dba-sakilদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, ভোটকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের আতঙ্ক-শঙ্কা ছিল। সবকিছু কাটিয়ে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ফের ক্ষমতায় আসায় বাজারে চাঙ্গাভাব দেখা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবার প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন। দেশের আরও উন্নয়ন হবে। পদ্মা সেতুসহ যে সব বড় বড় প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে সেগুলো শেষ হবে।

তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে এসেছে। এ আস্থা উন্নয়নের প্রতি; শেখ হাসিনার প্রতি। আর এ আস্থার কারণেই ভোটের পর প্রথম লেনদেনেই তেজিভাব দেখা দেয় বাজারে। তা অব্যাহত রয়েছে। আগামী দিনগুলোতে বাজার আরও ভালো হবে জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক শেয়ারের দর একেবারে তলানীতে। সেগুলোর দাম বাড়তে শুরু করলে বাজার গতি পাবে।

এদিকে পুঁজিবাজারে হঠাৎ করে আস্থা বাড়তে শুরু করছে বিনিয়োগকারীদের। বাড়ছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের লেনদেন। গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিদেশি বিনিয়োগকারীদের লেনদেন চার গুণের বেশি বেড়েছে। মাঝে মধ্যে বিক্রি করলেও ক্রয়ের প্রবনতা বেশি ছিল। আইনী ও কাঠামোগত সংস্কার এবং স্টক এক্সচেঞ্জের ডিমিউচুয়ালাইজেশনের (ব্যবস্থাপনা ও মালিকানা পৃথকীকরণ) কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

তাছাড়া বাংলাদেশের পুঁজিবাজার এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় বেশি লাভজনক। তাই বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। তবে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অল্প কিছু কোম্পানি ঘিরেই বিনিয়োগ করেন। বাজারে ভালো ও মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির সংখ্যা এবং শেয়ার বাড়লে আরও বেশি বিদেশি বিনিয়োগ আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয় এম সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বিদেশিরা দেখে শুনে, জেনে-বুঝে শেয়ারে অর্থ বিনিয়োগ করেন। তারা বিনিয়োগের আগে গবেষণা করেন, কোম্পানির তথ্য যাচাই-বাছাই করে শেয়ার কেনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

বিএসইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, নানা সংস্কারের ফলে আমাদের পুঁজিবাজারে প্রতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। ২০১০ সালের ধ্বসের পর সিকিউরিটিজ আইন সংস্কার করা হয়েছে। পুঁজিবাজার সংক্রান্ত নানা বিধিমালা নতুনভাবে বিনিয়োগকারীবান্ধব করা হয়েছে। ফলে বাজারে কারসাজির সুযোগ অনেকাংশে কমেছে। এছাড়া বাজারের সূচক আধুনিকীকরণ করার পাশাপাশি লেনদেন প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা পৃথকীকরণ হয়েছে। এতে পুঁজিবাজারে স্টক ব্রোকারদের প্রভাব কমেছে। বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও স্টক ব্রোকারদের অনিয়মের কারণে তাদেরকে জরিমানার মুখোমুখি করা হচ্ছে।

মার্চেন্ট ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, আমাদের পুঁজিবাজারে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির সংখ্যা খুব বেশি নয়। যেগুলোও রয়েছে তাদের শেয়ার সংখ্যা খুবই কম। তাই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ঘুরেফিরে অল্প কিছু কোম্পানিতেই বিনিয়োগ করেন। অন্য কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনে বিনিয়োগকারীরা আস্থা পান না। তাই বাজারে ভালো কোম্পানি নিয়ে আসতে পারলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ আরও বাড়বে।

এসব প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবু আহমেদ বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল এখানে বিনিয়োগযোগ্য কোম্পানির সংখ্যা খুবই কম। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মৌলভিত্তি সম্পন্ন এসব কোম্পানির বাইরে বিনিয়োগ করেন না। দেশের ভালো বিনিয়োগকারীরাও এ কোম্পানিগুলো ঘিরেই বেশিরভাগ বিনিয়োগ করেন।

তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের বাইরে অল্প কয়েকটি কোম্পানি রয়েছে যেগুলোকে খুব খারাপ বলা যাবে না। এছাড়া বেশিরভাগ কোম্পানিতেই মূলত কারসাজি হয়। তাই বহুজাতিক কোম্পানি ও দেশের মুনাফামুখী ভালো কোম্পানিগুলোকে বাজারে তালিকাভুক্ত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দেন তিনি।

ডিএসইর সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান বলেন, ভোটের পর সবার মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে যে, বাজার ভালো হবে। নতুন সরকার বাজারের দিকে নজর দেবেন। শিল্প স্থাপনের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। এ সব কারণে ২০১০ সালের ধসের পর যে সব বিনিয়োগকারী বাজার থেকে চলে গিয়েছিল তারা আবার ফিরে আসছে। একইসঙ্গে নতুন বিনিয়োগকারীরাও বাজারে ঢুকছে।

তাই শেয়ার ক্রয় বেড়ে গেছে এবং সূচক বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের গুজবে কান না দিয়ে দেখেশুনে বিনিয়োগ করার জানিয়ে রকিবুর রহমান বলেন, বাজারে এখন প্রচুর ভালো শেয়ার প্রয়োজন। সরকার বা বিএসইসি দ্রæত পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যদিকে বাজারে যাতে কোন মহল কোন ধরনের কারসাজি করার সুযোগ না পায় সে ব্যাপারেও সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।