hasina-kamalদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপ দাবিতে রাজি হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংলাপের সম্ভাব্য তারিখ ৩১ অক্টোবর। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দলের তালিকা দেওয়ার পর সময় ও স্থান চূড়ান্ত হবে।একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিলের আগে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।

খুব শিগগিরই সংলাপের স্থান ও সময় নির্ধারণ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে জানিয়ে দেয়া হবে। সোমবার বিকালে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।

তবে বিএনপি বারবার সংলাপের কথা বলে আসলেও সে দাবি নাকচ করে দিয়ে এবার ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে বসতে রাজি হয়েছে আওয়ামী লীগ। এই জোটের অন্যতম শরিক বিএনপি।

রোববার রাতে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট চিঠি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রীকে। সোমবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে সেই চিঠির জবাবে সংবাদ সম্মেলন করে সংলাপের কথা জানিয়ে দিল ক্ষমতাসীন দলটি।

সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের পূর্বক্ষণে কোনো চাপের মুখে এই সংলাপ হচ্ছে না এবং তারা কোনো পূর্বশর্তও দিচ্ছেন না। তফসিলের আগেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সঙ্গে সংলাপে বসবেন তারা।

তিনি বলেন, ‘গতকাল (রোববার) জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে ড. কামাল হোসেন স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দেয়া হয়েছিল। আমাদের দলের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ তা গ্রহণ করেছিলেন। চিঠিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা সংলাপ করতে চেয়েছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দলের পক্ষ থেকে সংলাপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

কাদের বলেন, আমরা কারও চাপের মুখে নতি স্বীকার করিনি। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা কাউকে সংলাপে ডাকিনি। তারা সংলাপ করতে চান, ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। সংলাপের দরজা সবার জন্য খোলা। আমরা ঐক্যফ্রন্টের প্রস্তাবে সম্মত।’

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতার বিষয়টি তুলে ধরে মন্ত্রী কাদের বলেন, শেখ হাসিনার দরজা কারো জন্য বন্ধ হয় নাই, বন্ধ থাকে না। এর মধ্য দিয়ে আপনারা বুঝতে পারছেন যে আমরা আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রস্তাবে সম্মত। আমরা সবাই এ ব্যাপারে নেত্রীর সঙ্গে একমত যে আমরা ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সঙ্গে সংলাপে বসব।’

দশম সংসদ নির্বাচনের আগে থেকেই সংলাপ চেয়ে আসছিল বিএনপি। সংলাপ না হওয়া শেষ পর্যন্ত সেই ভোটও বর্জন করে বিএনপি। একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দীর্ঘদিন থেকে সংলাপ চেয়ে আসছে ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি। তবে ক্ষমাতসীন আওয়ামী ও সরকারপ্রধান সংলাপে রাজি হলেও সেই সংলাপে সরাসরি বিএনপি অংশ নিতে পারছে না। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা সেখানে অংশ নেবেন।

আওয়ামী লীগকে নত করতে বিএনপি গত ১৩ অক্টোবর গণফোরাম সভাপতি কামালের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিয়ে ৭ দফা দাবি তুলে তা নিয়ে নতুন করে সংলাপের আহ্বান জানায়।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফায় খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে সংসদ ভেঙে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি রয়েছে, যা বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী সম্ভবপর নয় বলে আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আজকে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী) আমাদের নিয়ে অনির্ধারিত একটি বৈঠক করেন। উপস্থিত দলীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং সবার মতামত জানতে চান। অনির্ধারিত এ আলোচনায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে আওয়ামী লীগের সভাপতির দরজা কারো জন্য বন্ধ নয়।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে সংলাপে নেতৃত্ব দেবেন দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খুব শিগগিরই আমরা সময়, স্থান ও আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো তাদের জানিয়ে দেব। এটা অনতিবিলম্বে জানিয়ে দেব।’

এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সংলাপ তফসিলের আগেই হবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা মানা হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। আলোচনা যখন হবে, আলোচনার রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা করেন, সংলাপেই সিদ্ধান্ত হবে।’

আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমণ্ডির কার্যালয়ে ‘জরুরি’ এই সংবাদ সম্মেলনের শুরুতই কাদের বলেন, ‘আমি এই মুহূর্তে শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে সমগ্র দেশবাসীর জন্য ‘প্লিজেন্ট সারপ্রাইজ’ দেব, যা সারা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে স্বস্তির সুবাতাস বইয়ে দেবে।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, এস এম কামাল প্রমুখ।