ফাতিমা জাহান: ১৬ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ। আমরা প্রায় ৮ কোটি বা ৫ কোটি মানুষ বিভিন্ন স্যোশাল মিডিয়ার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িত। এর মধ্যে ফেসবুক মিডিয়ার ব্যবহারকারীর সংখ্যাই বেশি। যেখানে উচ্চশিক্ষিত থেকে শুরু করে মোটামুটি ভাবে সবাই জড়িত। আজ আমার এই কথাগুলো বলার কারন হলো আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের অপরাধ প্রবনতা বেড়েই চলছে। ঘরে বাইরে রাস্তাঘাটে মার্কেটে এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেয়েরা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একটি জাতির গঠনে মুল কেন্দ্রবিন্দু। আর শিক্ষক হলেন চালিকাশক্তি।

একজন শিক্ষকের আর্দশ মানুষ মেনে চলেন তার জীবনের শেষ জীবন পর্যন্ত। বলতে চাচ্ছি ফেনীর সোনাগাজীর নুসরাত জাহান রাফির কথা। কি বলবো লেখার কোন ভাষা খুঁেজ পাচ্ছি না। বাকরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছি।

একজন শিক্ষক হলেন বাবার সমতুল্য। একজন বাবা যেমন সন্তানকে আগলে রাখেন, তেমনি শিক্ষক তার কর্মে, আদর্শে ও মননশীলতায় ছাত্র ছাত্রীদের আগলে রাখবেন এটাই আমাদের শিক্ষা। কিন্তু সেই শিক্ষকের লোলুপদৃষ্টি যখন একজন কিশোরী বয়সী ছাত্রীর উপর পড়ে, তখন কোথায় থাকে আমাদের মানবতা, কোথায় থাকে আমাদের আদর্শ, কোথায় থাকে একজন শিক্ষকের মর্যাদা।

একজন মাদ্রাসা শিক্ষক হলেন দ্বীন প্রচারের ধারক ও বাহক। তার কাছে মাদ্রাসা শিক্ষার মুলমন্ত্র হলো ইসলামকে জানা ও বুঝা। ইসলামী জ্ঞান ও আদর্শকে নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া। তাদের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। এটাই মাদ্রাসা শিক্ষার বিশেষত্ব। আজ কেন সেই শিক্ষক একজন ধর্ষক, একজন নর পিচাশের ভুমিকা পালন করবে।

তার লোলুপ দৃষ্টি কেন সন্তান সমতুল্য কোমল মতি ছাত্রীদের উপর পড়বে। কেন তারা দিনের পর দিন যৌন নিপীড়নের শিকার হবে। কোন এ অপমান সহ্য করেও লোকচুক্ষর অন্তরালে বাঁচতে হবে, সমাজের কলঙ্ক লাগবে বলে তারা মুখ খুলবে না। আর কত এভাবে, আর কত নুসরাত…..!

নুসরাতের গায়ে আগুন দেয়া হতো না, বিভৎস ক্ষত নিয়ে পাঁচটা দিন অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাতে হতো না তাকে, মরে যেতে হতো না এই অসময়ে, যদি সে মুখটা বন্ধ রাখতো, কিংবা মামলাটা তুলে নিতো। জেল থেকে বেরিয়ে ওই লম্পট অধ্যক্ষ হয়তো নতুন শিকারে নামতো, কিন্ত নুসরাত তো বেঁচে থাকতো!

দোষ তো নুসরাতের, সে কেন ‘হুজুর’ পদবীধারী ওই অমানুষটার সাথে বেয়াদবি করলো? সিরাজ উদ দৌলা তো আগেও অনেকের সাথে লম্পট আচরণ করেছে, তাদের কেউ তো মরেনি, নুসরাত কেন মরলো? নিশ্চয়ই দোষ নুসরাতের!

টাঙ্গাইলের রূপার কথা মনে আছে? চলন্ত বাসের ভেতরে ধর্ষণ করা হয়েছিল মেয়েটাকে। তারপর ঘাড় মটকে হত্যা করে লাশ ফেলে পুঁতে রাখা হয়েছিল শালবনের রাস্তার পাশে। ধরা পড়ার পরে জবানবন্দীতে বাসের ড্রাইভার-হেল্পার জানিয়েছিল, লোকালয় দেখে বাসের জানালা দিয়ে মাথা বের করে সাহায্যের জন্যে চিৎকার করেছিল রূপা,

আর সেকারণেই ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে খুন করেছিল অপরাধীরা। কে জানে, রূপা সেদিন চিৎকার না করে ধর্ষণটাকে মেনে নিলে হয়তো প্রাণে বেঁচে যেতেও পারতো! ধর্ষণ করাটা তো দোষ না, চিৎকার করাটাই দোষ! রূপার মৃত্যুর জন্যে আসলে সে নিজেই দায়ী ছিল!

ফাতিমা জাহান, বরিশাল