Bangladesh-Bank-Logoআলমগীর হোসেন, আমিনুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্য সামনে রেখে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিনিয়োগ এগিয়ে নেওয়ার উদ্দেশে মুদ্রানীতির কৌশল নির্ধারণ করা হচ্ছে বলেও জানা যায়। তবে এ নিয়ে পুঁজিবাজারে চলছে আলোচনা। এবারের মুদ্রানীতি কেমন হবে কতটা পুঁজিবাজার বান্ধব হবে এ প্রশ্ন খোদ বিনিয়োগকারীদের। আগামী মুদ্রানীতিতে পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতাকে গুরুত্বারোপ করা হবে। এছাড়া খোদ অর্থমন্ত্রী পুঁজিবাজার বান্ধব মুদ্রানীতির ইঙ্গিত দিয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে। বাংলাদেশ ব্যাংক বছরে দুইবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করে। একটি জানুয়ারি ও অন্যটি জুলাই মাসে। জুলাই থেকে শুরু হওয়া অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের ( জানুয়ারি জুন) মুদ্রানীতি এটি।

নতুন এই মুদ্রানীতিকে ঘিরে ব্যবসায়ী ও পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। তাদের প্রত্যাশা, মুদ্রানীতিতে ব্যাংকে সিঙ্গেল ইন্টারেস্ট রেট কার্যকর, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে আনায়ন, ব্যাংকের সিএসআর ও সিএলআর কমানো, ডলারের মূল্য নির্দিষ্ট সীমায় আনাসহ সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ করা হবে ।

বিগত ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম মুদ্রানীতি ঘোষণা করে। এতে মূল্যস্ফীতির চাপ হ্রাসকরণে বাজারে অর্থের সরবরাহ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমিয়ে আনতে সরকারি খাতে ব্যাংকঋণের চাহিদা কম থাকায় অভ্যন্তরীণ ঋণের জোগান প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ৮ শতাংশে রাখার নীতি ঘোষণা করা হয়।

তাছাড়া বেসরকারি খাতে ব্যাংক খাতের ঋণের জোগান প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক ৮ শতাংশে রাখার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়। ৭ দশমিক ৮ শতাংশ জিডিপি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ডিসেম্বরের আগেই তা অর্জনের কথা ঘোষণা করে সরকার। ফলে গত অর্ধের মুদ্রানীতিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির প্রবৃদ্ধি সহায়ক মুদ্রানীতি বলে যে ঘোষণা দিয়েছেন তা সাফল্যের সাথে অর্জিত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত। তারা জানান, ব্যাপকভাবে আলোচিত ঋণ ও আমানত অনুপাত (এডিআর) কমানোর বিষয়টি পরিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে নি কর্তৃপক্ষ ।

বিদ্যমান নগদ সংরক্ষণ অনুপাত (সিসিআর) ও বিধিবদ্ধ তারল্য অনুপাত (এসএলআর) সংরক্ষণের পর যে সীমা পর্যন্ত ঋণ প্রদান করা যায় অনেক বেসরকারি ব্যাংক সে সীমার অতিরিক্ত ঋণ বিতরণ করার অভিযোগ আছে। এক অঙ্কের সুদের হার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সরাসরি নির্দেশনা থাকলেও তা সবাই মেনে চলছে না বলে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ।

এই পরিপ্রেক্ষিতে আসন্ন মুদ্রানীতি নিয়ে প্রত্যাশার বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিস’র সভাপতি মাহাবুবুল আলম বলেন, ব্যবসায়ীরা মসৃণ ও স্থিতিশীল অর্থনৈতিক সেক্টর চাই যাতে ব্যবসায়ীরা সহজে ব্যবসা করতে পারে। তাছাড়া দ্রুত এক অঙ্কের সুদের হার ব্যাপকভাবে কার্যকর করতে আরো তৎপর হতে হবে। অর্থনীতির বড় বাজার প্ুঁজিবাজারে মুদ্রানীতির সরাসরি প্রভাব না থাকলেও পরোক্ষভাবে এর প্রভাবকে অস্বীকার করা যায় না। মুদ্রানীতির অনেক পলিসি পুঁজিবাজারকে প্রভাবিত করে।

এম সিকিউরিটিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী নুরুল আজম তাঁর প্রত্যাশার কথা জানাতে গিয়ে বলেন, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আনার পরিকল্পনা নিলে পুঁজিবাজার আরো বেগবান হবে। ক্লাসিফাইড লোনগুলো রিশিডিউল না করলে পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। নগদ সংরক্ষণ অনুপাত (সিসিআর) ও বিধিবদ্ধ তারল্য অনুপাত (এসএলআর) কমিয়ে দিলে পুঁজিবাজারে ভালো প্রভাব পড়বে। পুঁজিবাজারের সাথে পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অর্থমন্ত্রী হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা উৎসাহিত পাবে।

নারীর ক্ষমতায়নে মুদ্রানীতিতে অনেক পলিসি বিশেষকরে এসএমই খাতে প্রণোদনা দিয়ে থাকে। তাছাড়া নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা আনুপাতিক হারে বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও আরজেএম ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জসীম আহমেদ আসন্ন মুদ্রানীতিতে তাঁর প্রত্যাশার কথা জানাতে গিয়ে বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তাই ব্যাংকের তারল্য বাড়ানো প্রয়োজন। এইজন্য সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি কাম্য। তাছাড়া ডলারের মূল্য একটি নির্দিষ্ট সীমারেখার মধ্যে রাখতে হবে।

প্রসঙ্গত, মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রেখে মুদ্রার সরবরাহ বৃদ্ধি ও জিডিপির প্রবৃদ্ধিকে ত্বরাণ্বিত করার পাশাপাশি কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, দারিদ্র বিমোচন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উন্নয়ন ঘটাতে মুদ্রানীতি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।