দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সুদহার বৃদ্ধি ও তারল্য সংকটের মধ্যে পড়েছে পুঁজিবাজার। এতে ক্রেতা কমে যাওয়ায় গতকালও দিনভর সূচকের উঠানামার মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। চলতি বছর বেশিরভাগ শেয়ারের দর কমে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে। পুঁজিবাজারে তৈরি হচ্ছে অস্থিরতা, যা বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত করে তুলছে। বর্তমান বাজারের এ পরিস্থিতিতে পুঁজি নিয়ে দু:চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। তারা একটি স্থিতিশীল বাজারের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার দৃষ্টি আর্কষন করছেন।

বাজার বিশ্লেষনে দেখা যায়, ২০১৮ সালে মন্দার কারণে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচকটি ১৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ পয়েন্ট হারায়। পরবর্তী সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর চলতি বছরের প্রথম ১৮ কার্যদিবসে এ সূচকটির প্রায় সাড়ে ১০ শতাংশ পুনরুদ্ধার হয়। তবে এরপর থেকেই পুঁজিবাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। মুনাফা তুলে নেওয়ার পাশাপাশি সুদহার বৃদ্ধি ও আর্থিক খাতে তারল্য সংকটের কারণে অধিকাংশ শেয়ারের দর কমে যায়। চলতি বছর ডিএসইতে কেনাবেচা হওয়া ৩৫২টি সিকিউরিটিজের মধ্যে ২০৭টি দর হারায়। ফলে ডিএসইএক্স ৫৯৫০ পয়েন্ট থেকে ৫৬০৪ পয়েন্টে নেমে আসে। লেনদেনের পরিমাণ নেমে হাজার কোটি টাকা থেকে ৪০০ কোটি টাকায় নেমে আসে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পুঁজিবাজারে যে অস্থিরতা চলছে, এর নেপথ্য কারণ হচ্ছে তারল্য সংকট। ব্যাংক ব্যবস্থায় সুদহার বেড়ে যাওয়ায় ঝুঁকি এড়াতে অনেকেই পুঁজিবাজার থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে সঞ্চয়পত্র কিংবা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ করছেন। এছাড়াও বেশ কিছু ব্যাংক তারল্য সংকটে রয়েছে। অগ্রিম আমানত অনুপাত (এডিআর) সমন্বয়ের সময়সীমা বাড়লেও ব্যাংকগুলো চাপের মধ্যে রয়েছে। যার প্রভাব পড়ছে পুঁজিবাজারে। এর বাইরে প্লেসমেন্ট শেয়ার ও নতুন আইপিওর কারণেও পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাকিল রিজভী দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, নতুন বছরের শুরুতে যে উল্লম্ফন হয়েছে, তা স্বাভাবিক ছিল না। সে সময় মাত্র ১৮ কার্যদিবসে ডিএসইর সূচক বাড়ে সাড়ে ১০ পয়েন্ট। এতে অনেকেই মূলধনি মুনাফা তুলে নিয়েছেন। এর একটি প্রভাব রয়েছে। এর বাইরে প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যু একটি বড় কারণ। এর মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য পরিমাণের অর্থ বাজার থেকে বাইরে চলে যাচ্ছে। এছাড়া কোম্পানিগুলোর বোনাস লভ্যাংশ দেওয়ার কারণে শেয়ার সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। ফলে কোম্পানিগুলোর শেয়ারপ্রতি আয় কমছে। যে পরিমাণে শেয়ার বাড়ছে, আনুপাতিক হারে বিনিয়োগকারী বাড়ছে না। এসবই বাজারে সংকট তৈরি করছে।

তিনি আরো বলেন, নতুন বছরের শুরুতে কিছু বিনিয়োগকারী যোগ হয়েছিল। এ সময়ে আইসিবিও প্রায় হাজার কোটি টাকার তহবিল পায়। চীনাদের কাছে শেয়ার বিক্রির অর্থও বাজারে আসে।