দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্তির মধ্য দিয়ে পুঁজিবাজারে শেয়ার সরবরাহ অব্যাহত থাকলেও প্রতিনিয়ত কমছে সার্বিক লেনদেন। পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে দৈনিক হাজার কোটি টাকারও বেশি লেনদেন হওয়ার কথা থাকলেও আস্থা সংকট, ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নিষ্কিয়তার কারণে লেনদেনে উন্নতি হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

তাছাড়া আস্থা ও তারল্য সংকট কোনভাবেই কাটিয়ে উঠতে পারছে না। আস্থা সঙ্কটের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিক্রয় চাপে তলানিতে পৌঁছেছে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর। এতে করে কোনভাবেই বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসছে না। ফলে পতনের কবল থেকে বের হতে পারছে না পুঁজিবাজার। এসব কারণে প্রতিদিনই মূলধন হারাচ্ছে ক্ষুদ্র নিয়োগকারীরা। বিগত এক বছরের ব্যবধানে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দর অস্বাভাবিক হারে দরপতন হয়েছে।

বাজারের এ অবস্থা দূর করা সম্ভব না হলে বিনিয়োগে আস্থা হারাতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। চলতি বছরের শুরু থেকে ভাল আচরন করলে ও ফ্রেবুয়ারী থেকে অস্থিও আচরন করছে পুঁজিবাজার। একটি খবর বিনিয়োগকারীদের আশান্বিত করলেও অন্য একটি খবরে তৈরি হয় আস্থাহীনতা।

এছাড়া বর্তমান বিএসইসির হাত ধরে পুঁজিবাজারে কিছু পরিবর্তন হলেও সংস্থাটির প্রতি বিনিয়োগকারীদের পরিপূর্ণ আস্থা ফেরেনি। মানহীন কিছু কোম্পানির পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বিনিয়োগকারীদের কাছে। এ ছাড়া কারসাজি ও আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে অনেক ক্ষেত্রে নমনীয়তা দেখিয়েছে সংস্থাটি, যা নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা স্থাপনে নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।

এ প্রসঙ্গে মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি এম এ হাফিজ বলেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট থেকেই বাজারের লেনদেনে এমন ভাটা দেখা দিয়েছে। বর্তমান পুঁজিবাজারে পলিসি সাপোর্ট থাকলেও ফিন্যালসিয়াল কোনো সাপোর্ট নেই। ফলে টানা দরপতনে বাজারবিমুখ হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

ডিএসইর সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আহমেদ রশীদ লালী বলেন, পুঁজিবাজারের সাথে সম্পৃক্ত বড় ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সম্পৃক্ততার অভাবে লেনদেনে মন্দা চলছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ১ হাজার থেকে ১২’শ কোটি টাকা লেনদেন হওয়ার কথা, কিন্তু তা হচ্ছে না। তিনি বলেন, এর প্রধান কারণ হচ্ছে বাজার সংশ্লিষ্ট আইন-কানুনে বিনিয়োগকারীদের অনাস্থা ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নিস্ক্রিয়তা।

বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাদের বাজারের যে শক্তি, তাতে এ বাজারে দৈনিক এক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকার লেনদেন প্রত্যাশিত। কিন্তু সেটি হচ্ছে না। কারণ, বাজারে বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ থাকলেও লেনদেন বিমুখ। একদিকে আস্থার সংকটের কারণে নতুন বিনিয়োগকারীরা বাজারে আসছেন না। অন্যদিকে, পুরোনো বিনিয়োগকারীদের বড় একটি অংশের বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব ঋণভারে জর্জরিত। ফলে এসব হিসাবে কোনো লেনদেন হচ্ছে না।

কেন আস্থার সংকট কাটছে না জানতে চাইলে ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ২০১০ সালের চেয়ে এখনকার বাজারে অস্থিরতা অনেকাংশে কমেছে। তবে এখনো অনেক সমস্যা রয়ে গেছে। কারসাজির ভয় যেমন আছে, তেমনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সরকারের মধ্যকার সমন্বয়হীনতা সমস্যাও পুরোপুরি দূর হয়নি।