দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বহুতল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের জন্য সাধারণ বীমা বাধ্যতামূলক করা এবং ব্যাংকঋণ গ্রহণকারী ব্যক্তির জন্য জীবন বীমা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দিয়েছে দেশের বীমা উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ)। গত মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের কার্যালয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এসব প্রস্তাব দেন সংগঠনের নেতারা।

সাক্ষাৎশেষে বিআইএর প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বীমা খাতে ভ্যাট-ট্যাক্সসহ নানা সমস্যা রয়েছে। আমরা লিখিতভাবে আরো কিছু বিষয় অর্থমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেছি। তিনি বলেছেন, সমস্যা সমাধানে সবাইকে নিয়ে আমাদের সঙ্গে বসবেন।

অর্থমন্ত্রীকে দেয়া লিখিত পত্রে বিআইএ বহুতল ভবন, শপিং মলের মতো স্থাপনাগুলোর জন্য সাধারণ বীমা বাধ্যতামূলক করা, ব্যাংকের ঋণগ্রহীতা ব্যক্তির জীবন বীমা পলিসি বাধ্যতামূলক করা, পুনর্বীমার কমিশনের ওপর ভ্যাট বাতিল করা, জীবন বীমার গ্রাহকদের মুনাফার ওপর গেইন ট্যাক্স প্রত্যাহার, ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর বীমা করার অধিকার রহিতকরণ এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে বীমা পলিসি বিক্রির সুযোগ তথা ব্যাংক্যাসুরেন্স চালুর প্রস্তাব দেয়।

বাধ্যতামূলক বীমা প্রসঙ্গে বিআইএ নেতারা বলেন, দেশে বর্তমানে অনেক বহুতলবিশিষ্ট আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন এবং শপিং মল রয়েছে। এ স্থাপনাগুলোকে বাধ্যতামূলক বীমার আওতায় আনা হলে সরকারের রাজস্ব বাড়বে, আবার স্থাপনাগুলোরও আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত হবে। তারা আরো বলেন, দেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো থেকে বিপুলসংখ্যক ব্যক্তি ঋণ গ্রহণ করেন।

দেনা রেখে ঋণগ্রহীতা মারা গেলে তাদের উত্তরাধিকারীদের অনেককে এ ঋণ শোধ করতে গিয়ে সর্বস্ব খোয়াতে হয়। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ঋণ বিতরণের সময় আবেদনকারীর ঋণের সমপরিমাণ অংকের জীবন বীমা আবশ্যক করা হলে, তার মৃত্যুর পর ঋণের অপরিশোধিত অংশ বীমা কোম্পানি পরিশোধ করে দেবে। তাহলে উত্তরাধিকারীরা চাপে পড়বেন না। এ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হলে, ব্যাংকের ঋণ আদায়ের সুযোগ বাড়বে এবং বীমা শিল্পেরও গ্রাহক বাড়বে।

বীমাকে আরো সহজে সব শ্রেণীর মানুষের কাছে নিয়ে যেতে ব্যাংক্যা ইন্সুরেন্স চালুরও প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনটি। ব্যাংকের বিভিন্ন বিক্রয় চ্যানেল থেকে বীমা পণ্যগুলো বিক্রির সুবিধা চালু হলে ব্যাংকের শাখা, কর্মকর্তা-কর্মচারী, টেলার, রিলেশনশিপ ম্যানেজার সবাই বীমার পয়েন্ট অব সেলস ও পয়েন্ট অব কন্টাক্টে পরিণত হবে।

এ ব্যবস্থায় ব্যাংক ও বীমা কমিশন ভাগাভাগি করে পাবে। এক ছাদের নিচে ব্যাংকিং ও বীমার ওয়ান স্টপ সুবিধা সেবা ব্যবস্থাপনায় উন্নতির পাশাপাশি গ্রাহকদের আস্থা ও বিশ্বাস বাড়াবে। প্রতিবেশী ভারত, শ্রীলংকা থেকে শুরু করে দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, হংকং, সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশে এ চ্যানেলে বীমাসেবার সুবিধা দেয়া হচ্ছে।

বীমা খাতের বিদ্যমান সমস্যাগুলো সম্পর্কে বিআইএ পুনর্বীমা কমিশনের বিপরীতে উেস ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের জোর দাবি জানিয়েছে। বক্তব্যে তারা লিখেছে, বীমা কোম্পানি প্রাপ্ত সব প্রিমিয়াম আয়ের ওপর সরকারকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিয়ে যাচ্ছে। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার স্বার্থে এ প্রিমিয়ামের একটি অংশ পুনর্বীমার প্রিমিয়াম হিসেবে পুনর্বীমাকারী প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে পুনর্বীমা সুবিধা নেয়। অর্জিত প্রিমিয়ামের একটি অংশই সেখানে ব্যয় করা হয় বিধায় পুনর্বীমায় আবারো ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রদান দ্বৈত কর বিবেচিত হবে। পুনর্বীমা কমিশনের ওপর ভ্যাট আরোপের কোনো সুযোগ নেই।