sonali-anash-lagoআবদুর রাজ্জাক, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে চলছে আইটেম ওয়াইজ কারসাজি। কারসাজি এ চক্রটি বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে বিনিয়োগকারীদের বোকা বানিয়েছে শতশত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে ১৯৯৬ এবং ২০১০ সালের ধসের চেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। অথচ এ অবস্থায়ও নিরব ভূমিকা পালন করছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বলে অভিযোগ বিনিয়োগকারীদের।

বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ , সোনালী আশঁ, অলটেক্স, জুট স্পিনার্স, লিব্রা ইনফিউশন, এমবি ফার্মা এবং ফার্মা এইড, ৮-১০ টি কোম্পানির শেয়ারের কারসাজিতে বিনিয়োগকারীদের ব্রোকারেজ হাউজের পাশাপাশি সঙ্গে খোদ কোম্পানির লোকজন জড়িত। এ কারণে এসব কোম্পানির শেয়ারের কারসাজি হওয়ার পরও কোনো ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছেনা কমিশন।

এদিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সোনালি আশঁ কর্তৃপক্ষ তাদের ইচ্ছামতো আর্থিক হিসাব প্রকাশ করেছে। যেখানে বাংলাদেশ হিসাব মান (বিএএস), শ্রমিক আইনসহ নানা ব্যত্যয় ঘটেছে। এরমাধ্যমে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের সঙ্গে যেমন প্রতারণা করেছে, একইভাবে অতিরঞ্জিত মুনাফা ও সম্পদ দেখিয়ে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।

Page-01.eps-f (5)সোনালি আশেঁর ২০১৭-১৮ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় নিরীক্ষকের পর্যবেক্ষনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সোনালি আঁশ কর্তৃপক্ষ পূণ:মূল্যায়নজনিত বৃদ্ধি পাওয়া স্থায়ী সম্পদের উপর অবচয় চার্জ করে না। বিএএস-১৬ অনুযায়ি, প্রযোজ্য হলেও ২০০৬-০৭ অর্থবছর থেকে এমনটি করে আসছে। যাতে প্রতিবছর শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) ও নিট সম্পদ বেশি দেখানো হচ্ছে বলে নিরীক্ষক তার পর্যবেক্ষনে বিষয়টি তুলে ধরেছেন। এদিকে বিএএস-৩৬ অনুযায়ি, স্থায়ী সম্পদ ইমপেয়ারমেন্ট করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও সোনালি আশঁ কর্তৃপক্ষ তা করে না। এরমাধ্যমেও প্রতিবছর নিট সম্পদ ও মুনাফা বেশি দেখানো হচ্ছে।

বিএএস-১২ অনুযায়ি, পূণ:মূল্যায়নজনিত কারনে বৃদ্ধি পাওয়া স্থায়ী সম্পদের উপরে ডেফার্ড টেক্স গণনা করতে হয়। যা সোনালি আশেঁর জন্য ২০০৬-০৭ অর্থবছর থেকে কার্যকর হলেও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তা করে না। গ্রাহক সাইফুল এন্টারপাইজের কাছে ২০১৬ সাল থেকে সোনালি আশেঁর ৭৬ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। কিন্তু গ্রাহক সেই টাকা ফেরত দিচ্ছে না।

এমতাবস্থায় পাওনা টাকা আদায় নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। যাতে উক্ত সম্ভাব্য ক্ষতির বিপরীতে সঞ্চিতি গঠন করা প্রয়োজন হলেও সোনালি আশঁ কর্তৃপক্ষ তা করছে না। এর মাধ্যমে মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখানো হচ্ছে। ২০০৬ সালের শ্রম আইন অনুাযায়ি, সোনালি আশঁ কর্তৃপক্ষ ২০০৫-০৬ অর্থবছর থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে ৫২ লাখ টাকার শ্রমিক ফান্ড গঠন করেছে।

কিন্তু ফান্ডের দুই-তৃতীয়াংশ প্রতিবছর শ্রমিকদের মধ্যে বিতরনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা করা হয় না। এমনকি ফান্ডের বাকি অংশ লাভজনক খাতে বিনিয়োগের বিধান থাকলেও তা করা হয় না। যাতে ফান্ডের উক্ত টাকায় কোন সুদ বা লাভ যোগ হয়নি। কোম্পানিটির ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ২২৯.৪৭ মেট্রিক টন প্রসেস লোকসান হয়েছে।

যা ওই অর্থবছরে মোট উৎপাদনের ৪.৫২ শতাংশ। কিন্তু আগের বছরে এ জাতীয় কোন লোকসান হয়নি। এছাড়া উক্ত লোকসানের বিপরীতে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ নিরীক্ষককে সন্তোষজনক প্রমাণ দেখাতে পারেনি। সোনালি আশঁ একটি রপ্তানিকারক কোম্পানি।

এমতাবস্থায় বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়জনিত কারনে লাভ বা ক্ষতি হওয়া স্বাভাবিক। যে কারনে আন্তর্জাতিক হিসাব মান (আইএএস)-২১ অনুযায়ি, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়জনিত কারনে লাভ বা ক্ষতি আর্থিক হিসাবে দেখাতে হয়। কিন্তু সোনালি আঁশ কর্তৃপক্ষ তা করেনি।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, যেসব কোম্পানির শেয়ার কারসাজি হচ্ছে বলে মনে হয়, সেগুলোকে তদন্তের মাধ্যমে আইনিভাবে ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ।

নাম না প্রকাশের শর্তে ডিএসইর এক পরিচালক  বলেন, সোনালী আশঁ কোম্পানির অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির পেছনে কে বা কারা জড়িত, সার্ভেইলেন্স সফটওয়ার দেখে তাদের চিহ্নিত করে প্রতিবেদনও জমা দেওয়া হয়েছে। অথচ কমিশন এসব কোম্পানির বিষয়ে কোনো তদন্ত করছে না।

বিএসইসি’র সাবেক চেয়ারম্যান ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, যেসব কোম্পানির শেয়ার কারসাজি হচ্ছে বলে মনে হয়, সার্ভেইলেন্সে দেখে সেগুলোকে তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ।

বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে মির্জা আজিজ বলেন, বিশ্বব্যাপী প্র্যাকটিস হচ্ছে শেয়ারের দাম বাড়লে বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার সঙ্গে কিনেন। কিন্তু আমাদের দেশে উল্টো, যখন শেয়ারের দাম বাড়ে তখন বিনিয়োগকারীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েন। এটা উচিৎ নয়, বিনিয়োগকারীদের এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

একই কথা বলেছেন, বিএসইসির আরেক সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, কোনো কোম্পানির শেয়ারের ম্যানুপুলেশন হলে স্টক এক্সচেঞ্জর উচিত কমিশনকে তার প্রতিবেদন দেওয়া। এরপর কমিশনের উচিততদন্ত টিম গঠন করা। তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।