dse dorpotonদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতার স্বার্থে সরকারের নানামুখী উদ্যোগের পরও ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। ফলে সকলের মাঝে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাছাড়া বর্তমান বাজারে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের বিনিয়োগ অনুকূল পরিবেশ থাকলেও প্রায় প্রতিদিনই নিম্নমুখী হচ্ছে বাজার। সেই সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই কমছে বাজার মূলধন। বিষয়টি যেমন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ভাবিয়ে তুলছে, ঠিক তেমনি বাজার সংশ্লিষ্টদের কাছে এর প্রকৃত কারণ অজানাই রয়ে গেছে।

আর এ কারনে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে বাজারের ভারসাম্য ধরে রাখতে ইনভেষ্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশসহ (আইসিবি) কয়েকটি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ছাড়া বাকিগুলো পুরোপুরি নিস্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।

এছাড়া নির্বাচনী ইস্যু কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় দরপতনের মুখে পড়েছে পুঁজিবাজার। ফলে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, সামনের দিনগুলোতে আরো বড় ধরনের দরপতন হবে। এই শঙ্কায় শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছাড়ছেন বিনিয়োগকারীরা বলে জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তেমনি পোর্টফলিও ম্যানেজারসহ বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী বর্তমানে সাইডলাইনে থেকে বাজার পর্যবেক্ষণে বেশি ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

Page-01.eps-f (21)অতীত থেকে শিক্ষা নেয়া, বিনিয়োগকৃত অর্থের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না পাওয়ায় নতুন করে বিনিয়োগে আসছেন না বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী। এছাড়া রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত অনেকে মার্জিন লোন নিয়ে ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। পরিণতিতে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসছে না। তবে পুঁজিবাজারের হঠাৎ এ দরপতকে সরলভাবে নিতে পারছেন না দক্ষ বিনিয়োগকারীরা।

তাদের দাবি, পুঁজিবাজারের এ দরপতনের পেছনে আবারও কোনো কারসাজি চক্র সক্রিয়, নাকি নির্বাচন ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিএনপি জামায়াত পুঁজিবাজারকে অস্থিতিশীল করতে চায় তা দুই স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে খতিয়ে দেখতে হবে। তা না হলে বিনিয়োগকারীরা আবারও বড় লোকসানের মুখে পড়বেন।

নির্বাচনী সময়ে পুঁজিবাজারে নানা রাজনৈতিক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। একটার পর একটা ছোটখাটো ইস্যুও পুঁজিবাজারকে মারাত্মক প্রভাবিত করছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, সম্প্রতি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়, সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বই প্রকাশ, সর্বশেষ ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের গ্রেফতারসহ বিভিন্ন ছোটখাটো ইস্যুও পুঁজিবাজারকে প্রভাবিত করেছে। আবার নীতি-নির্ধারক বা স্টেকহোল্ডারদের ইতিবাচক খবরেও বাজার চাঙ্গাভাবে ফিরছে। এসব কারণে ক্ষণে ক্ষণে পুঁজিবাজারের রূপ বদলাচ্ছে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, কোনো কোনো ইস্যুতে বাজার নিম্নমুখী হচ্ছে, আবার কোনো ইস্যুতে বাজারে ফিরে আসছে চাঙা ভাব। প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে যখনই কোনো ইতিবাচক ঘোষণা আসছে, তখনই ঘুরে দাঁড়ানো চেষ্টা করছে পুঁজিবাজার। আবার যখনই কোন রাজনৈতিক নেতিবাচক আচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে, তখনই পুঁজিবাজার পতনে রূপ নিচ্ছে। অর্থাৎ রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে ক্ষণে ক্ষণে পুঁজিবাজারও রূপ বদলাচ্ছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজার সবচেয়ে বেশি স্পর্শকাতর জায়গা। এ কারণে সবকিছুরই প্রভাব এখানে অনিবার্য হয়ে দেখা দেয়। সম্প্রতি ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার রায় দেওয়া হয়। সেই রায়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়। এ ইস্যুতে নিম্নমুখী হয় পুঁজিবাজার। রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে, এই আশঙ্কায় অল্প দরে শেয়ার বিক্রি করে দেন বিনিয়োগকারীরা, যার জের ধরে বাজারে পতন শুরু হয়। কিন্তু এই পরিস্থিতি দীর্ঘ হয়নি। কোনো অস্থিরতা তৈরি না হওয়ায় আবারও বিনিয়োগে মনোযোগী হয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

এর আগে সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বই প্রকাশিত হলে পুঁজিবাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে এমন আশঙ্কায় শেয়ার বিক্রির চাপ বেড়ে যায়। ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় পুঁজিবাজারে ছন্দপতন দেখা যায়। অতিসম্প্রতি ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে গ্রেফতার করার খবরে পুঁজিবাজারে হঠাৎ নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে দুদিন পরেই উভয় বাজার আবার ঘুরে দাঁড়ায়। অধিকাংশ শেয়ারদর বৃদ্ধির পাশাপাশি সূচকের উত্থান দেখা যায়। ধীরে ধীরে বিনিয়োগকারীদের ভীতি কাটছ্।

অন্যদিকে বর্তমান সরকার আবারও ক্ষমতায় আসছে, এমন কোনো খবর পেলে মনের জোর পাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। তারা বিনিয়োগে মনোযোগী হচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী বা অর্থমন্ত্রীসহ অন্যদের মুখ থেকে যখন পুঁজিবাজার নিয়ে আশার বাণী শুনছেন, তখন তারা বাজারে ফিরে আসছেন। ফলে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়া থাকে। একযোগে বাড়ে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর ও সূচক। একই সঙ্গে বাড়ে বাজার মূলধনও।

এ বিষয়ে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারে রাজনৈতিক প্রভাব খুব একটা নেই। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন দিক থেকে যেসব বক্তব্য আসছে তাতে ভীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা, যার প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়ছে। তিনি বলেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির অবস্থা খারাপ নয়। এ পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজার নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু আছে বলে মনে করি না।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারে রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে, তবে সেটা খুব বেশি নয়। তাই বিনিয়োগকারীদের এটাকে ইস্যু বানানো উচিত নয়। বর্তমানে বাজারে মানি সাপ্লাই কম হচ্ছে, সে কারণে বাজার তার স্বরূপে ফিরতে পারছে না। মানি সাপ্লাই বাড়লে বাজার এমনিতেই ঘুরে দাঁড়াবে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, পুঁজিবাজারে রাজনৈতিক প্রভাব খুব একটা নেই, এ কথা সত্যি। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন। এখানকার অধিকাংশ বিনিয়োগকারী ভিতু প্রকৃতির। এ কারণে সামান্য কিছু হলেই তারা ভয় পেয়ে পান। বর্তমানে ঠিক সেই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তারা অকারণেই ভয় পাচ্ছেন।

ভয় পেয়ে ছোট-বড় অনেক বিনিয়োগকারীই শেয়ার বিক্রি করে নিজের পুঁজির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাচ্ছেন। তবে দেশের অর্থনীতির অগ্রগতি যেভাবে এগুচ্ছে, পুঁজিবাজার সেভাবে এগুচ্ছে না। তাই পুঁজিবাজার সামনে যাওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে।