দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজার উন্নয়নে এতো কাজ করার পরও একটি গতিশীল বাজার তৈরি করতে পারেনি নীতি নির্ধারণী মহল। বারংবার হোঁচট খাওয়ার পর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও পুঁজিবাজারকে অদৃশ্য চক্রের কাছে পরাজিত হতে হচ্ছে। সাম্প্রতিক বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা এতোটাই চির ধরেছে যে কোম্পানির শেয়ার দর একটি কম দামি চকলেটের সমমূল্যে চলে এসেছে।

একটি লিস্টেড কোম্পানির শেয়ার দর ৫ টাকা কিংবা তারও নিচে চলে আসবে সেই চিত্র দেখার ইচ্ছে কেউ করে না। প্রতিনিয়ত পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। কিছু জাঙ্ক শেয়ার ছাড়া ভালো মৌলভিত্তি কোম্পানির শেয়ার দর তলানিতে এসে ঠেকেছে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৮ কোম্পানির শেয়ারদর আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। যদিও এসব কোম্পানির শেয়ারদর অনেক আগে থেকেই অভিহিত মূল্যের নিচে নেমে গেছে। তবে সম্প্রতি এসব কোম্পানির শেয়ারদর নেমে গেছে পাঁচ টাকার নিচে, যা বাজারের জন্য অশনিসংকেত বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।

তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে বর্তমানে পাঁচ টাকার কমে লেনদেন হচ্ছে এমন ৮ কোম্পানি হলো- সিএনএ টেক্সটাইল, ঢাকা ডাইং, ফ্যামিলি টেক্স, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, কেয়া কসমেটিকস, প্রিমিয়ার লিজিং, তুংহাই নিটিং ও ইউনাইটেড এয়ার লিমিটেড।

কোম্পানিগুলোর মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে কম দরে বিক্রি হচ্ছে ইউনাইটেড এয়ারের শেয়ার। গত বৃহস্পতিবার এ প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২ টাকা ৮০ পয়সায়। এর পরের অবস্থানে রয়েছে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের শেয়ার। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩ টাকা ৩০ পয়সায়।

তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে তুংহাই নিটিংয়ের শেয়ার। কোম্পানিটির সর্বশেষ শেয়ারদর দাঁড়িয়েছে ৩ টাকা ৯০ পয়সা। চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে ব্যাংক খাতের ইসলামিক ব্যাংকের শেয়ার। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হচ্ছে ৪ টাকায়।

এ ছাড়া ফ্যামিলি টেক্সের শেয়ার ৪ টাকা ১০ পয়সায়, ঢাকা ডাইংয়ের শেয়ার ৪ টাকা ৪০ পয়সায়, প্রিমিয়ার লিজিংয়ের (পিএলএফএসএল) শেয়ার ৪ টাকা ৬০ পয়সায় এবং কেয়া কসমিটিকসের শেয়ার ৪ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেন, কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর অস্বাভাবিক হারে কমে যাওয়ার প্রধান কারণ কোম্পানিগুলোর বেগতিক আর্থিক অবস্থা। প্রতিষ্ঠানগুলো যখন পুঁজিবাজারে আসে, সে তুলনায় এখন আর্থিক অবস্থা করুণ। প্রতিষ্ঠানগুলো শেয়ারহোল্ডারদের কোনো রিটার্ন দিতে পারছে না। অন্যদিকে ভারি হচ্ছে লোকসানের বোঝা। যে কারণে এসব কোম্পানির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ নেই, যার জেরে এসব কোম্পানির শেয়ারদর কমে গেছে।

উল্লেখিত কোম্পানির বিদ্যমান বিনিয়োগকারীরা দিনের পর লোকসান বয়ে বেড়াচ্ছে। অন্যদিকে কোম্পানির আর্থিক গ্রোথ ভালো না থাকায় নতুন বিনিয়োগকারীরাও এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগে আস্থা পাচ্ছেন না। তারওপরে সার্বিক বাজার মন্দায় এগুলোর শেয়ার দর দিনের পর দিন তলানিতে এসে পড়ছে। তবে বাজার পরিস্থিতি ইতিবাচক থাকলে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেতেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কোম্পানিগুলোর এ অবস্থার জন্য দায়ী মূলত বিএসইসি। তারা যদি কোম্পানি অনুমোদন করার ক্ষেত্রে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে, তাহলে কোম্পানিগুলোর এমন অবস্থা হয় না। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও অনেক উপকৃত হন। তিনি বলেন, বিএসইসি যদি দ্রুত বাইব্যাক আইন প্রণয়ন করে, তাহলে প্রতিষ্ঠানগুলোর টনক নড়বে। আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তারা পুঁজিবাজারে আসবে না।