দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই জিপে অ্যাপসের মাধ্যমে ই-ওয়ালেট সার্ভিস পরিচালনা করছে গ্রামীণফোন। অনুমোদন না থাকায় ওই সার্ভিস বন্ধে গত ডিসেম্বর মাসে গ্রামীণফোনকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তা সত্ত্বেও মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিটি ই-ওয়ালেট সার্ভিস বন্ধ করেনি। এ অবস্থায় গ্রামীণফোনের ই-ওয়ালেট বন্ধে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১০ সালের মার্চে গ্রামীণ ব্যাংকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মোবাইলের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়ের ইলেকট্রনিক টিকিট বিক্রির অনাপত্তি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সাতটি শর্তে দেওয়া ওই অনাপত্তিপত্রের ৬ নম্বর শর্ত হিসেবে বলা হয় যে, বর্ণিত ব্র্যান্ডের আওতায় নতুন কোনো সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন নিতে হবে।

২০১২ সালে গ্রামীণফোন জিপে অ্যাপসের মাধ্যমে মোবিক্যাশ ব্র্যান্ড নামের আওতায় ইউটিলিটি বিল কালেকশন সেবা চালুর বিষয়ে অনুমোদন নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। তখনো এ শর্ত জুড়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, শর্ত ভঙ্গ করে গ্রামীণফোন কোনো রকম অনুমোদন ছাড়াই জিপে’র মাধ্যমে ই-ওয়ালেট সেবা দেওয়া শুরু করেছে। গ্রামীণফোনের বিভিন্ন গ্রাহকের মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠিয়ে এ বিষয়ে প্রচারও চালাচ্ছে অপারেটরটি। এ পরিপ্রেক্ষিতে গত পাঁচ ডিসেম্বর গ্রামী+ণফোনের এমডি ও সিইও বরাবর চিঠি দিয়ে ই-ওয়ালেট সেবা বন্ধে নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্টের উপমহাব্যবস্থাপক মাসুমা সুলতানা স্বাক্ষরিত গ্রামীণফোনের এমডিকে লেখা চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি বিভিন্ন বিজ্ঞাপন ও গ্রাহকের মোবাইলে খুদেবার্তার মাধ্যমে জিপে ওয়ালেট সেবার বিষয়ে আপনাদের প্রচার চালাতে দেখা যাচ্ছে। আপনাদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেমস রেগুলেশনস ২০১৪ এর ৫(১) অনুযায়ী এ ধরনের ই-ওয়ালেট সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) লাইসেন্স গ্রহণের আবশ্যকতা রয়েছে।”

“এমতাবস্থায়, জিপে ব্রান্ডের আওতায় প্রদত্ত আপনাদের সব ধরনের আর্থিক সেবা অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে” যোগ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ই-ওয়ালেট সেবা বন্ধে গত ডিসেম্বরে নির্দেশনা পাঠানোর পরও গ্রামীণফোন এখনো ওই সেবা চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে কোম্পানিটির ই-ওয়ালেট সেবা বন্ধে বিটিআরসির দ্বারস্থ হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিটিআরসির চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হককে লেখা চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেমস রেগুলেশনস অনুযায়ী, ই-ওয়ালেট সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পিএসপি লাইসেন্স নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। লাইসেন্স নেওয়া পিএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোর সব ধরনের কার্যক্রম বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকির আওতাধীন। কিন্তু গ্রামীণফোন কোনো ধরনের পিএসসি লাইসেন্স ছাড়াই এই ওয়ালেট সার্ভিস চালু করেছে।

পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক লীলা রশিদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলেছেন, এ সেবা বন্ধে ডিসেম্বরে গ্রামীণফোনকে চিঠি দেওয়া হয়। এখনো তারা তা বন্ধ করেনি। তাই গ্রামীণফোনের ই-ওয়ালেট সেবা বন্ধে বিটিআরসির চেয়ারম্যানের সহযোগিতা চেয়েছেন চিঠিতে।

“গ্রামীণফোন লিমিটেডের মতো একটি প্রতিষ্ঠান এভাবে অননুমোদিত ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে ইলেকট্রনিক মানি ইস্যু করলে তা সামগ্রিক অর্থনীতি এবং মুদ্রানীতিকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে” যোগ করেন তিনি।