DSEসাজিদ খান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে চলছে আইটেম ওয়াইজ কারসাজি। কারসাজি এ চক্রটি বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে বিনিয়োগকারীদের বোকা বানিয়েছে শতশত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে ১৯৯৬ এবং ২০১০ সালের ধসের চেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। অথচ এ অবস্থায়ও নিরব ভূমিকা পালন করছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বলে অভিযোগ বিনিয়োগকারীদের।

বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, সোনালী আশঁ, অলটেক্স, জুট স্পিনার্স, লিব্রা ইনফিউশন, এমবি ফার্মা এবং ফার্মা এইড, ৮-১০ টি কোম্পানির শেয়ারের কারসাজিতে বিনিয়োগকারীদের ব্রোকারেজ হাউজের পাশাপাশি সঙ্গে খোদ কোম্পানির পরিচালকরা জড়িত। এ কারণে এসব কোম্পানির শেয়ারের কারসাজি হওয়ার পরও কোনো ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছেনা কমিশন।

Page-01 (15)এদিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সোনালি আশঁ কর্তৃপক্ষ তাদের ইচ্ছামতো আর্থিক হিসাব প্রকাশ করেছে। যেখানে বাংলাদেশ হিসাব মান (বিএএস), শ্রমিক আইনসহ নানা ব্যত্যয় ঘটেছে। এরমাধ্যমে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের সঙ্গে যেমন প্রতারণা করেছে, একইভাবে অতিরঞ্জিত মুনাফা ও সম্পদ দেখিয়ে শেয়ার কারসাজি করে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।

অন্যদিকে সূচকের টানা পতন সত্তে¡ও বস্ত্র খাতের কোম্পানি অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ারদর লাগামহীনভাবে বাড়ছে। গত সাত কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর প্রায় ৯১ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া বছরের সর্বোচ্চ দরে রয়েছে অলটেক্সের শেয়ার দর।

জানা গেছে, গত ৩ ডিসেম্বর অলটেক্স কোম্পানিটির পক্ষ থেকে জানানো হয় তাদের মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশনে দুটি নতুন অবজেক্ট ক্লজ সংযুক্ত করা হবে। এ সংক্রান্ত বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) আগামী ২৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সাধারণত কোম্পানির মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশনের অবজেক্ট ক্লজে কোম্পানি কি ধরণের ব্যবসা করবে সে তথ্য উল্লেখ থাকে।

যেহেতু নতুন দুটি অবজেক্ট ক্লজ সংযুক্ত করা হবে তাই কোম্পানির ব্যবসার পরিধি বাড়ানো হতে পারে এমন খবরে এ কোম্পানির শেয়ার কিনতে মরিয়া হয়েছেন অনেকেই। তবে ক্রমাগত ডিভিডেন্ড না দেওয়া ও লোকসানি কোম্পানির এভাবে শেয়ার দর বৃদ্ধি কারসাজির নামান্তর বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

উল্লেখ্য, টানা ৭ কার্যদিবস ধরে কোম্পানির শেয়ার দরে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি সত্তে¡ও স্টক এক্সচেঞ্জ এখনও দর বাড়ার কারণ জানতে চেয়ে নোটিশ দেয়নি। এছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পক্ষ থেকেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে বিএসইসি’র একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানায়, আসলে মার্কেটের প্রতিটি কোম্পানির বিষয়েই কমিশনের ইন্সট্যান্ট মার্কেট ওয়াচ সফটওয়্যার কাজ করছে। এছাড়া যেসব কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে সেগুলোর কারণ দর্শানোর নোটিশ স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে যে কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিক বলে কমিশন বিবেচনায় করবে সেগুলোর ক্ষেত্রে তদন্ত কমিটি গঠন সাপেক্ষে কমিশন ব্যবস্থা নেবে বলে জানান তিনি।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, যেসব কোম্পানির শেয়ার কারসাজি হচ্ছে বলে মনে হয়, সেগুলোকে তদন্তের মাধ্যমে আইনিভাবে ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ।

নাম না প্রকাশের শর্তে ডিএসইর এক পরিচালক বলেন, সোনালী আশঁ কোম্পানির অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির পেছনে কে বা কারা জড়িত, সার্ভেইলেন্স সফটওয়ার দেখে তাদের চিহ্নিত করে প্রতিবেদনও জমা দেওয়া হয়েছে। অথচ কমিশন এসব কোম্পানির বিষয়ে কোনো তদন্ত করছে না।

বিএসইসি’র সাবেক চেয়ারম্যান ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, যেসব কোম্পানির শেয়ার কারসাজি হচ্ছে বলে মনে হয়, সার্ভেইলেন্সে দেখে সেগুলোকে তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ।

বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে মির্জা আজিজ বলেন, বিশ্বব্যাপী প্র্যাকটিস হচ্ছে শেয়ারের দাম বাড়লে বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার সঙ্গে কিনেন। কিন্তু আমাদের দেশে উল্টো, যখন শেয়ারের দাম বাড়ে তখন বিনিয়োগকারীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েন। এটা উচিৎ নয়, বিনিয়োগকারীদের এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

একই কথা বলেছেন, বিএসইসির আরেক সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, কোনো কোম্পানির শেয়ারের ম্যানুপুলেশন হলে স্টক এক্সচেঞ্জর উচিত কমিশনকে তার প্রতিবেদন দেওয়া। এরপর কমিশনের উচিত তদন্ত টিম গঠন করা। তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।