দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টা এস কে সুর চৌধুরী বলেছেন, একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পুঁজিবাজারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই মুহূর্তে আর্থিক খাতের বেশির ভাগ অর্থ সরবরাহ করে ব্যাংক খাত। ব্যাংকনির্ভরতা কমাতে পুঁজিবাজার শক্তিশালী করার বিকল্প নেই।

আজ শুক্রবার রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে অর্থসূচক আয়োজিত ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপোর এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

এস কে সুর বলেন, মুদ্রাবাজার ও পুঁজিবাজার একে-অপরের পরিপূরক। একসময় ভুল ভাবা হতো- পূঁজিবাজারের সঙ্গে মুদ্রাবাজারের কোনো সম্পর্ক নেই। পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করতে সরকার বা অন্য কোনো পক্ষ থেকে সুপারিশ না আসলেও আমরা কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। যার মাধ্যমে ব্যাংক থেকে পুঁজিবাজারের দিকে প্রবাহিত হবে। আশা করি পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন হলে তার ফল পাবে জনগণ।

আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো স্বল্পমেয়াদি আমানত সংগ্রহ করে দীর্ঘমেয়াদি খাতে বিনিয়োগ করা। এই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। এই কারণেই মাঝে মাঝে তারল্য সংকট দেখা দেয়। বলেন এস কে সুর।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে মূলধনের ঘাটতি রয়েছে, তবে এটি অচিরেই ঠিক হয়ে যাবে বলে জানিয়ে বাংলাদেশের ব্যাংকের উপদেষ্টা বলেন, দীর্ঘমেয়াদে তহবিল সংগ্রহে পুঁজিবাজারকে উন্নত করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউসিবি ক্যাপিটাল লিমিটেডের রিসার্চ টিমের রাজীব।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে তারল্য সমস্যা মাঝেমধ্যেই দেখা দেয়। ডিপোজিট কমে যাচ্ছে, অ্যাডভান্স বেড়ে যাচ্ছে। এটি ঠিক হয়ে যাবে। তবে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংক নির্ভরতা কমাতে হবে। দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ সংগ্রহের জন্য পুঁজিবাজার উন্নয়নের পাশাপাশি বন্ড মার্কেটকে উন্নত ও করপোরেট বন্ড ইস্যুর ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।

বন্ড মার্কেট উন্নয়নে সরকার একটি কমিটি করেছে জানিয়ে রাজীব বলেন, এর কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। বন্ড মার্কেটে কিছু বন্ড ইস্যু করার ক্ষেত্রে বিশেষ করে করপোরেট বন্ড ইস্যু করার ক্ষেত্রে একটি বড় অন্তরায় এনবিআরের করের চাপ। এটি নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, তিনি এ বিষয়ে একমত হয়েছেন।

সভাপতির বক্তব্যে ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত যে পরিমাণে অবদান রাখছে, সেই পরিমাণ স্বীকৃতি আমরা তাদের দেই না, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। ব্যাংকিং খাত নিয়ে আমরা যা ভাবছি, যা বলছি, তার চেয়ে অনেক বেশি অবদান রাখছে।’

সাবেক এ গভর্নর বলেন, ‘অনেকে বলছেন দেশে ব্যাংকের সংখ্যা বেশি। এই কথাটা অর্থহীন। বাংলাদেশে ব্যাংকের শাখা বেশি কি না সেটি দেখেন। বাংলাদেশের একটি ব্যাংক যে পরিমাণ লোককে সেবা দেয় সেটি ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার চেয়ে অনেক কম। তাই ব্যাংকের সংখ্যা দিয়ে কিছু হয় না।’

পৃথিবীর সব দেশে বিনিয়োগযোগ্য তহবিল আসে মুদ্রা তহবিল থেকে, বিমা খাত থেকে। ব্যাংক খাত থেকে দীর্ঘমেয়াদি প্রজেক্টে বিনিয়োগ বাংলাদেশ ছাড়া কোথাও নেই। তবে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত আমাদের দেশেও এই ধারা ছিল না। ৯২-৯৩ সালে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার পরার্মশে সরকার একটি বড় ধরনের আইন আনলো। সেটি হলো বাণিজ্যিক ব্যাংককে বাধ্য করা হলো লংটার্ম বিনিয়োগে।

তিনি বন্ড মার্কেট বড় করা, বিমা ফান্ড অলস পড়ে না থেকে বিনিয়োগযোগ্য তহবিলের সঙ্গে নিয়ে আসার তাগিদ দেন। সঞ্চয়পত্রের বিষয়ে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করে সাবেক এ গভর্নর বলেন, এখানে যে অপচয় হয় সেটিও বন্ধ করতে হবে।