দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি সাফকো স্পিনিং ডিভিডেন্ড নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। মাত্র ১ পয়সা আয়ের কোম্পানির ডিভিডেন্ড দেওয়ার সক্ষমতা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মাঝে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাছাড়া কোম্পানিটির মুনাফায় হঠাৎ ধস নামলে কোন কারন বিহীন শেয়ারের দাম বাড়ছে হু হু করে। ফলে এ কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন।

বস্ত্র খাতের স্বল্প মূলধনী কোম্পানি সাফকো স্পিনিং নো ডিভিডেন্ডের পথে রয়েছে বলে তারা মনে করছেন। এদিকে হঠাৎ পুঁজিবাজারে ‘আলাদিনের চেরাগ’র ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে সাফকো স্পিনিং লিমিটেড মাত্র এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়ে প্রায় ৩৭ শতাংশ ছাড়িয়েছে। একটি বিশেষ চক্র ইনসাইডার ট্রেডিং’র মাধ্যমে এ কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শীর্ষ এক ব্রোকারেজ হাউজের সহায়তায় এ কারসাজি হচ্ছে বলে সুত্রে জানায়।

বাজার বিশ্লেষনে দেখা গেছে, রোববার সাফকো স্পিনিংয়ের শেয়ার দর ছিলো ২৩.৩০ টাকায়। আজ লেনদেন শেষে এর শেয়ার দর দাঁড়ায় ২৪.৮০ টাকায়। অর্থাৎ আজ কোম্পানিটির শেয়ার দর ১.৫০ টাকা বা ৬.৪৩ শতাংশ বেড়েছে। এর মাধ্যমে সাফকো স্পিনিং ডিএসইর টপটেন গেইনার তালিকার শীর্ষে উঠে আসে।

ডিএসই সুত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ০.০১ টাকা। যা আগের বছর একই সময় শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ০.১২ টাকা। সে হিসেবে কোম্পানির ইপিএস কমেছে ০.১১ টাকা। এছাড়া ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর’১৮) শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ০.১০ টাকা। যা আগের বছর একই সময় শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ০.২৮ টাকা।

সে হিসেবে কোম্পানির ইপিএস কমেছে ০.১৮ টাকা। তেমনি শেয়ার প্রতি নেট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো (এনওসিএফপিএস) হয়েছে ২.৩৫ টাকা। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ সমাপ্ত সময়ে কোম্পানির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভি) হয়েছে ১৭.৭৭ টাকা।

২০০০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া সাফকো স্পিনিং পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ২৯ কোটি ৯৮ লাখ ২০ হাজার টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ারের সংখ্যা ২ কোটি ৯৯ লাখ ৮১ হাজার ৭১৬টি। প্রতিটি শেয়ারের ফেস ভ্যালু ১০ টাকা।

প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ারের মধ্যে ৩০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৬৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে শুন্য দশমিক ৬৩ শতাংশ শেয়ার। ২০১০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত গত আট বছরে কোম্পানিটি একবারও ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেয়নি। এর মধ্যে ১৫ সালে নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে। আর ক্যাটাগরি ধরে রাখার জন্য প্রতি বছর নামমাত্রা ডিভিডেন্ড দেয়।

এদিকে সাফকো স্পিনিং’র শেয়ার নিয়ে কারসাজির বিষয় দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণ সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসছে বিএসইসি। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সেচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নজরদারিতে রয়েছে কোম্পানিটি। আর মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নিয়ে গুজব ছড়ানোর মাধ্যমে এ কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বাড়ানো হচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

এর আগে শেয়ার দরে অস্বাভাবিক লেনদেনের পেছনে কারসাজি বা বিধি বহির্ভূতভাবে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ হয়েছে কিনা জানতে চেয়ে কোম্পানিকে শোকজ করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), কিন্তু কোম্পানির পক্ষ থেকে দর বাড়ার পেছনে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসইর এক প্রভাবশালী সদস্য বলেন, সাফকো স্পিনিং মতো কোম্পানি ডিভিডেন্ড দেওয়ার সক্ষমতা রাখতে না। আর নামমাত্রা কিছু ডিভিডেন্ডের নামে প্রতি বছর কাগজ ধরিয়ে দিচ্ছে। এ কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়ার কারন নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদন্ত করে দেখা উচিত। তা না হলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

কোম্পানিগুলোর বিষয়ে বিএসইসির সার্ভিলেন্স বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, যেহেতু কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে কোন মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ হয়নি তাই এইখানে অন্য কোনো পক্ষ থেকে কারসাজি হয়েছে কিনা আমরা খতিয়ে দেখছি। কারসাজির ঘটনা ঘটে থাকলে তদন্ত কমিটি গঠন করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিএসইসি এ ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেবে না।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, সাফকো স্পিনিং’র মতো কোম্পানির ডিভিডেন্ড দেওয়ার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। পুঁজিবাজারে এসব কোম্পানি নিয়ে যারা কারসাজি করে তাদের বিচার হওয়া উচিত। তিনি আরো বলেন, স্বল্প মূলধনি ও কম শেয়ারের ফাঁদে পা দিয়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা নি:স্ব হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিএসইসির হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

২০১০ সালে শেয়ারবাজার কারসাজি তদন্তে গঠিত কমিটির প্রধান খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ এ বিষয় দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, শেয়ারবাজারে চিহ্নিত কিছু ব্যক্তি কারসাজিতে জড়িত। এরা বিভিন্ন পন্থা ব্যবহার করে এই অনিয়ম করে যাচ্ছে। এসব অপরাধ দমনে কঠোর না হলে তারা থামবে না। আমার প্রতিবেদনে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে শাস্তির সুপারিশ করেছিলাম। অধিকতর তদন্ত করতে সুপারিশ করা হয়েছিল। কিছু তদন্ত পরে কমিশন করেছে। তবে শাস্তি দেওয়া হয়নি কাউকে। শুধু জরিমানা করে এদের ঠেকানো যাবে না। প্রয়োজনে শেয়ারবাজারে কাউকে নিষিদ্ধ করতে হবে।

এ বিষয় যোগাযোগ করা হলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, ‘সাফকো স্পিনিং’র অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির বিষয়টি আমাদের নজরে আসছে। বিষয়টি আমাদের ওয়ার্ক লিস্টের মধ্যে আছে। কোম্পানিটির বিষয় যাচাই বাছাই চলছে।