dse dorpotonআবদুর রাজ্জাক, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানিতেই সুশাসনের অভাব রয়েছে। অনেক কোম্পানীতে রয়েছে পরিবারতন্ত্রের প্রচলন। ফলে কোম্পানিগুলো আশানুরূপ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে না। এতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তা ছাড়া কোম্পানিগুলোতে সুশাসন থাকলে তাদের শেয়ার কিনতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশি থাকত।

ফলে বাজারও ইতিবাচক হতো। সুশাসন না থাকায় অনেকেই কোম্পানিগুলোর শেয়ারে বিনিয়োগ করতে চান না। তাই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের পুরোপুরি আস্থা ফিরিয়ে আনতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। অডিট রিপোর্টে সৃষ্টি করতে হবে বিশ্বাসযোগ্যতা।

‘তালিকাভুক্ত কোম্পানির সুশাসন: বর্তমান অবস্থা ও করণীয়’ কি এ বিষয় আলাপকালে বিশিষ্টজনরা এমন মন্তব্য করেন। তবে করপোরেট গভর্নেন্সের অভাবে অনেক কোম্পানি ও বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জর (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কেএএম মাজেদুর রহমান।

মাজেদুর রহমান বলেন, বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণের কারণে শেয়ারের বর্ধিত চাহিদা মেটাতে প্রতিবছর নতুন নতুন কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হচ্ছে। কিন্তু তালিকাভুক্ত এসব কোম্পানিতে করপোরেট গভর্নেন্সের অভাব রয়েছে। এতে করে অনেক কোম্পানিই ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে।

প্রক্ষান্তরে বিনিয়োগকারীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুরোপুরি ফিরিয়ে আনার জন্য তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। আর এজন্য ডিএসই পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে এক হয়ে কাজ করছে।

Page-01 (11)এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আর্থিক খাতে আইন লঙ্ঘনকারীদের শাস্তি খুবই কম হয়। অনেক ক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা লক্ষ্য করা যায়। এটি কোম্পানির সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বড় প্রতিবন্ধকতা। কোম্পানির মধ্যে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বিনিয়োগকারীরা বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এজন্য তাদেরকে সক্রিয় হতে হবে। তবে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।

মির্জা আজিজুল ইসলাম আরো বলেন, আমাদের দেশে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর আইনে অনেক অসামঞ্জস্য রয়েছে। সেগুলোকে আলোচনার মধ্য দিয়ে দূর করতে হবে। তাছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে প্রতিদ্ব›দ্বী মনোভাব রয়েছে। কোন সংস্থার ক্ষমতা কার চেয়ে বেশি, তা জাহির করার একটা প্রবণতা আছে। এ রকম পরিস্থিতি পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক নয়।

তাই এমন পরিস্থিতি যেন না হয় সেদিকে সরকারকে নজর দিতে হবে। সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে কোম্পানির প্রবৃদ্ধি ও ব্র্যান্ডিংয়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে উল্লেখ করে ড. মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, কোম্পানির সুশাসন একদিনে প্রতিষ্ঠা হয় না। সুশাসন প্রতিষ্ঠা হতে সময় লাগবে। কিছু কোম্পানিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে। তবে সব কোম্পানিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা আনতে হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কমিশনার ড. স্বপন কুমার বালা বলেন, নতুন করপোরেট আইনে পরিবর্তন আসছে। কোম্পানির সুশাসন বিষয়ে যেসব ঘাটতি রয়েছে তা অনেকাংশ দূর হয়ে যাবে। কোম্পানির সুশাসনও সুদৃঢ় হবে। কোম্পানি ও তার ম্যানেজমেন্ট আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে যাতে কোনো সমস্যা করতে না পারে-নতুন আইনে সে বিষয়গুলো প্রাধান্য পাচ্ছে। তিনি বলেন, কোম্পানির স্বতন্ত্র পরিচালক নির্বাচনের ক্ষেত্রে নানা পদ্ধতিতে নিজেদের লোক রাখা হয়। নতুন করপোরেট আইনে সেই সুযোগ থাকবে না।

এএফসি ক্যাপিটাল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাহবুব এইচ মজুমদার বলেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানির আর্থিক হিসাবে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কম। সুশাসন না থাকায় কোম্পানিগুলোর প্রবৃদ্ধিও আশানুরূপ ভালো হচ্ছে না। সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কোম্পানিগুলোর আর্থিক হিসাবায়নে বিশ্বাসযোগ্যতা আসলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ আরো বাড়বে।