দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ঋণ প্রবৃদ্ধির অনুপাতে আমানত প্রবৃদ্ধি হয়নি। ফলে বিদায়ী বছরের পুরো সময় তারল্য সংকটে কেটেছে দেশের ব্যাংকিং খাতের। নির্বাচন ঘিরে গ্রাহকরা বড় অংকের আমানত তুলে নেয়ায় তারল্য সংকট আরো বেড়েছে। নতুন বছরের শুরুতেও এ থেকে বেরোতে পারছে না বেসরকারি ব্যাংকগুলো। আমানত সংগ্রহের প্রতিযোগিতার কারণে বছরের শুরুতেই মেয়াদি আমানতের সুদের হার ১০ শতাংশে উঠে গেছে। সব মিলিয়ে শিগগিরই তারল্য সংকট কাটবে, এমন আভাস দিতে পারছেন না ব্যাংকাররা।

ব্যাংকাররা বলছেন, তারল্য সংকটের কারণে দেশের ব্যাংকিং খাতে আমানতের সুদহার বেড়ে গিয়েছিল। এতে বেড়ে গিয়েছিল ঋণের সুদহারও। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আমানত ও ঋণের সুদহার যথাক্রমে ৬ ও ৯ শতাংশে বেঁধে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আমানত সংকটের কারণে তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায়নি। ২০১৯ সাল শুরু হয়েছে আমানতের সংকট দিয়েই। বন্ড মার্কেটের সম্প্রসারণ, বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও সঞ্চয়পত্রের সুদহার না কমালে তারল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না।

তেমনি তীব্র তারল্য সংকট চলছে দেশের পুঁজিবাজারে। তাতে কমছে মূল্যসূচক। লেনদেন আটকে আছে ৫শ কোটি টাকার ঘরে। চলমান এই মন্দার প্রধান কারণ হিসেবে বেপরোয়া প্লেসমেন্টকে দায়ী করছে ডিএসই ব্রোকারর্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)।

ডিএসইর ট্রেকহোল্ডারদের এই ফোরাম মনে করছে, প্লেসমেন্টের জন্য প্রতিনিয়ত বাজার থেকে টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে। একদিকে প্লেসমেন্টধারীরা কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়ার পর শেয়ার বিক্রি করে টাকা তুলে নিচ্ছে। অন্যদিকে তাদের এই লাভ দেখে অন্য অনেক বিনিয়োগকারী সেকেন্ডারি বাজার থেকে টাকা তুলে নিয়ে প্লেসমেন্ট শেয়ার কিনছে। এছাড়া গত কয়েক বছরে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বেশিরভাগই নগদ লভ্যাংশ না দেওয়ায় বিনিয়োগকারীদের কাছে টাকা আসছে না।

আজ বুধবার বিকালে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) এর সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ডিএসই ব্রোকার অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) তাদের ওই পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছে। বাজারে তারল্য সংকট কাটাতে সম্ভাব্য নতুন বিনিয়োগকারীদের আগ্রহী করার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে মত দেন তারা।

তাদের মতে, নতুন বিনিয়োগকারীদেরকে আকৃষ্ট করতে হলে ভালো ও প্রকৃত অর্থেই লাভজনক- এমন কোম্পানিগুলোকে বাজারে নিয়ে আসতে হবে। ভালো ভালো কোম্পানির আইপিও (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) নিয়ে আসতে আইসিবির সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টকে আরও সক্রিয় করার আহ্বান জানান তারা। পাশাপাশি সরকারি কোম্পানির শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয় বৈঠকে। বৈঠক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

আইসিবিতে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ছানাউল হক, ডিবিএর প্রেসিডেন্ট মোঃ শাকিল রিজভী, সহ-সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসেন, পরিচালক রিচার্ড ডি রোজারিও প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিবিএ’র একজন পরিচালক বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, এই মুহুর্তে বেপরোয়া প্লেসমেন্ট ব্যবসা পুঁজিবাজারের সবচেয়ে বড় সমস্যা। তিনি বলেন, একটি চক্র কৌশলে এই ব্যবসার মাধ্যমে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

তিনি বলেন, সাধারণভাবে প্লেসমেন্ট দূষণীয় নয়। আমরা এটি বন্ধের পক্ষেও নই। অনেক সময় ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য জরুরি প্রয়োজনে উদ্যোক্তারা