garmentsদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: তৈরি পোশাক রপ্তানিতে স্মরণকালের প্রবৃদ্ধি হয়েছে জুলাই-অক্টোবর মাসে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর চার মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।

এ সময়ে ১০ দশমিক ১৬৫ বিলিয়ন ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রপ্তানি হয়েছে ১১ দশমিক ৩৩৩ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক। তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) তথ্য মতে, স্বাভাবিকভাবে আগে কখনো রপ্তানিতে এমন প্রবৃদ্ধি হয়নি। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ওপর বিদেশি ক্রেতাদের “কনফিডেন্ট” বৃদ্ধির কারণে রপ্তানি বেড়েছে বলে মনে করেন বিজিএমইএ এর সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে তা কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের নিরাপত্তা সৃষ্টি, কারখানার মেশিনপত্রের উচ্চায়ন, নতুন বাজার সৃষ্টিতে সরকারের প্রণোদনা ২ থেকে ৪ শতাংশ নির্ধারণ করা, উচ্চমূল্যের পোশাক ও পোশাকের বহুমুখী করা এবং সবর্শেষ চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে আমেরিকায় তৈরি পোশাকের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে এ ধরনের অগ্রগতি হয়েছে।

এই উদ্যোক্তার মতে, দেশে-বিদেশে স্বাভাবিক অবস্থায় এর আগে কখনো রপ্তানিতে এ ধরনের প্রবৃদ্ধি হয়নি। ২০১১-১২ সালের দিকে কটনের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে একবার এমন প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। তবে এবার পরিস্থিতি স্বাভাবিকের পাশাপাশি তৈরি পোশাক শিল্পের উন্নয়ন হওয়ার কারণে একটি টেকসই রপ্তানি কার্যক্রম সম্পাদন হচ্ছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মোট রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩৯ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে শুধু তৈরি পোশাক রপ্তানিতে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩২ দশমিক ৬৮৯ বিলিয়ন ডলারের। অর্থাৎ মোট রপ্তানির প্রায় ৮৩ শতাংশ তৈরি পোশাক। বাকি ১৭ শতাংশ পাট, হিমায়িত চিংড়ি, কৃষিজাত পণ্যসহ অন্যান্য পণ্য।

জুলাই-অক্টোবর চার মাসে রপ্তানির কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ১২৭ বিলিয়ন ডলারের। এর মধ্যে অর্জিত হয়েছে ১৩ দশমিক ৬৫১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। এর মধ্যে তৈরি পোশাক রয়েছে ১১ দশমিক ৩৩৩ বিলিয়ন ডলারের।

সাম্প্রতিক সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে নিট তৈরি পোশাক বেশি রপ্তানি হচ্ছিল। সে তুলনায় নেতিবাচক ধারা সূচিত হচ্ছিল ওভেন তৈরি পোশাকে। অক্টোবর শেষে দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র। চার মাসে ওভেন উপখাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং নিট তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ।

সোনালি আঁশ খ্যাত এক সময়ের প্রধান রপ্তানি পণ্য পাট রপ্তানিতে বড় ধরনের ধস নেমেছে। চার মাসে ৩৩৭ মিলিয়ন ডলারের কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রপ্তানি হয়েছে ২৮৮ দশমিক ৮৫ মিলিয়ন ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ২৮ শতাংশ কম পাট ও পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি কম হয়েছে। একই সঙ্গে কমেছে দেশের আরেক প্রধান রপ্তানি পণ্য চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য।

জুলাই-অক্টোবর চার মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৪৯ দশমিক ৫১ মিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রপ্তানি হয়েছে ৩৪৫ মিলিয়ন ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। গত বছরের চেয়ে কমেছে ১৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

দেশের এই অন্যতম প্রধান ও সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাত চামড়া শিল্পের রপ্তানি কমে যাওয়ার বিষয়টি শঙ্কার সৃষ্টি করেছে বলে মনে করছেন চামড়া শিল্প উদ্যোক্তারা। তাদের মতে, পুরান ঢাকা থেকে সাভারে চামড়া শিল্প স্থানান্তরের সময় অনেক কারখানা রুগ্ন হয়ে যায়। পরবর্তীতে এ শিল্প আর দাঁড়াতে পারেনি। এর প্রভাব পড়েছে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে।

চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের অন্যতম নেতিবাচক প্রভাব চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি কমেছে বলে মনে করছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। তাদের মতে, চীন বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য আমদানিকারক অন্যতম দেশ।

চীনের রপ্তানি পণ্যে আমেরিকার বাজারে বাধার সম্মুখীন হওয়ার কারণে তারা বাংলাদেশ থেকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশের রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।