Ministerদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বধীন মহাজোটের ভূমিধস জয়ের পর এখন শুরু হয়েছে মন্ত্রিসভা নিয়ে আলোচনা। এক্ষেত্রে মন্ত্রিসভায় নতুন যারা আসছেন তাদের নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতরে ও বাইরে গুঞ্জন-আলোচনার কমতি নেই। আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়, গণভবন, নেতাদের কার্যালয়েও এখন বিষয়টি আলোচনার শীর্ষে। আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, মন্ত্রিসভায় কারা থাকছেন তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া আর কেউ জানেন না। সংসদ সদস্যদের প্রত্যেকের আমলনামা তিনি জানেন। বিষয়টি একেবারেই প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ারে।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ও বিএনপির বর্জন করা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মন্ত্রিসভা গঠিত হয় ১২ জানুয়ারি। শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে ৪৮ সদস্যবিশিষ্ট নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। ওই সরকারে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ২৯ জন মন্ত্রী, ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী এবং দুজন উপমন্ত্রী ছিলেন। পরে কয়েকদফা রদবদল আনা হলেও শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিসভার আকার দাঁড়ায় ৫২ সদস্যের।

আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, গতবারের মতো এবারও কোয়ালিশন সরকার হতে পারে। সেক্ষেত্রে বিরোধী দল থেকেও অনেকের ঠাঁই হবে মন্ত্রিসভায়। যুক্ত হবে একাধিক নতুন মুখ। ত্যাগী রাজনীতিক, প্রবাসী, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন দফতরে অভিজ্ঞদের একটি তালিকা আছে প্রধানমন্ত্রীর হাতে। এবার টেকনোক্র্যাটসহ একাধিক দফতরে নতুন মুখ আসতে পারে। দলের অনেকে ক্লিন ইমেজ ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নেতাদের আনার কথাও বলছেন।

আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা দৈনিক জাগরণকে বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে হতে যাওয়া আগামী সরকারের প্রধান লক্ষ্য থাকবে- জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। এ জন্য প্রয়োজন- সুশাসন প্রতিষ্ঠা। এক্ষেত্রে দলের যারা ক্লিন ইমেজের নেতা রয়েছেন তাদেরই নতুন মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হতে পারে। ব্যাপক রদবদল হওয়াও অসম্ভব কিছু নয়। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনাই বলতে পারবেন। তিনি যার ওপর আস্থা রাখবেন তাকেই মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দেয়া হবে।’

আওয়ামী লীগের একটি দলীয় সূত্র বলছে, এবারের মন্ত্রিসভা গঠনের বিষয়ে এখনও কারও সঙ্গে তেমন একটা আলোচনা করেননি দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। তবে একটি গুডবুকের তালিকা তিনি তৈরি করে রেখেছেন।

দলীয় সূত্রটি বলছে, মন্ত্রিসভায় নবীন-প্রবীণের সমন্বয় থাকবে। উন্নয়ন ও অগ্রগতির কারণে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দায়িত্বে অভিজ্ঞদেরই আনা হতে পারে। সেক্ষেত্রে পুরনোদের কয়েকজন থেকে যেতে পারেন। তবে দলের জন্য ত্যাগ স্বীকারকারী দুএকজনকে মন্ত্রিসভায় রাখতে পারেন শেখ হাসিনা। দলের আগামীর নেতৃত্ব সুদৃঢ় করতে অঞ্চলভেদে কিছু নতুন মুখও আসতে পারে। এছাড়া দলের পক্ষ থেকে যেসব প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে সেক্ষেত্রে এক্সপার্টদের প্রধান্য দেয়া হতে পারে।

নির্বাচনোত্তর এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী বলেছিলেন, মহাজোট সরকারের উন্নয়নে পরীক্ষিত হিসেবে পাঁচ মন্ত্রীর দফতর পরিবর্তন না-ও হতে পারে। সেই হিসেবে আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, ওবায়দুল কাদের, মতিয়া চৌধুরী ও খন্দকার মোশাররফ হোসেনের দফতর সম্ভবত অপরিবর্তিত থাকছে।

নানা আলোচনা ও রাজনৈতিক ধারণা থেকে পুরনো যারা মন্ত্রিসভায় আসতে পারেন তাদের মধ্যে রয়েছেন- আ হ ম মোস্তফা কামাল, মোশাররফ হোসেন, মোহাম্মদ নাসিম, আ ক ম মোজাম্মেল হক, নুরুল ইসলাম নাহিদ, শাজাহান খান, হাসানুল হক ইনু, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, আনিসুল হক, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, আবুল হাসান মাহমুদ আলী, মুজিবুল হক, মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, আসাদুজ্জামান খান কামাল, আসাদুজ্জামান নূর, মেহের আফরোজ চুমকি, মো. শাহরিয়ার আলম, মির্জা আজম, জুনায়েদ আহমেদ পলক, জাহিদ মালেক, মোস্তাফা জব্বার, মসিউর রহমান রাঙ্গা ও এম এ মান্নান।

এর মধ্যে যোগ্যতার বিবেচনায় বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালকে (লোটাস কামাল) অর্থমন্ত্রী করা হতে পারে বলে আলোচনা রয়েছে। তবে আ হ ম মোস্তফা কামাল নিজ দফতরেই থাকলে টেকনোক্র্যাট কোটায় আসতে পারেন অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।

মন্ত্রিসভা নতুন আসতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে- আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, কর্নেল (অব.) ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি এবং উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদের নাম। মন্ত্রিসভা আসতে পারেন বলে আরও আলোচনায় রয়েছেন- শ ম রেজাউল করিম, গোলাম দস্তগীর গাজী, দীপঙ্কর তালুকদার, হাবিবে মিল্লাত মুন্না, জাহিদ আহসান রাসেল, প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া অভিনেতা আকবর হোসেন পাঠান ফারুক।

এ ছাড়া নির্বাচনে এমপি হিসেবে মনোনয়ন না পেয়েও সফলভাবে বিশেষ দায়িত্ব পালনের পর টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হতে পারেন আওয়ামী লীগের দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান। তবে এই দুজনকে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই না দিয়ে আগামীতে আওয়ামী লীগের আরো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়া হতে পারে বলেও মনে করেন দলের কেউ কেউ।

দলীয় একটি সূত্র মনে করে, দলের আগামীর নেতৃত্ব ও ক্লিন ইমেজ বিবেচনায় নিয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং আওয়ামী লীগের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এবারের মন্ত্রিসভায় আসছেন। ‘মিথ’ আসন হিসেবে খ্যাত সিলেট-১ থেকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই আবদুল মোমেনের নামও রয়েছে।

এছাড়া মন্ত্রী হতে পারেন এমন কয়েকজনের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ, প্রয়াত রাষ্টপ্রতি জিল্লুর রহমান ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত নারী নেত্রী আইভি রহমানের ছেলে নাজমুল হাসান পাপন। জাতীয় চার নেতার একজন তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে সিমিন হোসেন রিমিও এবার মূল্যায়িত হতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কানের চিকিৎসক ও বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত ক্যাবিনেটে মূল্যায়িত হতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে।

ক্রীড়াঙ্গনে আলোচিত ও ত্যাগী অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা, মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয় ও খুলনার আবদুস সালাম মোর্শেদী- এ তিনজনের একজনকে ক্রীড়া ও যুব মন্ত্রণালয়ের জন্য বেছে নেয়া হতে পারে। তবে পুরনোরা বাদে মহাজোট থেকে নতুন কোনো মুখ না-ও আসতে পারে বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তবে লক্ষ্মীপুর থেকে নির্বাচিত ও জোটগত বিবেচনায় নিয়ে মেজর (অব.) মান্নানের নাম শোনা যাচ্ছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এরইমধ্যে সাংবাদিকদের বলেছেন, কেবিনেট কেমন হবে বিষয়টি একান্তই প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব বিষয়। পরিসর বড় হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিজয় যেহেতু বড়, ফলে প্রত্যাশাও অনেক বড়। কী হবে- এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। ১০ জানুয়ারির মধ্যে সবই দৃশ্যমান হবে।