DSEসাজিদ খান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: নির্বাচনী বছর পুঁজিবাজারকে ভালো রাখতে সরকার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। গত জানুয়ারিতে শুরু হওয়া দরপতন থেকে উত্তরণের পাশাপাশি বাজারের চলমান তারল্য ও আস্থার সংকট দূর করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যাতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের আগে নতুন করে পুঁজিবাজার অস্থিতিশীল না হয়। এ কারণে সরকারকে যাতে বিব্রত হতে না হয়। পাশাপাশি নির্বাচনের পর পুঁজিবাজার হবে চাঙ্গা এবং স্থিতিশীল বাড়বে লেনদেন এমনটাই মনে করছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা।

এদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যত না আদর্শিক আলোচনা হয়, তার চেয়ে বেশি হয় নির্বাচন ও প্রার্থী নিয়ে। কোন দল কত বিনিয়োগ করতে পারবে সেটাই মুখ্য আলোচনার বিষয়। আর অর্থ যেখানে আছে নির্বাচনে সেখানেই প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং পুঁজিবাজারে এর প্রভাব বেশি পড়ে। সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে অর্থনীতির চরিত্র নির্ভর করে নির্বাচনের ওপর।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন বলেছেন, ২০১৯ সাল পুঁজিবাজারের জন্য উল্লেখ করার মতো ভালো হবে। পুঁজিবাজার এখন স্থিতিশীল এবং উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এর পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান অর্থমন্ত্রীর। তার নির্দেশনায় স্টক এক্সচেঞ্জ ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন হয়েছে।

কারন পুঁজিবাজারে কারসাজির জন্য স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য ও ডিলারদেরকে ইঙ্গিত করা হতো। যা দূরীকরনে ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশনের মাধ্যমে স্টক এক্সচেঞ্জে অধিকাংশ স্বতন্ত্র পরিচালক রাখার বিধান করা হয়েছে।

ডিবিএর সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, সার্বিকভাবে পুঁজিবাজার ভালো না থাকলে ব্রোকারদেরও লাভ নেই। ফলে ডিবিএ শুধু ব্রোকারদের স্বার্থ সংরক্ষণে কাজ করবে না, বরং সামগ্রিকভাবে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে যা কিছু করা প্রয়োজন, তা-ই করবে। বাজারের আকার বাড়াতে হবে। শিগগির ছোট কোম্পানির জন্য স্মলক্যাপ বাজার হতে যাচ্ছে।

Page-01 (14)মূলধনী বাজারের পাশাপাশি ঋণবাজারও তৈরি করতে হবে। সুষ্ঠু প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরিতে মার্কেট মেকার থাকতে হবে। বড় ব্রোকারদের এমন ভূমিকায় আনতে কাজ করবে ডিবিএ। সবার কাছে শেয়ার বাজারকে গ্রহণযোগ্য করতে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তেমনি নির্বাচনের পর পুঁজিবাজার চাঙ্গা হবে এবং লেনদেন অনেক বাড়বে। এজন্য বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য্য ধারন করতে বলেন।

সেন্টার ফর এনআরবির চেয়ারপার্সন এমএস সেকিল চৌধুরী বলেন, এখন দেশের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে নির্বাচন। নিবার্চনকে কেন্দ্র করে যত না আদর্শিক আলোচনা হয়, তার চেয়ে বেশি আলোচনা হয় নির্বাচন ও প্রার্থী নিয়ে।

কোন প্রার্থী দলে কত বিনিয়োগ করতে পারবে সেটাই মুখ্য আলোচনার বিষয়। কারণ অর্থ যেখানে আছে নির্বাচনে সেখানেই প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ক্যাপিটাল মার্কেটে এর প্রভাব বেশি পড়ে। সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে অর্থনীতির চরিত্র নির্ভর করে নির্বাচনের ওপর।

সামনে জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচনে যে সরকারই আসুক না কেন তার ওপর দেশের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি নির্ভর করে। পলিসি গঠনে ও পুঁজিবাজারের ক্ষেত্রে কতটুকু ভূমিকা পালন করবে সেটাই দেখার বিষয়। কারণ পুঁজিবাজারের সঙ্গে দেশি-বিদেশি এবং প্রবাসী অনেক বিনিয়োগকারী জড়িত। এখানে তাদের অনেক কষ্টের টাকা বিনিয়োগ রয়েছে।

গুটিকয়েক ব্যক্তির কারণে ওইসব বিনিয়োগকারীর টাকা হুমকির মুখে পড়েছে এবং পুঁজিবাজার নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। আর এখানে যারা বিচক্ষণতার মাধ্যমে বিনিয়োগ করে তারাই বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, যা আসলে মোটেই কাম্য নয়। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা রাজনৈতিক আচরণ ও অর্থনীতির ব্যবস্থাপনার ওপর আস্থা রাখতে পারছে না।

এখানে আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে, যারা নির্বাচনে টাকা ব্যয় করে তারা কম-বেশি পুঁজিবাজার, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত। দলগুলো ব্যক্তিগত বা দলের প্রার্থীদের সহায়তা করার জন্য পুঁজিবাজার, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা উত্তোলন করে থাকে। এর প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়ে।

সামগ্রিকভাবে বলা যায়, একটি আদর্শিক ব্যবস্থাপনায় আস্থা রাখতে না পারায় দেশের পুঁজিবাজারের এ অবস্থা। পুঁজিবাজারে উত্থান-পতন থাকবেই, আর এটা হওয়াই স্বাভাবিক। এটি শুধু দেশের পুঁজিবাজারে নয়, বিভিন্ন দেশের পুঁজিবাজার এ রকম আচরণ করে থাকে। বিনিয়োগকারীকে বিচক্ষণতার সঙ্গে জেনে-বুঝে ও গুজবে কান না দিয়ে বিনিয়োগ করতে হবে।

মুহাম্মদ আল জাহাঙ্গীর বলেন, সাধারণত নির্বাচনের আগে দেশের পুঁজিবাজার একটু নিম্নগতিতে থাকে। তবে নির্বাচনের পর পুঁজিবাজার ভালো অবস্থানে যাবে মনে করি। গত পাঁচ বছরে দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হয়েছে এবং পুঁজিবাজারের অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিগুলোর প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, কিন্তু সামগ্রিক পুঁজিবাজারের অবস্থা তেমন পরিবর্তিত হয়নি। তবে এ রকম অবস্থা বেশি দিন থাকবে না, যদি একটি ভালো নির্বাচিত সরকার আসে এবং পুঁজিবাজারে একটি ভালো নিয়ন্ত্রক সংস্থা পাওয়া যায়।

তিনি বিনিয়োগকারীর উদ্দেশে বলেন, পুঁজিবাজারের যে কোম্পানিগুলো অন্তর্ভুক্ত আছে, সেখান থেকে ভালো মানের কোম্পানিগুলো আগে বাছাই করতে হবে, কিন্তু বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী এ কাজটি করে না। পুঁজিবাজারে যারা বিনিয়োগ করতে আসে তাদের বেশিরভাগই না বুঝে এবং গুজবের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করে, ফলে বিনিয়োগকারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।