icb-logoদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বড় পুঁজির কোম্পানিতে রাষ্ট্রায়াত্ব প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)-এর বড় লোকসান রয়েছে। তবে স্বল্পমূলধনি ও ‘জেড’ ক্যাটেগরির ১১ কোম্পানির শেয়ারে উল্লেখযোগ্য মুনাফা করেছে বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানটি।

মূলত দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের কারণেই এবার আজিজ পাইপস, কে অ্যান্ড কিউ, জেমিনি সি ফুড, বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং ইলেকট্রডস, রহিম টেক্সটাইল, আরামিট লিমিটেড, হাক্কানী পাল্প অ্যান্ড পেপার ও ওয়াটা কেমিক্যালসের মতো ‘বিতর্কে থাকা’ কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগের সুফল পেয়েছে আইসিবি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুনাফার হার জেমিনি সি ফুডে। আইসিবি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, আইসিবি তার প্রধান কার্যালয়ের পোর্টফোলিও’র মাধ্যমে স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক লিমিটেডের ৩৬ হাজার ৫২৭টি শেয়ার কিনেছে। প্রতিটি শেয়ার গড়ে ৪৬ টাকা ৩২ পয়সা হিসেবে প্রায় ১৬ লাখ ৯২ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছে আইসিবি। এর বিপরীতে গড় বাজারমূল্য ১৫০ টাকা হিসেবে ওই শেয়ারের মোট মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৪ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। এ হিসেবে স্বল্পমূলধনি স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকের শেয়ার কিনে আইসিবি প্রায় ৩৭ লাখ ৮৭ হাজার মুনাফায় রয়েছে, যা বিনিয়োগমূল্যের তিনগুণেরও বেশি।

জানা যায়, প্রকৌশল খাতের কোম্পানি আজিজ পাইপসের প্রায় ৭৪ হাজার ৪৪৭টি শেয়ার প্রতিটি গড়ে ৪২ টাকা ৬০ পয়সায় কিনেছে আইসিবি। এ হিসেবে ক্রয়মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। আজিজ পাইপসের প্রতিটি শেয়ারের দর ১৫৭ টাকায় দাঁড়ানোর কারণে ওর বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় এক কোটি ১৬ লাখ টাকা। নতুন করে বিনিয়োগের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখা ওই কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে সাড়ে তিনগুণেরও বেশি মুনাফায় রয়েছে আইসিবি।

প্রকৌশল খাতের স্বল্পমূলধনি অপর কোম্পানি কে অ্যান্ড কিউ (বাংলাদেশ) লিমিটেডের এক লাখ ৭৯ হাজার শেয়ার কিনেছে আইসিবি। প্রতিটি শেয়ারের গড় ক্রয়মূল্য ৩১ টাকা ৪৬ পয়সা হিসাবে ওই শেয়ারে প্রায় ৫৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছে।

কোম্পানিটির শেয়ারদর ১৭৬ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ায় ওই শেয়ারের বর্তমান বাজারমূল্য তিন কোটি ১৬ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে। দুর্বল ভিত্তি, লভ্যাংশ না দেওয়া আর লোকসানের কারণে আলোচনায় থাকা কে অ্যান্ড কিউ’র শেয়ার কিনে আইসিবি এখন প্রায় আড়াই কোটি টাকা মুনাফায় আছে, যা ওই শেয়ারে আইসিবির বিনিয়োগমূল্যের চেয়ে প্রায় সাড়ে পাঁচগুণ বেশি।

এছাড়া, প্রকৌশল খাতের কোম্পানি বিডি ওয়েল্ডিংয়ের ৬১ লাখ ৯৭ হাজার শেয়ারে প্রায় চার কোটি ৭১ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে বর্তমানে প্রায় পৌনে পাঁচ কোটি টাকার মুনাফায় রয়েছে। লোকসানি বিডি ওয়েল্ডিংয়ের শেয়ার কিনেও প্রায় দ্বিগুণ মুনাফায় রয়েছে আইসিবি।

এদিকে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি জেমিনি সি ফুডের প্রায় ৯ হাজার শেয়ার প্রায় ১৮ হাজার টাকায় কেনা হয়েছে। প্রতিটি শেয়ারের গড় ক্রয়মূল্য এক টাকা ৯৮ পয়সা। বিদেশি কোম্পানির কাছে কারখানা-জমি ভাড়া দেওয়ার খবরে অস্বাভাবিক গতিতে বেড়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর সর্বশেষ ৪৫৫ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর জের ধরে আইসিবির হাতে থাকা শেয়ারের বাজারমূল্য প্রায় ৪১ লাখ ২৭ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে।

সে কারণেই জেমিনি সি ফুডের শেয়ারের সবচেয়ে বেশি প্রায় ২৩০ গুণ মুনাফায় রয়েছে আইসিবি। টাকার অঙ্কে মুনাফার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪১ লাখ ৯ হাজার টাকা। একইভাবে ন্যাশনাল টি’র প্রায় ১৯ লাখ ১৩ হাজার শেয়ার প্রায় ১২ কোটি ৬৩ লাখ টাকায় কিনে ১২ গুণ মুনাফায় রয়েছে আইসিবি।

ডিএসইতে ৬৬ টাকা ২৯ টাকায় কেনা প্রতিটি শেয়ারের বর্তমান বাজারদর ৭৮৬ টাকা। মাত্র ১২ কোটি ৬৮ লাখ টাকায় কেনা শেয়ারের বর্তমান বাজারমূল্য এখন ১৫০ কোটি টাকারও বেশি। তাই রাষ্ট্রায়ত্ত ন্যাশনাল টিও আইসিবির জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে। বস্ত্র খাতের কোম্পানি এপেক্স স্পিনিং অ্যান্ড নিটিংয়ের পাঁচ লাখ ১৮ হাজার শেয়ারে প্রায় চার কোটি ১৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে বর্তমানে প্রায় আড়াই কোটি টাকা মুনাফায় রয়েছে।

স্বল্পমূলধনি এপেক্স স্পিনিংয়ের শেয়ার কিনেও আইসিবি প্রায় আড়াই কোটি টাকা মুনাফায় রয়েছে। একই খাতের রহিম টেক্সটাইলের প্রায় সাড়ে চার হাজার শেয়ার আট হাজার ২৮৫ টাকায় কিনেছে আইসিবি। একেবারে তলানি থেকে উল্লম্ফনের জেরে ওই শেয়ারের বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪ লাখ ৬৩ হাজার টাকা।

ওই বিনিয়োগেও ১৭৭ গুণ বেশি মুনাফায় আছে আইসিবি। ওই আট কোম্পানি ছাড়াও আরামিট লিমিটেডের শেয়ারে চার কোটি ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে তিনগুণ বেশি মুনাফায় রয়েছে আইসিবি। একইভাবে হাক্কানী পাল্প অ্যান্ড পেপারের শেয়ারে দুই লাখ ২০ হাজার ৭০৫ বিনিয়োগ করে আইসিবি আটগুণেরও বেশি মুনাফায় রয়েছে।

অপর কোম্পানি ওয়াটা কেমিক্যালের শেয়ারে এক কোটি ৬০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ২৪ গুণেরও বেশি মুনাফায় রয়েছে আইসিবি। সর্বশেষ ওই শেয়ারের বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা।