orion infutionদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ওষুধ রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান দিন দিন উজ্জ্বল হচ্ছে। স্বাধীনতার পর যেখানে দেশের চাহিদার ৭০ শতাংশ ওষুধ বিদেশ থেকে আমদানি হতো এখন সেখান দেশের চাহিদার ৯৮ শতাংশ মিটিয়ে বিশ্বের ১২৭টি দেশে বাংলাদেশে প্রস্তুত ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে। শুধুমাত্র দেশের অভ্যন্তরেই বর্তমানে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার বাজার রয়েছে এ দেশের ওষুধের।

বর্তমানে ইউরোপ ও আমেরিকাসহ পৃথিবীর প্রায় ১২৭টি দেশে বাংলাদেশের ৫৪টি কোম্পানির ৩০৩টি গ্রুপের ৮৩৬ কোটি ৮৭ লাখ ৬৬ হাজার ৮০৭ টাকার ওষুধ রপ্তানি করছে। এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখা গেলে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। একইসঙ্গে বাংলাদেশের ওষুধ খাত তৈরি পোশাকশিল্পের মতো বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের বড় একটি খাত হয়ে উঠবে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ওষুধ রপ্তানি খাতটিকে ইতিমধ্যে দারুণ সম্ভাবনাময় একটি খাত হিসেবে চিহ্নিত করেছেও। প্রতিবছর ওষুধ রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন নতুন দেশ যোগ হচ্ছে বাংলাদেশের ওষুধ আমদানিকারক দেশের তালিকায়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু জাপানসহ উন্নত বিশ্বের শতাধিক দেশে যাচ্ছে বাংলাদেশে প্রস্তুত বিভিন্ন ধরনের ওষুধ।

গত বছরে বাংলাদেশের ওষুধের রপ্তানি প্রায় দ্বিগুণে পৌঁছেছে। তাছাড়া স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশি বাজারে সুনামের সঙ্গে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের ওষুধ। স্বল্প মূলধন ও ওষুধের গুণগত মান বজায় রাখায় বিদেশি বাজারে বাড়ছে দেশীয় ওষুধের চাহিদা। এর অন্যতম আরেকটি কারণ হচ্ছে, অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের ওষুধের দাম অনেক কম। এতে বিদেশে রপ্তানি পণ্যের তালিকায় ওষুধ শিল্প বড় ভূমিকা পালন করছে। বাড়ছে রপ্তানি আয়।

তেমনি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে ওষুধ রপ্তানি ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে নতুন করে আশা সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প।

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধ খাতে এসব অর্জনের পেছনে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ কার্যকর ভূমিকা রাখছে। দেশের অনেক কোম্পানিই এখন আন্তর্জাতিক মানের ওষুধ তৈরি করছে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর সার্টিফিকেশন সনদও পেয়েছে বেশকিছু কোম্পানি। এ কারণে ওইসব দেশসহ অন্য দেশে ওষুধ রপ্তানি পর্যায়ক্রমে বাড়ছে।

বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ওষুধের মেধাস্বত্বে বিশ্ব-বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ছাড়ের সুযোগ রয়েছে। এটাকে কাজে লাগাতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকেও ওষুধ শিল্প বিকাশে সব ধরনের সহযোগিতা পাওয়া গেলে এর বিকাশ সামনে আরো বাড়বে বলে মনে করেন তারা। ওষুধ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যমতে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, পাবনা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১ হাজার ৩৩৮টি ছোট বড় ওষুধ উৎপাদনকারী কারখানা রয়েছে। কারখানাগুলোর মধ্যে বেশকিছু কারখানা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হয়েছে। বিশেষ করে বেক্সিমকো, স্কয়ার, ওরিয়ন ইনফিউশন, গ্লাক্সো, রেনেটা, ইনসেপটা, হেলথ কেয়ার, এসকেএফ, সেনডোজসহ বেশকিছু কারখানায় আন্তর্জাতিক মানের ওষুধ উৎপাদিত হয়।

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের শীর্ষ এক কর্মকর্তা জানান, বিশ্বে ওষুধ উৎপাদনকারী অনুন্নত ৪৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প দ্রুত বিকাশমান একটি শিল্প খাত; সময়ের সঙ্গে এর চাহিদা বাড়ছে। দেশের উৎপাদিত ওষুধ দিয়ে স্থানীয় চাহিদার ৯৮ শতাংশ মেটানো সম্ভব হচ্ছে। বাংলাদেশ বর্তমানে ইউরোপ ও আমেরিকাসহ বিশ্বের ১২৭টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে। তিনি আরো বলেন, কাঁচামাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে এরই মধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক দেশ প্রতিক্ষণ বলেন, বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের বিকাশ খুবই আশাব্যঞ্জক। বছর কয়েক আগেও জীবনরক্ষাকারী পঞ্চাশ শতাংশেরও বেশি ওষুধ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো। কোটি কোটি টাকার ওষুধ আমদানি করে দেশের চাহিদা মেটানো হতো। ওই সময় বিদেশি কোম্পানির হাতে দেশের ওষুধের বাজার জিম্মি হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটত।

দেশে একই রোগের একই ওষুধ বিভিন্ন নামে বিভিন্ন কোম্পানি উৎপাদন এবং বাজারজাত করছে। বর্তমানে দেশের প্রয়োজনীয় প্রায় ৯৮ শতাংশ ওষুধই দেশের কারখানাগুলোতে উৎপাদিত হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আমি আশা করি ওষুধ শিল্পের হাত ধরে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দিকে যাবে।

আর সব ঠিক থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ আমরা গার্মেন্টস শিল্পকে ছাড়িয়ে এক নম্বর রপ্তানি পণ্য হিসেবে জায়গা করে নিতে পারব। আর যদি এক নম্বরে আসতে হয় তাহলে অবশ্যই বিদেশের ওপর আমাদের ওষুধের কাঁচামাল নির্ভরতা কমাতে হবে। অন্যদিকে যত দ্রুত সম্ভব ওষুধ শিল্প পার্ক চালু করা গেলে দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য বড় দুয়ার উন্মুক্ত হবে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি ওরিয়ন ইনফিউশনের কোম্পানিতে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত সময়। কোম্পানিতে গত একবছরের মধ্যে সর্বনিন্ম দরে অবস্থান করছে। কোম্পানিটির পিই রেশি ৪০ নিচে অবস্থান করছে।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, পুঁজিবাজারের উৎপাদনশীল কোম্পানি যাদের মূল্য আয় অনুপাত ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছে এমন কোম্পানির মধ্যে ওরিয়ন ইনফিউশনের বিনিয়োগ উত্তম। এতে করে বাজারের সার্বিক দর পতনেও বছর শেষে ইতিবাচক ডিভিডেন্ড গেইন করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি ইতিবাচক বাজারে ক্যাপিট্যাল গেইনও করা সম্ভব। তারা বলেন, যে কোন কোম্পানিতে বিনিয়োগের আগে অবশ্যই কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের সম্পর্কে খবর রাখা উচিত। কারণ, সুযোগ-সন্ধানী উদ্যোক্তা পরিচালকদের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে ভবিষ্যৎতের নিরাপত্তা থাককে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক এক সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেছেন ভিন্ন কথা, শুধু যে পিই রেশিও ভিত্তিতে বাজারে বিনিয়োগ করতে হয় তা নয়, সে সকল কোম্পানির ভবিষ্যত সম্ভাবনাময় রয়েছে অথচ নানা কারনে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। তবে এর মধ্যে ওরিয়ন ইনফিশন ভবিষ্যত সম্ভাবনাময় রয়েছে তাই দীর্ঘমেয়াদী ভাল ফল পাওয়া সম্ভব।

জানা যায়, বর্তমানে পুঁজিবাজারের সার্বিক পিই রেশিও (মূল্য আয় অনুপাত) ১৬.৫৫। কিন্তু বাজারের ৪০ পিই সম্পন্ন কোম্পানিকেও মার্জিন ঋণ প্রদান করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে সর্বনিম্ন পিই রেশিও সম্পন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে দ্রুত মুনাফা করা সম্ভব।

বর্তমানে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে ৪০.৬১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ২৬.০৭ শতাংশ ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে ০.২৮ শতাংশ এবং সাধারন বিনিয়োগকারীদের ৩৩.০৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।