DSEদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১৫টি রুগ্ন কোম্পানি বছরের পর বছর শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত করছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে চারটি কোম্পানি বছরজুড়ে বিনা কারণে বাজারে অস্থিরতা তৈরী করে চলেছে। এ চারটি কোম্পানির বিষয়ে অবশেষে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এ চার কোম্পানি স্টক এক্সচেঞ্জটিতে তালিকাভুক্ত থাকবে কি থাকবে না- ডিএসইর পরবর্তী পর্ষদে সে সিদ্ধান্ত আসবে।

এর পর বাকি রুগ্ন কোম্পানিগুলোর ভাগ্য নির্ধারিত হবে। সংশ্নিষ্ট একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। কোম্পানি চারটি হলো: ইমাম বাটন, সাভার রিফ্যাক্টরিজ, মেঘনা পেট এবং মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক্ক লিমিটেড। ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনাসহ শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে না পারার কারণ ব্যাখ্যা করতে গত বছরের ৭ আগস্ট ১৫ কোম্পানিকে চিঠি দিয়েছিল ডিএসই। এর মধ্যে এ চার কোম্পানিও ছিল।

বাকি ১১ কোম্পানি হলো: সমতা লেদার, জুট স্পিনার্স, তুংহাই নিটিং, সিএনএটেক্স, দুলামিয়া কটন, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, শ্যামপুর সুগার মিলস, ঝিলবাংলা সুগার মিলস, বেক্সিমকো সিনথেটিক্স, শাইনপুকুর সিরামিক্স।

ডিএসই সূত্র জানায়, চার কোম্পানির বিষয়ে সব আইনি প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। তারপরও শেষবারের মতো এদের বক্তব্য রাখার সুযোগ দিতে গত বুধবার শুনানিতে ডাকা হয়। এর পরই এগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে পর্ষদ। বাকি দশ কোম্পানির মধ্যে সমতা লেদার, জুট স্পিনার্স, তুংহাই নিটিং, সিএনএটেক্স এবং দুলামিয়া কটনের কার্যালয় ও কারখানার প্রকৃত অবস্থা জানতে সরেজমিন পরিদর্শন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির অনুমতি সাপেক্ষে বাকি পাঁচ কোম্পানিও পরিদর্শন করা হবে।

ডিএসই সূত্রে জানা যায়, স্বাভাবিক ব্যবসা কার্যক্রম না চলা এবং শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে না পারার ব্যর্থতার কারণ তলব করে দেওয়া চিঠির জবাব সেপ্টেম্বরের মধ্যে পেয়েছিল ডিএসই। তবে কোনো কোম্পানিরই ব্যাখ্যা সন্তোষজনক ছিল না। এর পর তাদের সরাসরি উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য শুনানিতে ডাকা হয়। সেখানেও গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হয় কোম্পানিগুলো।

এর মধ্যে কোনো কোনো কোম্পানির প্রতিনিধি শুনানিতে অংশ নিয়ে স্পষ্ট জানিয়েছেন, তাদের পক্ষে স্বাভাবিক ব্যবসা কার্যক্রমে ফেরার সম্ভাবনা এবং শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেওয়া সম্ভব নয়। কোম্পানিগুলো আরও জানায়, চাইলে ডিএসই তালিকাভুক্তির বিষয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

তবে কয়েকটি কোম্পানি জানায়, সময় দেওয়া হলে পুনরায় স্বাভাবিক ব্যবসা কার্যক্রমে ফেরার এবং শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেওয়ার বিষয়ে তারা আশাবাদী। যদিও আশাবাদের পক্ষে গ্রহণযোগ্য ও বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা তারা জানাতে পারেননি।

উৎপাদন কার্যক্রম সর্ম্পূন রুপে বন্ধ এবং পাঁচ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ কোম্পানিগুলোকে তালিকাচ্যুত করার উদ্দেশ্য নিয়ে লিস্টিং রেগুলেশন্সের ৫১(১)(এ) ধারার ক্ষমতাবলে সংশ্নিষ্ট কোম্পানিগুলোকে চিঠি দিয়েছিল স্টক এক্সচেঞ্জ। এ ছাড়া এ বিধানই অন্তত তিন বছর ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত ক্ষমতা স্টক এক্সচেঞ্জকে দিয়েছে।

এ বিষয়ে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, দেশের শেয়ারবাজারে অনেক ভালো কোম্পানির মাঝে কিছু খারাপ কোম্পানিও আছে। এগুলো বাজারের সুনাম নষ্ট করছে। বেশিরভাগ মানুষ মনে করে শেয়ারবাজার জুয়ার বাজার। এই দুর্নাম তারা ঘোচাতে চান। বাজারকে পরিশুদ্ধ করে বিনিয়োগে আস্থা বাড়াতে খারাপ কোম্পানিগুলোর বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নেবে ডিএসই। বেশ কিছু কোম্পানি যেখানে স্পষ্ট বলেছে, তারা লভ্যাংশ দিতে পারবে না, উৎপাদনে ফিরতে পারবে না।

এমন কোম্পানি কেন ডিএসইতে থাকবে এমন প্রশ্ন তার। রকিবুর রহমান জানান, শুধু ১৪ বা ১৫ কোম্পানিতে ডিএসইর চলমান শুদ্ধি অভিযান থেমে থাকবে না। যখনই কোনো কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ সুরক্ষায় ব্যর্থ হবে, তখন সে কোম্পানির বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হবে না ডিএসই।