GBBসাজিদ খান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: জিবিবি পাওয়ারের পরিচালনা পর্ষদ লভ্যাংশ নিয়ে হঠকারী সিদ্ধান্ত নি:স্ব হাজার হাজার বিনিয়োগকারীরা। কোম্পানির এ ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্তে বাজারের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছেন বিনিয়োগকারীরা। এর মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে কোম্পানিটি প্রতারণা করা হয়েছে। এ কোম্পানিটি ফেয়ার না। এছাড়া কোম্পানিটির ম্যানেজম্যান্টও নট ফেয়ার বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। কোম্পানিটির পর্ষদকে শাস্তির আওতায় এনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা দরকার বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

গত ২৯ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ এই সিদ্ধান্ত নেন। এর পর পরই ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক গ্রæপে জিবিবি পরিচালনা পর্ষদ সদস্যদের কঠোর ভাষায় সমালোচনা করতে থাকেন। এবং পরিচালকদের শাস্তির দাবী জানিয়েছেন। জিবিবি পরিচালনা পর্ষদ গত ২৯ অক্টোবর শেয়ারহোল্ডারদের কোন লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কোম্পানিটির লভ্যাংশ প্রদানের সক্ষমতা থাকা সত্তে¡ও পর্ষদ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তবে সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ০.৯৪ টাকা। যা এর আগের বছর একই সময়ে ছিল ১.১০ টাকা (ধফলঁংঃবফ)। এছাড়া শেয়ার প্রতি কার্যকরী নগদ প্রবাহের পরিমাণ (এনওসিএফপিএস) হয়েছে ০.০১ টাকা ঋণাতœক আর শেয়ার প্রতি প্রকৃত সম্পদ মূল্য (এনএভি) হয়েছে ১৯.৫৪ টাকা। যা পুরো শেয়ারবাজারে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে। যে সিদ্ধান্ত শেয়ারবাজারে পুরো জ্বালানী খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এর আগেও একই ঘটনা ঘটিয়ে আলোচনায় আসে ইভিন্স টেক্সটাইল।

Page-01.eps-fএ প্রসঙ্গে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, ক্যাপিটাল গেইন ও পে আউটের জন্য বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে। কিন্তু একটি কোম্পানি মুনাফা সত্তে¡ও লভ্যাংশ না দেওয়া হঠকারী সিদ্ধান্ত। বিনিয়োগকারীরা চায় কোম্পানির গ্রোথ ও পে আউট।

তিনি বলেন, জিবিবি পাওয়ার কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে না আসতে লোকসান দেখিয়ে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এখানে কি কোন জবাবদিহিতা নেই? তাদের এমন সিদ্ধান্তে শেয়ারটির দর পড়ে গেছে।

এতে হাজার হাজার বিনিয়োগকারী ক্ষতির কবলে পড়েছে। কিন্তু উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি। তারা কম দামে আরও শেয়ার কিনে নেবে। দেখা যাবে পরবর্তী বছরে বা অন্তবর্তীকালীন লভ্যাংশ দিয়ে শেয়ারটি বেশি দামে বিক্রয় করবে। এই যদি প্রবণতা হয়, তাহলে আর যাই হোক সুস্থ ক্যাপিটাল মার্কেট হতে পারে না। এটাই আমাদের দূর্ভাগ্য।

তিনি আরও বলেন, অনেক কোম্পানির নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার সক্ষমতা থাকলেও বোনাস দেয়। তারা এক্ষেত্রে ব্যবসায় সম্প্রসারণসহ নানা ধরনের যুক্তি দেখায়। এ নিয়ে তাদের বিশাল পরিকল্পনার কথা বলা হয়। কিন্তু বাস্তবে কিছুই না। এটি হল প্রতারণা। তাই নগদ লভ্যাংশ না দিলে, কোম্পানিকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে না রাখার জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে অনুরোধ করেন তিনি।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি মোস্তাক আহমেদ সাদেক বলেন, জিবিবি পাওয়ারের পর্ষদ ‘নো ডিভিডেন্ড’ এর জন্য শাস্তি দেওয়া দরকার। একইসঙ্গে তারা কেনো খামখেয়ালি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার ব্যাখ্যা দেওয়া দরকার। যা মন চেয়েছে, তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে শেয়ারহোল্ডাররা। তাদের এমন সিদ্ধান্তে শেয়ারটির দর প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। তিনি বলেন, লভ্যাংশ নিয়ে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা উচিত। যাতে পরিচালকেরা লভ্যাংশ নিয়ে খামখেয়ালি সিদ্ধান্ত নিতে না পারে।

অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী সুজানুর রহমান বলেন, জিবিবি পাওয়ার পর্ষদ ২০১২ সাল থেকে ধারাবাহিক ডিভিডেন্ড দিয়ে আসলেও হঠাৎ নো ডিভিডেন্ড কোন উদ্দেশ্যমুলক কিনা তা তদন্ত করে দেখা উচিত। কারন নো ডিভিডেন্ডে বিনিয়োগকারীরা প্রতারিত হয়েছে।

তিনি বলেন, লভ্যাংশ না দিয়ে পরিচালকদের কারসাজি শেয়ারবাজারে বিদ্যমান। তারা লভ্যাংশ না দিয়ে শেয়ার দর ফেলে দেয়। পরে নিজেরা শেয়ার সংগ্রহ করে। এবং পরবর্তী বছরে লভ্যাংশ দিয়ে শেয়ার দর বাড়িয়ে বিক্রয় করে দেয়। এক্ষেত্রে বিএসইসির দায়বদ্ধতা আছে। তাদের কাজ হলো শেয়ারবাজারকে সুস্থ রাখা এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষন করা।