mustafa-kamalদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে টানা তৃতীয়বারের মতো মন্ত্রিসভা গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এরইমধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রী হচ্ছেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি আগে পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

নতুন সরকারে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে যাওয়া আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, এই মন্ত্রণালয় আর আগের মতো চলবে না। পাঁচ বছর পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব সামলে আসা মুস্তফা কামাল সোমবার নতুন দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন; অর্থ মন্ত্রণালয়ে অবসান ঘটতে যাচ্ছে মুহিত যুগের।

রোববার ঢাকার শেরে বাংলা নগরে এনইসিতে এক অনুষ্ঠানে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মুস্তফা কামাল বলেন “অর্থ মন্ত্রণালয় যেভাবে আগে চলেছে, সেভাবে আর চলবে না।

“অর্থ মন্ত্রণালয় নতুন পরিসরে নতুন কলেবরে এবং আগামীকাল থেকেই তার যাত্রা শুরু করবে। সেখানে অনেক বড় ও বিশালতা এবং অনেক নতুনত্ব আপনারা দেখতে পাবেন।”

শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে সরকার গঠনের পর অর্থমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটি দিয়েছিলেন ঝানু আমলা মুহিতকে, যার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করার অভিজ্ঞতাও ছিল।

মুস্তফা কামাল বলেন, “এটা আমার সাবজেক্ট, আমি ওই সাবজেক্ট নিয়েই লেখাপড়া করেছি। সুতরাং আমি এটুকু বলতে পারি যে আমি আপনাদের মিথ্যা আশ্বাস দেব না। আমি ফেল করব না। আমার বিশ্বাস, আপনারাও ফেল করবেন না।

“মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে আমাদের অর্থনীতিকে আরও অনেক শক্তিশালী অবস্থানে আমরা নিয়ে যাব ইনশাল্লাহ।” টানা ১০ বছর দায়িত্ব পালনের পর এবার অবসরে যেতে চাইছিলেন মুহিত; নির্বাচনেও অংশ নেননি তিনি।

মুহিতের বিদায়ে কে হবেন অর্থমন্ত্রী, এমন আলোচনাও শুরু হয়েছিল। সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নির্বাচনে প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনলে তাকে নিয়েও শুরু হয়েছিল আলোচনা। কিন্তু তাকে আর প্রার্থী করা হয়নি।

গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয়ের পর আবার আলোচনা শুরু হয়েছিল যে অর্থমন্ত্রী কে হচ্ছেন। রোববার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সংবাদ সম্মেলনে কৌতূহলের অবসান ঘটে। ৭২ বছর বয়সী মুস্তফা কামাল এনিয়ে চারবার কুমিল্লা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। চাটার্ড একাউনটেন্ট মুস্তফা কামালের ক্রীড়া সংগঠক হিসেবেই পরিচিতি বেশি।

তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। ২০১৪ সালে তিনি আইসিসির সভাপতিও নির্বাচিত হন।

মুস্তফা কামাল বলেন, “আপনারা যতটা ভয় পাচ্ছেন, আমাদের অর্থ মন্ত্রণালয়, আর্থিক খাত অথবা অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত বিভিন্ন আর্থিক খাত নিয়ে অনেক চ্যালেঞ্জের কথা বলছেন। আপনারা অনেক ভয়-ভীতি নিয়ে অনেক উৎকণ্ঠা থেকে এই কথাগুলো বলছেন। “কিন্তু আমি মনে করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের চালিকা শক্তি। তার নির্দেশনা নিয়ে এসব চ্যালেঞ্জ আমরা মোকাবেলা করব। আমাদের সমস্যাগুলো আমরা জানি। এই সমস্যাগুলো মোকাবেলা করা কঠিন কাজ নয়।”

গত ১০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক এগিয়েছে; বিশ্বের ৪২তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে উঠে এসেছে এই দেশ। জিডিপি প্রবৃদ্ধি এখন ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে বৈষম্য নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। মুস্তফা কামাল বলেন, “চ্যালেঞ্জ তো আসবেই। চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করাটাই হচ্ছে বাহাদুরী। প্রত্যেকটা চ্যালেঞ্জই আমাদের জন্য সুযোগ নিয়ে আসে।

“শুধু আমাদের দুর্বল দিকগুলো দেখলে হবে না। আমাদের ভাবতে হবে এ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করেই আমাদের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে হবে।” তিনি বলেন, “৫ বছর আগে যা বলেছিলাম, হিসাব মিলিয়ে দেখেন তার ৯০ শতাংশের উপরে আমরা অর্জন করেছি।”

এই ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে মুস্তফা কামাল জানান, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) মোট বরাদ্দে থেকে ৪৯ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা খরচ করা সম্ভব হয়েছে। এ ব্যয় মোট বরাদ্দের ২৭ দশমিক ৪২ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের এ ব্যয় গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৫ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা বেশি। গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যয় হয়েছিল ৪৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা বা ২৭ শতাংশ।

তবে মুস্তফা কামাল বলেন, “চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে অর্থ ব্যয়ের দিকে দিয়ে বেশি খরচ করতে পারলেও আনুপাতিক হারে তেমন উন্নতি করতে পারিনি। তবে সামনের ছয় মাসে বাস্তবায়নের গতি বাড়িয়ে শতভাগের কাছাকাছি বাস্তবায়ন সম্ভব।”