FORGAIN INVESTদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ২০ কোম্পানি থেকে বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছেন বিদেশী বিনিয়োগকারীরা। হঠাৎ করে এ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন তারা। তবে কি কারনে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন এ বিনিয়োগকারীদের কৌতুহলের শেষ নেই। তবে নানা কারনে এ খাতের উপর আগ্রহ হারিয়েছে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা।

প্রথমত, আস্থা ও তারল্য সংকটে পুঁজিবাজারে চলছে দরপতন। এই দরপতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে ‘পুঁজি হারানোর’ শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে টাকা তুলে নিচ্ছেন।

এদিকে জাতীয় নির্বাচন সামনে থাকায় এবং ডলারের দর বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের পুঁজিবাজার থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছেন। গত অক্টোবরে পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বড় অঙ্কের শেয়ার বিক্রি করেছেন। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে তারা ২৮৩ কোটি টাকা মূল্যের শেয়ার কিনেছেন। আর ৪৮৪ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছেন। অর্থাৎ গত মাসে নিট ২০১ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছেন তারা।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ বা সিএসইর মাধ্যমে গত মাসে সাড়ে ১০ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা করেছেন বিদেশিরা। তবে শেয়ার ক্রয় ও বিক্রয়ের পৃথক তথ্য জানাতে পারেনি স্টক এক্সচেঞ্জটি। আগের মাসে সেপ্টেম্বরে এ বাজারের মাধ্যমে ২২ কোটি ১৫ লাখ টাকা মূল্যের শেয়ার কেনাবেচা করেন বিদেশিরা।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, টানা কয়েক বছর ক্রমাগত বিনিয়োগ বাড়ানোর পর গত ফেব্রুয়ারি থেকে বিদেশিরা বিনিয়োগ কমাচ্ছেন। বিদেশিদের বিনিয়োগ প্রত্যাহার শুধু বাংলাদেশ থেকেই যে হচ্ছে, তা নয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এশিয়া প্যাসিফিক এবং দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন বাজার থেকে পশ্চিমা দেশের বড় বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের কিছু অংশ তুলে নিচ্ছেন।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের শুরু থেকে গত অক্টোবর পর্যন্ত বছরের প্রথম ১০ মাসের মধ্যে শুধু জানুয়ারি, মার্চ ও সেপ্টেম্বরে টাকার অঙ্কে বিক্রির তুলনায় ক্রয় বেশি ছিল। বাকি সাত মাসে বেশি বিক্রি করেছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা।

প্রথম ১০ মাসে ডিএসইর মাধ্যমে তারা মোট ৩ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা মূল্যের শেয়ার কিনেছেন। বিপরীতে বিক্রি করেছেন ৪ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকার শেয়ার। অর্থাৎ কেনার তুলনায় মোট ৪৬৯ কোটি টাকার শেয়ার বেশি বিক্রি করেছেন বিদেশিরা।

২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত টানা চার বছরে ২০ হাজার ৬৯ কোটি টাকা মূল্যের শেয়ার কেনেন বিদেশিরা। বিপরীতে বিক্রি করেন ১৪ হাজার ২১৮ কোটি টাকা মূল্যের শেয়ার। ওই চার বছরে নিট পাঁচ হাজার ৮৫১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন। ওই চার বছরে বেশিরভাগ মাসে তাদের ক্রয় বেশি ছিল।

অক্টোবর মাসে বিদেশিরা মোট ৭৬৭ কোটি ১০ লাখ টাকা মূল্যের শেয়ার কেনাবেচা করেছেন, যা আগস্টের তুলনায় ৩০৭ কোটি টাকা বেশি। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে বিদেশিদের শেয়ার ধারণে হার পরিবর্তন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত মাসে ৪৪ কোম্পানি থেকে বিদেশিদের ধারণ করা শেয়ারের পরিমাণ কমেছে। বিপরীতে বেড়েছে ২৩টিতে।

অক্টোবরে বিদেশিরা যেসব কোম্পানি থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করেছেন, তার মধ্যে শীর্ষে ছিল শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ। এর পরের অবস্থানে ছিল অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, বিএসআরএম লিমিটেড, পিপলস লিজিং, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, বেক্সিমকো ফার্মা, ওয়ান ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, বেক্সিমকো লিমিটেড, ফনিক্স ফাইন্যান্স, ব্র্যাক ব্যাংক, সিঙ্গার বাংলাদেশ, পাওয়ার গ্রিড, স্কয়ার ফার্মা, ইউনিক হোটেল, দি সিটি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক এবং তিতাস গ্যাস।

তথ্যমতে, শেফার্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ হতে বিদেশিদের বিনিয়োগ কমে দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ০৯ শতাংশে, যা গত সেপ্টেম্বরে ছিল ২৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ। অর্থাৎ গত মাসেই এ কোম্পানি থেকে বিদেশিদের শেয়ার কমেছে মোটের প্রায় পৌনে ২ শতাংশ। এ ছাড়া অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজে বিদেশিদের শেয়ার ৪১ দশমিক ৩৪ শতাংশে নেমেছে, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ৪২ দশমিক ৯১ শতাংশ। বিএসআরএম লিমিটেডে বিদেশিদের অংশ কমে ১৯ দশমিক ৩৭ শতাংশে নেমেছে, সেপ্টেম্বরে যা ছিল ১৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

এদিকে, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে বিদেশিদের শেয়ার ধারণের পরিমাণ বেড়েছে শূন্য দশমিক ৬৪ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বরে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটিতে বিদেশিদের শেয়ার ছিল মোটের শূন্য দশমিক ৪৬ শতাংশ, যা অক্টোবরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ১০ শতাংশে। পরের অবস্থানে থাকা আমরা টেকনোলজিসে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ বেড়ে মোটের শূন্য দশমিক ৯৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

আরও যেসব কোম্পানিতে বিদেশিদের শেয়ার বেড়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো- স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, জিবিবি পাওয়ার, এপেক্স স্পিনিং, সাউথইস্ট ব্যাংক, বিডি থাই, পদ্মা অয়েল, প্রাইম ব্যাংক, ইফাদ অটোস ও এমজেএল।