DSEসাজিদ খান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশের পুঁজিবাজার মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারছে না। টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীদের মুল পুঁজি দিনের পর দিন নি:স্ব হতে চলছে। এমন অবস্থা চলছে যে পুঁজিবাজার অবিভাবকহীন। বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন আর কতদিন এ ভাবে চলবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজ কি? ডিএসই নিরব কেন? এ রকম নানা প্রশ্নের বেড়াজালে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা।

অন্যদিকে পুঁজিবাজারে গতি ফেরাতে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) বন্ডের টাকা বিনিয়োগ শুরু হলেও বাজারে গতি ফিরছে না। বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন তা হলে আইসিবি কিসের বিনিয়োগ করে। আর আইসিবি বিনিয়োগ করলে বাজার দরপতনের কারন কি?

এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে পুঁজিবাজারকে অস্থিতিশীল করতে একটি চক্র কাজ করছে মন্তব্য করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. অধ্যাপক এম খায়রুল হোসেন। তিনি বলেন, নির্বাচন ইস্যুকে কেন্দ্র করে নিয়ম বর্হিভূত কর্মকান্ডের মাধ্যমে স্থিতিশীল বাজারকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চলছে। আমরা সার্ভিলেন্সের মাধ্যমে সেগুলো চিহ্নিত করে নজরে রাখছি। পুঁজিবাজারকে কোনোক্রমে অস্থিতিশীল হতে দেবো না।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীকে কেউ মুনাফা করিয়ে দেবে না। কারও ক্ষতি হলেও তা কেউ লাঘব করে দেবে না। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীকেই তার পুঁজি সংরক্ষণের দায়িত্ব পালন করতে হবে। যার জন্য বিনিয়োগকারীদের জ্ঞানের বিকল্প নেই।

Page-01.eps-f (1)সূত্র বলছে, একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে বন্ড বিক্রির টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। শেয়ার কিনে যাতে আইসিবি লোকসানে না পড়ে সে বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আইসিবির কাছে ইতোমধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার রয়েছে, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সেই প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

তবে পতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না পুঁজিবাজার। কারো কথার কোন ফল দেখতে পারছে না বিনিয়োগকারীরা। ফলে পুঁজি শেষ হতে চলছেন। বর্তমানে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীদের মুল পুঁজির ৩৫ শতাংশ হারিয়েছে। আর কিছুদিন চলতে থাকলে পুঁজিহারিয়ে নি:স্ব হয়ে যাবে বিনিয়োগকারীরা। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীরা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করছেন।

বর্তমান বাজার দরপতনের পেছনের কারন কি এ নিয়ে দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসছে নানা তথ্য। আর ধারাবাহিক পতনে চার কাহন বিশ্লেষণ করেছেন বাজার বিশ্লেষকরা। অন্যদিকে নির্বাচনী সময় আরেক দফা পতন ঘটিয়ে সরকারকে বিব্রত করার অপচেষ্টা চলছে বলেও মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও তারল্য সংকটে দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজারে মন্দাভাব বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে বাজারে আইসিবির বড় অঙ্কের বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত খুবই ভালো উদ্যোগ। তবে আইসিবিকে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। বাজারে তারল্য বাড়ানোর পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানোর প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে আইসিবি কতটুকু পারে তা দেখার বিষয়।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট একটি অংশ বলছে, পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের পেছনে মুলত কোন কারন নেই। তারপর একটি চক্র সরকারকে নিবার্চনের সময় বিপদে ফেলতে নানা গুজব ছড়িয়ে বাজারকে অস্থিতিশীল করছে।

একাধিক বিনিয়োগকারীরা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, যেখানে পুঁজিবাজারের নীতি নির্ধারকরা বাজার ভাল করার জন্য আপ্রান চেষ্ঠা করছেন। সেখানে দরপতনের কারন কি? পুঁজিবাজারে যে দরপতন চলছে তা পরিকল্পিত। এর পেছনে ডিএসইর প্রভাবশালী ব্রোকারেজ হাউসের পাশাপাশি ছোটরাও রয়েছে। যাদের সঙ্গে তাল মেলাচ্ছে কিছু মার্চেন্ট ব্যাংক।

মহিউদ্দিন স্বপন নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, ব্রোকারেজ হাউসের মালিকরা একজোট হয়েছেন। অধিকাংশ হাউস শেয়ার ক্রয়-বিক্রিয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দিয়েছে। নানা কৌশলে পুঁজিবাজার নিয়ে গুজব ছুড়িয়ে অস্থিতিশীল করছেন। এ অস্থিতিশীলতার পেছনে কারা দায়ী তাদেরকে চিহ্রিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। গত এক মাস ধরে তো বাজার পড়েই যাচ্ছে, এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে শেয়ার কেনার সাহস দেখাবে।

মো. মিলন হোসেন নামের আর এক বিনিয়োগকারী বলেন, টানা দরপতনে মূলধন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। বাজার তো বেশ ভালোই ছিল। হঠাৎ এমন দরপতনের কোনো কারণ দেখি না। পুঁজিবাজারে একটি চক্র যারা বিএনপি জামায়াতের সাথে আতাত করে ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ কর্মকতাদের দিয়ে পরিকল্পতিভাবে এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে।

ডিএসইর সাবেক পরিচালক ও মর্ডান সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খুজিস্তা নূর ই নাহারিন দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, বর্তমান পুঁজিবাজার দরপতন হওয়ার মতো কোন কারন দেখছি না। তারপরও টানা দরপতন হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে বিনিয়োগকারী শুন্য হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্যপরিষদের সভাপতি মিজানুর রশিদ চৌধুরী বলেন, গুজবের অস্থিরতায় পুঁজিবাজারে দরপতনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ বা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। কোনো তথ্য শুনলেই শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন তারা। কারণ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় প্রত্যেক কার্যদিবসেই শেয়ার বিক্রয় করছে। টালমাতাল বাজার পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা নিঃস্ব হতে চলছে।