Bima lago deshprotikhonদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিমা খাতের কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে। সম্প্রতি প্রতিদিনই এ খাতের বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবস বিমা খাতে হঠাৎ পালে হাওয়া দেখা যায়। এ খাতের সিংহভাগ কোম্পানির দর বাড়তে দেখা যায়।

এমনকি দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় বিমা খাতের কোম্পানিগুলোর আধিপত্য ছিল চোখে পড়ার মতো। বাজার সংশ্লিষ্টরা কয়েকটি কারণে এই খাতের শেয়ারের দর বাড়ছে বলে মনে করছেন।

এর মধ্যে একটি হচ্ছে বিশ্বব্যাংক থেকে বিমা খাতের উন্নয়নে সহজ শর্তে ঋণ আসার খবর। ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশনের (আইডিএ) আওতায় সরকার ৫২০ কোটি টাকার ঋণ পাবে। এই ঋণ বিমা উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করা হবে। বর্তমানে বাজারে এমন খবর রয়েছে, যে কারণে এই খাতে ঝুঁকেছেন বিনিয়োগকারীরা।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিমা খাতে বর্তমানে মূল্য আয় অনুপাত বিনিয়োগের অনুকুলে অবস্থান করছে। এটাও বিমা খাতের শেয়ারের দর বাড়ার একটি কারণ। তা ছাড়া দীর্ঘদিন থেকে এই খাতের শেয়ারের দর সেভাবে বাড়েনি, যে কারণে অল্প দর পেয়ে এই খাতের শেয়ারে ঝুঁকে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এর জের ধরে সম্প্রতি বিমা খাতের শেয়ারের চাহিদা বেড়েছে, যার ফলে বাড়ছে দর।

বর্তমানে বিমা খাতের শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত অবস্থান করছে প্রায় ১২। নিয়ম অনুযায়ী ১৫ এর নিচে পিই রেশিও থাকলে সেই কোম্পানিতে বিনিয়োগ তুলনামূলকভাবে ঝুঁকিহীন মনে হয়। সে কারণে বিনিয়োগকারীরা এসব শেয়ারের সঙ্গে থাকছেন বলে মনে করেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।

একদিতে আবারও সূচকের নিম্নমুখী প্রবণতায় সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবস দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হয়েছে। সূচক বাড়ার মধ্য দিয়ে এদিন লেনদেন শুরু হয়ে চলে সকাল ১১টা পর্যন্ত। এরপর শেয়ার বিক্রির চাপে শুরু হয় সূচক পতন। যা অব্যাহত ছিলো দিনের বাকি সময় পর্যন্ত। ফলে দিন শেষে ডিএসইতে কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম, সূচক ও লেনদেন। একই অবস্থায় লেনদেন হয়েছে অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই)।

এদিন ব্যাংক, প্রকৌশল, বস্ত্র ও আর্থিক খাতের প্রায় সব শেয়ারের দাম কমলেও কেবল বিমা খাতের শেয়ারে দাম বাড়ায় বড় ধরনের দরপতন থেকে রক্ষা পেয়েছে পুঁজিবাজার। ফলে দিন শেষে ডিএসইতে সূচক কমেছে ২৩ পয়েন্ট আর সিএসইতে সূচক কমেছে ৫৭ পয়েন্ট। এর ফলে মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) সূচক বাড়ার পর বুধবার দরপতন হলো। তবে বাজার সংশ্লিষ্টরা একে মূল্যসংশোধন বলে মনে করছেন।

ডিএসইর তথ্য মতে, বুধবার বাজারে ২৫ কোটি ৬১ লাখ ৫২ হাজার ৮৮৩টি শেয়ারের হাত বদল হয়েছে। এতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার কোটি ৫২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিলো ১ হাজার ১৩৯ কোটি ৩১ লাখ ৮৯ হাজার টাকার। তার আগের দিন লেনদেন হয়েছিলো ১ হাজার ১৪৬ কোটি ৩২ লাখ ৩৮ হাজার টাকার।

তথ্যমতে, বাজারে বিমা খাতের ৪৭ টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত। এর মধ্যে বেড়েছে ৩২ টির এবং কমেছে ১০ টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪ টি কোম্পানির শেয়ার দর। প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মোট লেনদেনে বিমা খাতের দখলে ছিল ১৭ শতাংশ। এদিন বিমা খাতের লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭৫ কোটি টাকা।

লেনদেনের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ফার্মাসিউটিক্যাল খাত। এ খাতটির দখলে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৩ শতাংশ। খাতটির লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩১ কোটি ২৯ লাখ টাকা। প্রকৌশল খাত লেনদেনের তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। ডিএসইর মোট লেনদেনে খাতটির অংশগ্রহন ১২ শতাংশ। এর লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ দিন বিমা খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর অবহেলিত ছিল। আলোচিত সময়ে কোম্পানিগুলোর শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ছিল সামান্য। কিন্তু সামনে ব্যাংক, বিমা এবং নন ব্যাংকিং আর্থিক খাতের কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশের মৌসুম। আর লভ্যাংশকে কেন্দ্র করে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে। যার প্রভাব পড়েছে লেনদেনে। ফলে বিমা খাত লেনদেনের শীর্ষে অবস্থান করছে।

এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, এখন বাজারে ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ অধিকাংশ শেয়ারই বিনিয়োগযোগ্য। এই শেয়ারে বিনিয়োগ করলে অপেক্ষাকৃত ঝুঁকিও কম। এ কথা বিবেচনা করে হয়তো এসব শেয়ার কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা, যে কারণে এই শেয়ারের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০ এর নিচে মার্কেট পিই রেশিও অবস্থান করলেও তাকে অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকি বলে মনে করা হয়। এর ওপরে গেলে ধীরে ধীরে তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। সে কারণে ৪০-এর ওপরে পিই রেশিও গেলে সেই শেয়ারে মার্জিন সুবিধা বন্ধ করে দেয়া হয়।