দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ১০৭ সদস্য কথা রাখেননি। গত বছর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, চীনা কনসোর্টিয়ামের কাছে বিক্রি করা ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ারের অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবেন। আর তার জন্য সরকারকে দিতে হবে কর ছাড়। সে অনুযায়ী সরকার ১০ শতাংশ কর ছাড় দিলেও কথা রাখেননি তারা। পুঁজিবাজারের ক্রান্তিকালে তারা এই টাকা অন্যখাতে বিনিয়োগ করছেন। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে এখন নতুন ফান্ডের বড় সংকট চলছে। এই সংকট থেকে উত্তোরণের জন্য অন্তত ৫-১০ হাজার কোটি টাকার ফান্ড প্রয়োজন। কিন্তু সেখানে খোদ ডিএসইর সদস্যরাই শেয়ার বিক্রি করে পুঁজিবাজার থেকে চলে যাচ্ছেন। ফলে পুঁজিবাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

ডিএসই সূত্র মতে, ডিএসইর শেয়ারের মালিক ২৫০ জন শেয়ারহোল্ডার। অর্থাৎ ২৫০ জন সদস্য। এর মধ্যে গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল পর‌্যন্ত ১৪৩ জন সদস্য পুঁজিবাজারে টাকা বিনিয়োগ করবে, এই শর্তে ১০ শতাংশ কর ছাড়ে ডিএসই থেকে টাকা ৫৩৭ কোটি উত্তোলন করেছেন।

তার মধ্যে ৫০-৬০ জন তাদের পুরো টাকাই বাজারে বিনিয়োগ করেছেন। বাকিরা বিনিয়োগ শর্ত মেনে বিনিয়োগ করছেন। কিন্তু ৯০ জন সদস্য পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবেন না বলে ডিএসই থেকে টাকা উত্তোলন করেছেন। তাদের টাকার পরিমাণ সোয়া ৪শ’ কোটি টাকা।

অথচ বছরের প্রথম দিকে ডিএসই ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলেছিলেন, কর ছাড় পেলে চীনা কনসোর্টিয়ামের কাছে শেয়ার বিক্রির ৯৪৭ কোটি টাকাই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবেন। কিন্তু পুঁজিবাজারের এই ক্রান্তিকালে তারা অন্যত্র বিনিয়োগ করছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, পুঁজিবাজারের স্বার্থে গত বছর সবাই বলেছিলাম (১৫ শতাংশ) গেইন ট্যাক্স সম্পূর্ণ মওকুফ করলে বাজারে বিনিয়োগ করবো। কিন্তু সরকার তো সম্পূর্ণ কর মওকুফ করেনি। দ্বিতীয়ত, আমরা যারা বিনিয়োগ করেছি, তাদের সবারই টাকা এখন ১৫-২০ শতাংশ লস। তাহলে জেনে বুঝে ক্ষতির জায়গায় কেন বিনিয়োগ করতে আসবে মানুষ?

নাম না প্রকাশের শর্তে ডিএসইর ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তরা বলেন, এখনও পর‌্যন্ত ২৩৩ জন সদস্য চীনা কনসোর্টিয়ামের টাকা তুলে নিয়েছেন। বাকি রয়েছেন ১৭ জন। তাদের নানা জটিলতা রয়েছে। বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে টাকা না দিতে কমিশন নিষেধ করেছে। আর কয়েকজনের পারিবারিক বাধা রয়েছে। তবে ৯০ জন সদস্য চীনা কনসোর্টিয়ামের টাকা তুলে নিয়েছেন এবং তারা অন্য খাতে বিনিয়োগ করেছেন।

উল্লেখ্য, ডিমিউচ্যুয়ালাইজড স্টক এক্সচেঞ্জের কৌশলগত বিনিয়োগাকরী হিসেবে ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয় চীনের সেনজেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ। যা টাকার অংকে শেয়ারের মূল্য সাড়ে ৯শ’ কোটি টাকা। বাজারের চলমান আস্থা ও তারল্য সংকট দূর করে একটি স্থিতিশীল বাজার তৈরির লক্ষ্যে গত বছর এই টাকা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসইর শেয়ারহোল্ডররা।

তার জন্য তারা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে এ টাকার ওপর থাকা ১৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স পুরোপুরি প্রত্যাহারের দাবি করেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের কাছে। তিনি ন্যুনতম তিন বছর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগসহ ছয়টি শর্ত মানলে ১০ শতাংশ কর মওকুফ দেওয়া হবে বলে নীতিমালা করেন দেন।