দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান মুনাফায় বড় হোঁচট খেয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির পুঁজিবাজারের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরতার কারণে সংকটে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানটির তিনটি সাবসিডিয়ারি রয়েছে, যাদের আয়-ব্যয়ের ওপর মূল কোম্পানির মুনাফা নির্ভর করে। এগুলোর আয় কমে যাওয়ায় ২০১৮ সালে মূল কোম্পানির নিট মুনাফা কমেছে ৭৭ শতাংশ। সাবসিডিয়ারি ছাড়াও মূল কোম্পানিকেও ২০১৮ সালে নানামুখী চ্যালেঞ্জে পড়তে হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে আমানত সংগ্রহ ও ঋণ বিতরণ আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে।

তিন সাবসিডিয়ারির মধ্যে ২০১৮ সালে লংকাবাংলা ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ৫১ কোটি টাকা লোকসান করেছে। অপর সাবসিডিয়ারি হাউস লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ পুঁজিবাজারে শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউস। গত বছর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দৈনিক গড় লেনদেন কমে যাওয়ায় এর কমিশন ও ব্রোকারেজ আয় কমেছে ৩৮ শতাংশ।
আরেক সাবসিডিয়ারি লংকাবাংলা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লোকসান করেছে ৪ কোটি টাকার বেশি।

মূলত পুঁজিবাজারে লেনদেন ও বিনিয়োগ মূল্য কমে যাওয়ায় সাবসিডিয়ারিগুলোর আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ২০১৮ সালে ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ১৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এ সময় ডিএসইতে গড় লেনদেন ৩৮ শতাংশ কমে। লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের ২০১৮ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ব্রোকারেজ আয় কমে যাওয়া, মন্দঋণ ও বিনিয়োগ করা শেয়ারের মূল্য কমে যাওয়ায় ২০১৭ সালের চেয়ে ৭৭ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৯৭ কোটি টাকা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে। অন্য সিকিউরিটিজ থেকে মূলধনি মুনাফা ও লভ্যাংশ আয় কমেছে প্রায় ৫৩ শতাংশ।

এ বিষয়ে লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খাজা শাহরিয়ার বলেন, ‘তিনটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানির কারণে পুঁজিবাজারের ওপর আমরা অনেকটা নির্ভরশীল। ধীরে ধীরে পুঁজিবাজারের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনছি। আমরা ব্যবসা বহুমুখীকরণের অংশ হিসেবে এসএমইতে মনোযোগী হচ্ছি। আগামীতে আমাদের কোর ব্যবসা হবে এসএমই।’

তিনি বলেন, সম্পদ ও দায়ের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের অবস্থান ‘মোটামুটি ভালো’ হলেও পুঁজিবাজারে খারাপ হয়েছে। আগের বছর মুনাফার বড় অংশই আসে ব্রোকারেজ কমিশন ও পুঁজিবাজার বিনিয়োগ থেকে। কিন্তু ২০১৮ সালে এ খাত থেকে আশানুরূপ ব্যবসা হয়নি। দুটি সাবসিডিয়ারির লোকসান নিট মুনাফায় বেশি প্রভাব ফেলেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের লোকসান মেটাতে গিয়ে মুনাফা কমে গেছে।

এদিকে ২০১৮ সালে পুঁজিবাজার থেকে আয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি মূল কোম্পানির ব্যবসাও ভালো যায়নি। এ সময় লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের আমানত সংগ্রহ যেমন কমেছে, তেমনি কমেছে ঋণ বিতরণের পরিমাণও। ২০১৭ সালে লংকাবাংলা ফাইন্যান্স ১ হাজার ৯২০ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করে, যা আগের বছরের চেয়ে ৩৮ শতাংশ বেশি।

কিন্তু ২০১৮ সালে উল্টো ৬২ কোটি টাকা আমানত প্রত্যাহার হয়। আমানত সংগ্রহ করতে না পারায় ঋণ বিতরণও আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটির ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ২১৩ কোটি টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ৮৬ শতাংশ কম। ২০১৭ সালে লংকাবাংলা ফাইন্যান্স বিভিন্ন খাতে মোট ১ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করে।

খাজা শাহরিয়ার বলেন, ‘তারল্য সংকট পুরো আর্থিক খাতেই ছিল। এ কারণে আমাদেরও আমানত সংগ্রহ কমেছে। যেহেতু পর্যাপ্ত আমানত সংগ্রহ করতে পারিনি, তাই ঋণ বিতরণের পরিমাণও কমেছে। তবে আমরা এখন বিকল্প অর্থায়নের উৎস থেকে আমানত সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছি। এরই মধ্যে একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিও হয়েছে।’

ঋণ বিতরণ কমলেও ২০১৮ সালে সুদ বাবদ আয় বেড়েছে। নিট সুদ আয় হয়েছে ২৪৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, যা আগের বছর ছিল ২২৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা। তবে বিনিয়োগ, কমিশন, ব্রোকারেজ ও অন্যান্য আয় কমে যাওয়ায় কোম্পানির পরিচালন মুনাফা গত বছর ১৩ শতাংশ কমেছে। এ সময় পরিচালন মুনাফা হয় ৪৪৫ কোটি টাকা। মন্দঋণ ও বিনিয়োগ করা শেয়ারের মূল্য কমে যাওয়ায় ২০১৮ সালে ৯৭ কোটি টাকা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়েছে। এতে প্রশাসনিক খরচ বাদ দেওয়ার পর কোম্পানির কর-পূর্ববর্তী মুনাফা দাঁড়ায় ৭০ কোটি ৯০ লাখ টাকায়, যা আগের বছর ছিল ২২৬ কোটি টাকা।

আর কর দেওয়ার পর নিট মুনাফা দাঁড়ায় ৪৪ কোটি টাকা, যা ২০১৭ সালে ছিল ১৯২ কোটি টাকা। ধারাবাহিকতা ধরে প্রতিষ্ঠানটি এবার পুঞ্জীভূত মুনাফা থেকে লভ্যাংশ দিয়েছে। সুদ আয়ের বাইরে লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের আয়ের বড় উৎস হচ্ছে পুঁজিবাজার। তবে ২০১৮ সালে পুঁজিবাজারে মন্দার কারণে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন সিকিউরিটিজের লেনদেন থেকে প্রাপ্ত মূলধনি মুনাফা, লভ্যাংশ আয় এবং সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের কমিশন ও ব্রোকারেজ আয় কমে গেছে প্রতিষ্ঠানটির।