সাজিদ খান ও আবদুর রাজ্জাক, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজার উন্নয়ন ছাড়া কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করা কঠিন। তাই পুঁজিবাজারের উন্নয়নের একগুচ্ছ পরিকল্পনা এখন অর্থমন্ত্রীর হাতে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে পুঁজিবাজারের দীর্ঘমেয়াদে জন্য টেকসই ও স্থিতিশীল হবে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সঙ্গে চীনা শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কৌশলগত অংশীদারিত্বের সুফল হতে শুরু করছে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও।

এজন্য দেশের পুঁজিবাজারকে মূলধন উত্তোলনের জন্য যথোপযুক্ত জায়গা হিসেবে তৈরি করতে হবে। ডিএসইতে নতুন নতুন প্রডাক্ট চালু, বিভিন্ন টেকনিক্যাল অগ্রগতি, এসএমইবান্ধব প্লাটফর্ম গড়ে তোলাসহ এক্সচেঞ্জের টেকসই উন্নয়নে একটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় কাজ করতে শুরু করছে।

নতুন মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরে পরিকল্পনা করছে আওয়ামী লীগ সরকার। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এ লক্ষ্য অর্জন করে দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি ২০৩০ সাল পর্যন্ত অব্যাহত রাখার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে।

টেকসই উন্নয়নের এ লক্ষ্য অর্জনে ব্যবসা-বিনিয়োগ সম্প্রসারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন, ব্যাংকঋণ পাওয়া সহজ করে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে দেউলিয়া আইন প্রয়োগ ও কর কর্মকর্তাদের ‘স্বেচ্ছাচারিতা’ কমানোর ওপর জোর দেবে সরকার।

পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রাজস্ব আদায় বাড়িয়ে দ্রুত অবকাঠামো উন্নয়নে বৈদেশিক ঋণনির্ভরতা কমানো হবে। জিডিপির অনুপাতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ দ্বিগুণ করার লক্ষ্যও নিয়েছে সরকার। এ ছাড়া তরুণদের উদ্যোগী করে তুলতে বিনা জামানতে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হবে। গড় আয়ু বাড়ায় ভবিষ্যতে বৃদ্ধ পুরুষদের জন্যও নানা কর্মসূচি নিয়ে কল্যাণ রাষ্ট্রের দিকে হাঁটবে বাংলাদেশ।

গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়ী আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে পুনঃনিয়োগ পাওয়া ড. মসিউর রহমান ‘সামষ্টিক অর্থনীতির কৌশল এবং কতিপয় কাঠামোগত/খাতওয়ারি বিষয়’ শিরোনামে ২০ পৃষ্ঠার এক গোপন প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে।

রাজস্ব খাতে সংস্কার, ব্যাংক খাতের অনিয়ম বন্ধ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আঞ্চলিক বৈষম্য রোধ, পুঁজিবাজারের বিকাশ, উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনসহ দেশের টেকসই উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন বিষয়ের সমস্যা, সম্ভাবনা ও করণীয় নিয়ে তৈরি বিস্তারিত এ প্রতিবেদন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবহিত বলে উল্লেখ করেছেন মসিউর।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মসিউর রহমান দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী কোনো পরামর্শ চাইলে তা আমাকে দিতে হয়। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গেও আমার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা, কথাবার্তা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্যই হলো টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা।

২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে উন্নীত হবে আশা করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘২০১৭-১৮ সালে জাতীয় আয় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ (প্রায় ৮ শতাংশ)। ২০২৫ সালের ভেতর প্রবৃদ্ধির হার ১০ শতাংশে উন্নীত হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে উন্নত দেশের মর্যাদা অর্জনের জন্য বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধির হার ১০ শতাংশে অব্যাহত রাখতে হবে।’
উচ্চ হারে প্রবৃদ্ধির জন্য এডিপি বরাদ্দ জিডিপির অনুপাতে এখনকার চেয়ে দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করেছেন মসিউর।

বলেছেন, গত কয়েক বছর জাতীয় আয়ের ৪ দশমিক ৫ শতাংশ উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ থাকছে। এটিকে বাড়িয়ে ৯ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। উন্নয়নের জন্য বিদেশি ঋণের ওপর অতিনির্ভরতা কমানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘অতিমাত্রায় বৈদেশিক ঋণ বৃদ্ধি সাসটেইনেবল (টেকসই) নয়।’

পুঁজিবাজার উন্নয়ন নিয়ে ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সম্পর্কে ধারণার অভাবে ছোট বিনিয়োগকারীরা লোকসান দেয়, হতাশায় ভোগে। পুঁজিবাজার সম্পর্কে কোনো দ্রুত বা আকস্মিক পদক্ষেপ না নিয়ে পর্যায়ক্রমে ত্রুটি দূর করে, নতুন ও বিচিত্র শেয়ার আনার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)-এর নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে এসব উদ্যোগ আন্তরিকতার সঙ্গে কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। শুধু কথার কথা বললে হবে না। সংস্কার ও পরিকল্পনা কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি পুঁজিবাজার উন্নয়ন ঘটাতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।

বিএসইসির চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করতে হবে। সেজন্য প্রয়োজন বিদেশী বিনিযোগ। সম্প্রতি চীনের দুইটি কোম্পানি বাংলাদেশের পুঁজিবাজাওে বিনিয়োগে চুক্তি করেছে। এতে করে পুঁজিবাজারে স্বচ্চতা ও জবাবদিহিতা বাড়বে।

তিনি বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারের প্রধান সমস্যা হলো, ক্ষুদ্র বিনিযোগকারীরা গুজবের ওপর নির্ভর করে বিনিয়োগ করে। এ ছাড়াও মুল প্রবন্ধে অর্থনীদিতে টেকসই উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তেমনি পুঁজিবাজার সম্পর্কে কোনো দ্রুত বা আকস্মিক পদক্ষেপ না নিয়ে পর্যায়ক্রমে ত্রুটি দূর করে, নতুন ও বিচিত্র শেয়ার আনার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক অংশগ্রহণ বাড়ালে বাজারের বড় ধরনের পরিবর্তন হবে।