দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বিতর্কিত বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আসা এস্কয়্যার নিটের শেয়ার দর নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এর আগে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে বাজারে আসা কোম্পানিগুলোর শেয়ার বাজারে আসার পরই উচ্চ দরে লেনদেন শুরু হয়। এর কিছুদিন পরই ওইসব শেয়ার দরে ধস নামে। তাই এসকোয়্যার নিট কম্পোজিটের ক্ষেত্রেও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ছিল না বলেই চলে। তাই অতিরিক্ত দরে এ শেয়ারটি না কেনার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

লেনদেনের প্রথম দিনেই কাট-অফ প্রাইসের কাছে অবস্থান করছে এস্কয়্যার নিট কম্পোজিটের শেয়ার দর। যদিও এ পদ্ধতিতে শেয়ারবাজারে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে অর্ধেকের বেশি এরইমধ্যে কাট-অফ প্রাইসের নিচে নেমে এসেছে। তবে সেগুলো লেনদেনের কয়েক মাস পরে এসেছে।

তালিকাভুক্তির পর পুঁজিবাজারে প্রথম কর্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে মাত্র ৭০ পয়সা। এস্কয়ার নিটের আগে দেশের পুঁজিবাজারে প্রিমিয়াম নিয়ে তালিকাভুক্ত হওয়া কোনো কোম্পানির শেয়ার দাম লেনদেনের প্রথমদিন এতো কম বাড়েনি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

মঙ্গলবার ৪৫ টাকা কাট-অফ প্রাইসের এস্কয়্যার নিটের শেয়ারটি ৪৭.৩০ টাকা দরে লেনদেন শুরু হয়। তবে সর্বশেষ ৪৫.৭০ টাকায় লেনদেন হয়েছে এবং ক্লোজিং প্রাইস দাড়িঁয়েছে ৪৫.৯০ টাকায়। অর্থাৎ লেনদেনের প্রথমদিনে শেয়ারটি ১ টাকাও দর বাড়েনি। শেয়ারবাজারে নিকট ভবিষ্যতে এমন চিত্র দেখা যায়নি।

প্রথম দিন কোম্পানিটির ৬৭ লাখ ৮৩ হাজার ৮৬৫টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা ৩২ কোটি ৮০ লাখ ৩৪ হাজার টাকায় লেনদেন হয়েছে। এসব শেয়ার হাত বদল হয়েছে ৩০ হাজার ৫৫৬ বার।

ক্লোজিং প্রাইস হিসাবে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের ৪৫ টাকা কাট-অফ প্রাইসের শেয়ারটিতে ০.৯০ টাকা বা ২ শতাংশ মুনাফা রয়েছে। আর সাধারন বিনিয়োগকারীরা শেয়ারটিতে ৪০ টাকা বিনিয়োগে ৫.৯০ টাকা বা ১৫ শতাংশ মুনাফা রয়েছে।

বুক বিল্ডিংয়ে কোম্পানির কাট-অফ প্রাইস অতিমূল্যায়িত হচ্ছে বলে অনেক দিন ধরেই পদ্ধতিটি বিতর্কিত। যা এই পদ্ধতিতে শেয়ারবাজারে আসা একমি ল্যাবরেটরিজ, আমান কটন ফাইবার্স ও বসুন্ধরা পেপারের শেয়ার দর কাট-অফ প্রাইসের নিচে নামার মাধ্যমে আরও জোড়ালো হয়েছে।

২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৫টি কোম্পানি বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এরমধ্যে একমি ল্যাবরেটরিজ, আমান কটন ফাইবার্স ও বসুন্ধরা পেপারের শেয়ার দর কাট-অফ প্রাইসের নিচে রয়েছে। আর ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন ও আমরা নেটওয়ার্কের শেয়ার দর কাট-অফ প্রাইসের উপরে রয়েছে।

জানা গেছে, ‘এন’ ক্যাটাগরিভুক্ত এস্কয়্যার নিট কম্পোজিটের ডিএসইতে ট্রেডিং কোড : “ESQUIRENIT” এবং কোম্পানি কোড হচ্ছে : ১৭৪৮১। আর সিএসইতে স্ক্রিপ্ট আইডি হচ্ছে : ১২০৬৯ এবং স্ক্রিপ্ট কোর্ড হচ্ছে : “ESQUIRENIT” এর আগে গত ৭ মার্চ শেয়ারহোল্ডারদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবে আইপিওতে বরাদ্দ পাওয়া শেয়ার জমা হয়েছে।

কোম্পানিটির আইপিওতে আবেদনকারীদের মধ্যে শেয়ার বরাদ্দ দেয়ার জন্য গত ৭ ফেব্রুয়ারি আইপিও লটারির ড্র অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে গত ৬ জানুয়ারি থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত কোম্পানিটির আইপিওতে আবেদন গ্রহণ করা হয়।

এরও আগে গত ২৭ নভেম্বর বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ৩ কোটি ৪৮ লাখ ৯৫ হাজার ৮৩৩ টি সাধারণ শেয়ার প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ইস্যু করার অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

কোম্পানির ১ কোটি ৪ লাখ ৬২ হাজার ৫০১ টি সাধারণ শেয়ার ৪০ টাকা মূল্যে (প্রান্ত সীমা মূল্য থেকে ১০ শতাংশ বাট্টায়) সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নিকট বিক্রি করা হয়। এছাড়া যোগ্য বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ৪৫ টাকা করে মোট ২ কোটি ৮ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩২টি শেয়ার ইস্যু করা হয়। যাতে মোট ৩ কোটি ৪৮ লাখ ৯৫ হাজার ৮৩৩টি শেয়ার ইস্যু করা হয়।

গত ৯ জুলাই সোমবার থেকে এই নিলাম শুরু হয়ে চলে ১২ জুলাই বিকেল ৫টা পর্যন্ত। নিলামে কোম্পানিটির কাট-অফ প্রাইস নির্ধারণ করা হয় ৪৫ টাকায়।

এস্কয়্যার নিট কম্পোজিট লিমিটেড আইপিওর মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে ১৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করে ব্যবসা সম্প্রসারণ, ভবন নিমার্ণ, ডাইং ও ওয়াশিং প্লান্টের জন্য যন্ত্রপাতি কিনবে।

শেয়ারবাজার থেকে সংগৃহীত অর্থের মধ্যে ভবন নির্মাণে ব্যয় করা হবে ১০০ কোটি ৪২ লাখ টাকা। নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এবং ময়মনসিংহের ভালুকায় এ ভবন নির্মিত হবে। কোম্পানিটির কাঁচপুর প্রকল্পের জন্য ডাইং মেশিনারিজ কিনতে খরচ হবে ২১ কোটি ২৩ লাখ ১৯ হাজার টাকা। একই সঙ্গে কাঁচপুরে কেনা হবে ওয়াশিং প্লান মেশিনারিজ। যার জন্য ব্যয় হবে ২১ কোটি ৯০ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। আর আইপিও বাবদ খরচ করা হবে ৬ কোটি ৪৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা

৩০ জুন, ২০১৭ সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় বা ইপিএস হয়েছে ২ টাকা ৫২ পয়সা। আলোচ্য বছরে কোম্পানির সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন পরবর্তী শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভি) ছিল ৪৫ টাকা ৮৩ পয়সা। আর পুনর্মূল্যায়ন ছাড়া এনএভি ২৫ টাকা ৯৬ পয়সা।

কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে প্রাইম ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড। আর রেজিস্ট্রার টু দ্য ইস্যুর দায়িত্বে রয়েছে আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড।