garmentsসাজিদ খান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: শিল্পখাতে তৈরি পোশাক শিল্প একটি ইতিহাস। বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের অধিক আসে শুধু তৈরি পোশাক শিল্প খাত থেকে। যার অংশীধার হিসাবে কাজ করছে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ৫০টি কোম্পানি। সম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের প্রতিযোগীদেশ চীনে শ্রম মূল্য বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বের বড় বড় ক্রেতাদের পাশাপাশি উদ্যোক্তারাও বাংলাদেশের বাজারে নতুন করে আসছে।

তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, বিশ্ব বাজারের পোশাক খাতের মূল্য তেমন না বাড়লেও চীনে শ্রম মূল্য বেড়েছে কয়েক গুন। যার ফলশ্রুতিতে ব্যবসায় টিকে থাকতে হলে উদ্যোক্তাদের নতুন ক্ষেত্র খুজে বের করতে হবে। যার তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ।

সম্প্রতি পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সায়হাম গ্রুপের সায়হাম টেক্সটাইল ও সায়হাম কটনের ৩০ শতাংশ শেয়ার ক্রয়ে আগ্রহী দেখিয়েছে একটি চীনা প্রতিষ্ঠান। এর ধারাবাহিকতায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর চীনা কোম্পানিটির প্রতিনিধিদের সাথে সায়হাম গ্রুপের কর্তাব্যক্তিদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

জানা যায়, জামার্নি মালিকানাধীন চীনা প্রতিষ্ঠানটির উদ্যেক্তার অতিরিক্ত মজুরীর কারণে ব্যবসায়িক মুনাফা কমায় বাংলাদেশে বিনিয়োগ স্থানান্তরের মানষিকতা থেকেই সায়হাম টেক্সটাইল ও সায়হাম কটনের স্ট্রেটেজিক বিসনেজ পার্টনা হতে আগ্রহী প্রকাশ করেছে। এমন আগ্রহ থেকে সম্প্রতি সাভারে আরো একটি কারখানা পরির্দশণ করেছে চীনা একটি কোম্পানি।

দেশীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সুবিধার কারণ হলো তরুণ শ্রমশক্তি ও স্বল্প মজুরি। আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে চলতে যদিও উৎপাদন খরচ কিছুটা বেড়ে গেছে। তার পরেও বাংলাদেশর স্বল্প মজুরি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। যার কারনে বাংলাদেশ ব্যবসায়ের আগ্রহ দেখাচ্ছে চীনাসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের উদ্যেক্তারা।

তারা বলেন, চীনে শ্রম ব্যয় বেড়ে যাওয়ার পর বিশ্ব বাজারে তাদের ক্রেতাও কমেছে। কিন্তু পক্ষান্তরে বাংলাদেশের নতুন বাজার সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে বস্ত্র খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

ফরচুন গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার এম আবু তাহের বলেন, ‘কম খরচে পণ্য তৈরিতে চীন অবস্থান হারানোর সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের সামনে সম্ভাবনা দুয়ার খুলে যাচ্ছে। বিশ্ববাজার দখলের জন্য বাংলাদেশের সামনে এখন অপার সুযোগ। এজন্য দক্ষ শ্রমশক্তি প্রয়োজন। চীনে শ্রমমূল্য বেড়ে যাচ্ছে। তাই বিশ্ববাজারে পণ্য সরবরাহকারীদের কাছে আমরা এখন বিভিন্ন পণ্য তুলে দিতে পারি।’

আবু তাহের আরও বলেন, ‘চীনের তুলনায় বাংলাদেশে সস্তায় শ্রমিক পাওয়া যায় কিন্তু শ্রমিকদের উৎপাদন ক্ষমতাও তেমনই। বিশ্ববাজারে চীনের জায়গা নেওয়ার চেষ্টা করার আগে শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নজর দিতে হবে আমাদের।’

এদিকে বস্ত্র খাতের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের হঠাৎ বাড়তি আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। বিনিয়োগকারীরা নতুন করে এ খাতের শেয়ারের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বস্ত্র খাতের শেয়ারের দর তলানিতে ছিল। তবে প্রথম প্রান্তিকে ৫৩ কোম্পানির মধ্যে ৩০ কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) বেড়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে (ডিএসই) এ তথ্য জানা গেছে। বর্তমানে বস্ত্রখাতে কোম্পানির সংখ্যা ৫৩টি। এর মধ্যে সর্বশেষ ৪৭টি কোম্পানি তাদের প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। অবশিষ্ট ৭ টি ক্ম্পোানি এখনো প্রথম প্রান্তিক প্রকাশ করেনি।

৪৭ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা দেখা গেছে, ৩০টি কোম্পানির মুনাফা বেড়েছে, কমেছে ৯টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১টির। তবে বছরের ব্যবধানে লোকসানের কবলে পড়েছে ৬ কোম্পানি। যে ৩০ কোম্পানির আয় বেড়েছে, সেগুলো হল: স্টাইলক্রাপ্ট, আমান কটন, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, আলিফ ম্যানু. কোম্পানি, ডেল্টা স্পিনার্স, ড্রাগন সোয়েটার, এনভয় টেক্সটাইল, ইভিন্স টেক্সটাইল, জেনারেশন নেক্সট, এইচআর টেক্সটাইল, হা-ওয়েল টেক্সটাইল,

কাট্টালি টেক্সটাইল, ম্যাকসন্স স্পিনিং, মালেক স্পিনিং, মতিন স্পিনিং, মেট্রো স্পিনিং, এমএল ডাইং, নূরানী ডাইং, পেসিফিক ডেনিমস, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, কুইন সাউথ টেক্সটাইল, রহিম টেক্সটাইল, রিজেন্ট টেক্সটাইল, আরএন স্পিনিং, সায়হাম কটন, সায়হাম টেক্সটাইল, শাশা ডেনিমস, শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, সিমটেক্স, স্কয়ার টেক্সটাইল, ভিএসএফ থ্রেড। তবে প্রাইম টেক্সটাইলের ইপিএস অপরিবর্তিত রয়েছে।

যে ৯ কোম্পানির আয় কমছে, সেগুলো হল: আরগন ডেনিম, দেশ গার্মেন্টস, ফারইষ্ট নিটিং, হামিদ ফেব্রিক্স, আরএন স্পিনিং, সাফকো স্পিনিং, তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ, জাহিন স্পিনিং এবং জাহিন টেক্সটাইল। অন্যদিকে যে ৬ কোম্পানি লোকসানের কবলে পড়েছে, সেগুলো হল- আলহাজ্ব টেক্সটাইল, অলটেক্স, আনলিমা ইয়ার্ন, দুলামিয়া কটন, মোজাফ্ফর হোসেন স্পিনিং মিলস, সোনারগাঁও টেক্সটাইল।