সাজিদ খান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশের রাজনীতি পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেও অস্থিতিশীল রয়েছে পুঁজিবাজার। বাজার আজ ভাল তো কাল খারাপ। এ পরিস্থিতির মধ্যে দীর্ঘদিন চলছে। নির্বাচনের পর জানুয়ারী মাসে পুঁজিবাজার ভাল থাকলেও ফেব্রুয়ারী মাস জুড়ে অস্থিতিশীল ছিল। ফলে বিনিয়োগকারীরা একটি স্থিতিশীল বাজারের জন্য বছরের পর বছর দাবী জানালো ও এখনো স্থিতিশীল বাজার উপহার দিতে পারেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

তাছাড়া নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি ঘোলাটে থাকলেও নির্বাচনের পর পুঁজিবাজার গতিশীল দেখা গিয়েছিল। কিন্তু সেটি এখন আর নেই। আসলে এখানে মূল কারণ হচ্ছে ফান্ডের ঘাটতি। আবার বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী ডে ট্রেডার। তাদের তুলনায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী খুবই নগণ্য। বিশেষ করে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মার্চেন্ট ব্যাংক প্রভৃতি। অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর নিষ্কিয়তা থাকার কারণে বাজারে সূচক ও টার্নওভার কমে যাচ্ছে।

বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছে, দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যর্থতা বাজার অস্থিতিশীলতার নেপথ্যের প্রধান অন্তরায়।বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট দূর করতে পারলেই বাজারে তারল্য সংকট কেটে যাবে বলে তারা মনে করেন।বিনিয়োগকারীদের বাজারে ফেরাতে সর্বপ্রথম বাজারের কাঠামোগত পরিবর্তন ও বিনিয়োগকৃত অর্থের নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে। বাজারের লেনদেন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে এমন ইস্যুগুলোর উন্নয়ন জরুরি।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বাজারের গতিশীলতা ও যোগানের নামে প্রায় প্রত্যেক কমিশন সভায় নতুন নতুন কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তালিকাভুক্তির পর কোম্পানিগুলোর মুনাফা নিন্মমুখী হচ্ছে। ২০১০ সালের লোকসান কাটাতে যখন বিনিয়োগকারীরা ব্যস্ত সেখানে নতুন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে আবারো লোকসানের ফাঁদে পড়ছে বিনিয়োগকারীরা। এদিকে, ২০১০ সালের ধস-পরবর্তী সময়ে এখন পর্যন্ত ৯ দফায় বাজারের সার্বিক লেনদেন ও সূচক ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করলেও প্রতিবারই তলানিতে নেমে এসেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমাদের পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারী এক বা দুই শতাংশের নিচে। কিন্ত দেশের অর্থনীতি গতিশীল অনুযায়ী বিদেশি বিনিয়োগ আরও বেশি হওয়ার কথা। অথচ ভারত এবং পাকিস্তানে দেশের পুঁজিবাজারে তুলনায় বিনিয়োগ অনেক বেশি। আসলে দেশের বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা।

দেশি-বিদেশি কোম্পানি বাজারে আসতে গেলে হাজারও বাধা অতিক্রম করতে হয়। ফলে ভালো মানের দেশি-বিদেশি কোম্পানি আসছে না। এটি দূর করা গেলে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ার পাশাপাশি বাজার স¤প্রসারিত এবং গতিশীল ধারা বজায় থাকবে বলেও মনে করছেন তারা।

তবে কেউ কেউ বলছেন, দেশের অর্থনীতির সব সূচকগুলো ইতিবাচক। দেশের জিডিপি গ্রোথ রেট সাত দশমিক আট শতাংশ। আবার নতুন অর্থমন্ত্রী পেয়েছি। অর্থাৎ সবদিকে ইতিবাচক ধারা বজায় রয়েছে। দেশের অর্থনীতি উন্নয়নের তুলনায় পুঁজিবাজার সেভাবে এগোচ্ছে না। যদিও পুঁজিবাজার একদিনের বিষয় নয়।

যেখানে রাতারাতি বড় ধরনের পরিবর্তন আশা করাও সমীচীন নয়। তবে সার্বিক পরিস্থিতিতে হাজার কোটি টাকার লেনদেন করার সক্ষমতা দেশের পুঁজিবাজারে রয়েছে। কাজেই এ বিষয়টিতে সকলের মনোযোগ দেয়া জরুরি।

অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা বলছেন, পুঁজিবাজারে উত্থান-পতন থাকবেই, এটাই স্বাভাবিক। আসলে বাজারের মূল সমস্যা হচ্ছে, আইপিও’র মাধ্যমে যে সব কোম্পানিগুলো বাজারে আসছে সেগুলো খুব একটা মানসম্মত নয়। তবে পরিস্থিতি যাই হোকনা কেন বিনিয়োগকারীকে বাজার সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখতে হবে।

অর্থাৎ বাজার সম্পর্কে যার যত বেশি ধারণা থাকবে ওইসব বিনিয়োগকারীরা তত বেশি লাভবান হবেন। যদি বাজার সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ইনটেলিজেন্স না থাকে সেক্ষেত্রে ওই সব বিনিয়োগকারীরা টিকে থাকা মুশকিল বলেও মনে করছেন তারা।