আবদুর রাজ্জাক, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে পর্যবেক্ষণের পর বিনিয়োগ বাড়াতে শুরু করেছে দেশী বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানি ও বিনিয়োগকারী। তারা বাজারে শেয়ার বিক্রির চেয়ে বেশি পরিমাণে কিনছে। বাজারের লেনদেন বিশ্লেষণ করে এমনটি জানা গেছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেশ আকর্ষণীয় হওয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

চীনা কনসোর্টিয়ামের অংশগ্রহণ প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের কাছে দেশের পুঁজিবাজার নতুন করে উপস্থিত হচ্ছে। পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর হাতের নাগালে রয়েছে, যে কারণে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বাজারের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

অন্যদিকে চীনা কসসোর্টিয়াম দেশের পুঁজিবাজারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় প্রবাসীদের এই বাজারের প্রতি আগ্রহ আরও বাড়বে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিমত, বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীই দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করতে পছন্দ করেন। আর তারা বাজারে ঢুকতে চান যখন বেশিরভাগ শেয়ারের দর ক্রয়ের অনুক‚লে থাকে। গত এক বছরের বেশি সময় ধরেই দেশের পুঁজিবাজারে এমন পরিবেশ বিরাজ করছে, যে কারণে বাজারের প্রতি সবার আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা অনেক ভেবেচিন্তে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেন। বেশিরভাগ সময়ই তারা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করে থাকেন। ফলে তাদের লোকসান কম হয়। তিনি বলেন, দেশের পুঁজিবাজারের সঙ্গে চীনের যুক্ত হওয়া আমাদের অর্থনীতি ও পুঁজিবাজার উভয়ের জন্য ভালো। আর বাজার হলে দেশি-বিদেশি সব ধরনের বিনিয়োগ আরও বাড়বে।

পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ তানিয়া শারমিন বলেন, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই। বাজারের নেতিবাচক ইস্যুগুলো নিয়ন্ত্রক সংস্থা দূর করেছে। এ ছাড়া অনেক ভালো কোম্পানির শেয়ারের মূল্য আকর্ষণীয় পর্যায়ে নেমে এসেছে। ফলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যার প্রতিফলন খুব শিগগিরই দেখা যাবে পুঁজিবাজারে।

এদিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩১২ কোম্পানির মধ্যে ১৪৩ কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে। অন্যদিকে ১১৩ কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে। আর ৫৬ কোম্পানিতে অপরিবর্তিত রয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে ডিসেম্বর মাসে কোম্পানিগুলোর হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, আলোচ্য সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ঢাকা ইন্সুরেন্স, বিডি অটোকারস, প্যারামাউন্ট ইন্সুরেন্স, এমারেন্ড অয়েল ও ইস্টার্ন কেবলসে। আর সবচেয়ে বেশি কমেছে আরডি ফুড, নূরানি ডাইং ও রূপালী লাইফ ইন্সুরেন্সে।
তথ্যমতে, ঢাকা ইন্সুরেন্সে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে ৮.৮৪ শতাংশ,

বিডি অটোকারসে ৬.০৫ শতাংশ, প্যারামাউন্ট ইন্সুরেন্সে ৫.৬৪ শতাংশ, ইস্টার্ন কেবলসে ৪.৮৩ শতাংশ এবং এমারেন্ড অয়েলে ৪.৭৪ শতাংশ। অন্যদিকে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে আরডি ফুডে ৮.৯৯ শতাংশ, নূরানি ডাইংয়ে ৮.২৫ শতাংশ এবং রূপালী লাইফ ইন্সুরেন্সে ৫.৪০ শতাংশ। খাতওয়ারী উল্লেখযোগ্য হলো: ইন্সুরেন্স খাত, প্রকৌশল খাত, খাদ্য খাত, জ্বালানি খাত, সিমেন্ট খাত, তথ্য প্রযুক্তি খাত ও সিরামিক খাত।

ইন্সুরেন্স খাত: প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে ২৩ কোম্পানিতে, কমেছে ১৬ কোম্পানিতে এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৮ কোম্পানিতে। বৃদ্ধির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ঢাকা ইন্সুরেন্স, প্যারাম্উান্ট ইন্সুরেন্স, প্রাইম ইন্সুরেন্স ও সানলাইফ ইন্সুরেন্স। কমার মধ্যে রয়েছে-রূপালী লাইফ, রিপাবলিক, প্রাইম লাইফ, প্রগ্রতি লাইফ ও সন্ধানী লাইফ ইন্সুরেন্স।

প্রকৌশল খাত: প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে প্রকৌশল খাতের ১৮ কোম্পানিতে, কমেছে ১২ কোম্পানিতে এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৬ কোম্পানিতে। বৃদ্ধির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: বিডি অটোকারস, ইস্টার্ন কেবলস, ইফাদ অটোস, নাভানা সিএনজি ও ওয়াইমেক্স। কমার মধ্যে রয়েছে: আজিজ পাইপস, দেশবন্ধু পলিমার ও সিঙ্গার বাংলাদেশ।

জ্বালানি খাত: প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে জ্বালানি খাতের ১৩ কোম্পানিতে, কমেছে ৫ কোম্পানিতে এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১ কোম্পানিতে। বৃদ্ধির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-মবিল যমুনা, মেঘনা পেট্রোলিয়াম ও শাহাজিবাজার পাওয়ারে। এসব কোম্পানিতে এক শতাংশের মতো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে। আর কমেছে-ইন্ট্রাকো, কেপিসিএল ও ইউনাইটেড পাওয়ারে। এসব কোম্পানিতে কমার পরিমাণ এক শতাংশেরও কম।