দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: রেমিট্যান্স আহরণে এবারও বিশ্বের শীর্ষ দশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে রেমিট্যান্স আহরণে শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৯ নম্বরে। প্রায় ৭৯ বিলিয়ন ডলার আয় করে বিশ্বে এক নম্বরে রয়েছে পাশের দেশ ভারত। আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে রেমিট্যান্স আহরণে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়।

২১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আয় করে দক্ষিণ এশিয়ার তালিকায় দ্বিতীয় নম্বরে রয়েছে পাকিস্তান। গত সোমবার বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত অভিবাসন ও রেমিট্যান্স বিষয়ক সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

সংস্থাটির তথ্য মতে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশ থেকে ১৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আয় করেছে। আগের বছর ১৩ বিলিয়ন ডলার আয় করেও একই অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। রেমিট্যান্স আয়ের পরিমাণ বিবেচনায় বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় তিন নম্বরে থাকলেও জিডিপির অনুপাতে রেমিট্যান্স আহরণে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। জিডিপির ২৮ শতাংশ রেমিটেন্স আহরণ করে নেপালের অবস্থান শীর্ষে রয়েছে। পরের অবস্থানে রয়েছে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী প্রবাসীদের আয়ের পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৮ সালে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স প্রবাহ হয়েছে ৬৮৯ বিলিয়ন ডলার। এটি ওই বছর সারা বিশ্বে হওয়া বিদেশি বিনিয়োগের চেয়েও বেশি। ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে ৯ শতাংশের বেশি। ২০১৭ সালে বিশ্বব্যাপী রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল ৬৩৩ বিলিয়ন ডলার।

এই বিপুল রেমিট্যান্স আয়ের অর্ধেকের বেশি বা ৩৩৫ বিলিয়ন ডলার গেছে ১০ দেশে। তার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। শীর্ষ ১০ রেমিট্যান্স গ্রহণকারী দেশের তালিকায় থাকা অন্য দেশগুলো হলো: চীন, মেক্সিকো, ফিলিপাইন, মিসর, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম ও ইউক্রেন। রেমিট্যান্স প্রবাহের বড় অংশই গেছে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। এ ধরনের দেশগুলোতে ২০১৮ সালে রেমিট্যান্স গেছে ৫২৯ বিলিয়ন ডলার।

যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ প্রবৃদ্ধি, মন্দা কাটিয়ে রাশিয়ার অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানো ও জ্বালানি তেলের দর বাড়ায় মধ্যপ্রাচ্যের আর্থিক সংকট কাটতে শুরু করায় ২০১৮ সালে বিশ্বব্যাপী রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। চলতি ২০১৯ সালেও রেমিট্যান্সের এ অবস্থা বজায় থাকবে উল্লেখ করে সংস্থাটি বলেছে, চলতি বছর নি¤œ ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ৫৫০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স যাবে।

বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, গত বছর সবচেয়ে বেশি ৭৮ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে ভারত। রেমিট্যান্স আহরণে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চীন। দেশটিতে ৬৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। ৩৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আহরণ করে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পাশের দেশ মেক্সিকো। ৩৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আহরণ করে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে ফিলিপাইন।

পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে মিসর। নীল নদের এ দেশ ২৮ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে। আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া ২৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার আহরণ করে রয়েছে ষষ্ঠ অবস্থানে। সপ্তম অবস্থানে রয়েছে ব্যাপক রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় ভুগতে থাকা পাকিস্তান। দেশটি গত বছর ২১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আহরণ করেছে।

অষ্টম স্থানে রয়েছে বৈশ্বিক রপ্তানি বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগী ভিয়েতনাম। দেশটি গত বছর ১৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে। আর ১৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আহরণ করে নবম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ১৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে দশম অবস্থানে রয়েছে ইউক্রেন।

জিডিপির অনুপাতে রেমিট্যান্স বাড়ানো জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) লক্ষ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। পাশাপাশি রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচ কমানো এবং প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়োগ প্রক্রিয়ার খরচ কমানোও এসডিজির লক্ষ্য। সংস্থাটি বলেছে, ২০০ ডলার পাঠাতে বর্তমানে গড়ে ৭ শতাংশ হারে প্রবাসীদের খরচ করতে হয়।

এসডিজিতে পাঠানোর এই খরচ সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ ধরা হয়েছে। তবে নি¤œ ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়াতে রেমিট্যান্স পাঠাতে খরচ সবচেয়ে কম প্রায় ৫ শতাংশ। আর সাব সাহারা দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি ৯ দশমিক ৩ শতাংশ।