন। আমার বিশ্বাস এই রিটের কারণে লক্ষ লক্ষ বিনিয়োগকারী এর সুফল পাবে এবং সরকারও তার আয়কর থেকে বঞ্চিত হবে না ও আমি আরো বিশ্বাস করি আওয়ামীলীগ সরকার কাউকে ছাড় দিবে না।

আমি বিশ্বাস করি বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের নিয়ন্ত্রনে আগামী ২৮ তারিখে যে বোর্ড মিটিং আছে, সেখানে বিনিয়োগকারীদের অধিকারের প্রতিফলন হবে না। তারা সঠিক পরিমানে ডিভিডেন্ড না দিয়ে কম দেওয়ার চেষ্টা করবে কারণ বর্তমান হাইকোর্টের রায়ের ফলে অনিক পরিচালককে পরিচালনা পর্ষদ ছাড়তে হবে। তাই তারা ডিভিডেন্ড কম দিয়ে শেয়ারের দাম কামিয়ে মার্কেট থেকে শেয়ার হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে। এটা শুধু আমার বিশ্বাস নয়, বর্তমান মার্কেটে এ রকম একটি সংবাদ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

অতএব, মানণীয় মহোদ্বয়ের নিকট আমার আকুল আবেদন ফু-ওয়াং ফুডের বোর্ড মিটিং এবং সকল কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে এক বছরের জন্য একজন প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে লক্ষ লক্ষ বিনিয়োগকারীদের জন্য উপযুক্ত ডিভিডেন্ড এবং স্বচ্ছতা আনয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করায় আপনার মার্জি হয়।